শনিবার, ২৭ জুন, ২০০৯

রূপনগরের ইতিকথা




পৃথিবীতে হাজার হাজার জনপদ সৃষ্টি হয়েছে কলক্রমে মানুষের ছোয়াতে, মানুষের হাতের স্পর্শ। মানুষ কালক্রমে গড়ে তুলেছে জঙ্গল থেকে আলোক ঝলমলে জীবন্ত নগরী। হয়তো সেখানে ছিলো একদিন অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষহীন গভীর অন্ধকূপ। কিন্তু মানুষের ছোয়াতেই সে অন্ধকারময় অবহেলিত স্থান হয়ে গেছে জাকজমকপূর্ন কোনো এক জীবন্ত নগরী।
কিভাবে নগরীর সৃষ্টি হয়েছে ইতিহাস ঘাটলে তার কোনো কোনোটির হদিস পাওয়া যায় আবার কোনো কোনোটির হদিস আমরা পাইনা। তবে আমরা বিভিন্ন ভাবে গবেষণা করে বলতে পারি যে এই জনপদের অবস্থা এমনটি ছিলো।
আমি আজ আমার বাস্তব অভিজ্ঞতার আলাকে আপনাদেরকে জানাবো, আমার ভবিষ্যত প্রজন্জকে জানানো এমন একটি ছোট্ট জনপদের সূচনা লগ্নের কথা। খিলবো কিভাবে রূপনগর গ্রামটির সৃষ্টি হয়েছিলো এবং এর নামকরণই বা কে বা কারা করলো। জানি একদিন আমার এ লেখা ইতিহাস হয়ে সাক্ষ্য দিবে এ জনপদের লোকজনদের কাছে। আমার বয়স তথন ১৭/১৮ হবে। তথন আমরা বসবাস করতাম ফোর্ডনগর ফকির পাড়ায়, বর্তমানে দারুগালি ও আলম ভাই যে বাড়িটায় আছেন। বাড়িটার উত্তর দিকে খালের মতো ছোট্ট জলাশয়। বর্ষা মৌসুমে জলাশয়টা বিস্তার লাভ করলেও শুকনো মৌসুমে মৃতপ্রায় আকার ধারন করতো।
তবে এ জলাশয়ের পূর্ব দিকের প্রবেশদ্বার সারা বছরই বংশাই নদীর সাথে মিলিত থাকতো কিন্তু কিছুদূর প্রবাহিত হয়ে এর পশ্চিম প্রান্তের মুখটি বন্ধ হয়ে যেতো। শুধু মাঝখানের অংশে সারা বছর কিছু পানি জমে থাকতো। এ অবস্থা অবশ্য বর্তমানেও বিদ্যমান রয়েছে। এই খালটির উত্তর প্রান্তে রয়েছে বিস্তার চারণভুমি। এ চরের পূর্ব দিকে বংশাই নদী। পশ্চিমে বহুদূর পর্যন্ত ধানের আবাদি জমি এবং এর আরো দূরে হয়েছে গ্রামাঞ্চল। এর উত্তরে কাজিয়ারকুন্ড। ঐ গ্রাম বেয়ে বেরিয়ে এসেছে একটি সড়ক যা বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।



এই চরে আমাদের কিছু বর্গা জমি ছিলো। সাভারের ললিতবাবু এই জমির মালিক ছিলেন। বাবাকে তিনি খুব বন্ধুশোলভ জানতেন। ললিতবাবুর কোনো সন্তান ছিলোনা। আমার মনে আছে, উনার বাড়িটাকেই ছোট্ট একখানা চিড়িয়াখানা বানিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি লালন-পালন করতেন তিনি।
আমরা ললিতবাবুর এই জমিটা বহুদিন ধরে চাষাবাদ করে আসছিলাম। এখানে প্রায় ১৩/১৪ পাখি জমি (২৬ শতাংশ সমান এক পাখি) আমরা চাষ করতাম। আজকের রূপনগর গ্রামটি অবস্থিত তার কেন্দ্রস্থলেই এই জমিটা রয়েছে। আমার পরিষ্কার মনে আছে এই চরে তখন বহুদূর বিরান ভুমি ছিলো। নদীর তীর ধরে পলিমাটিতে বোরো ধান চাষ করা হতো। আমরা এই জমিতে মূলত শাকসব্জি চাষ করতাম। এখানে প্রধান ফসল ছিলো- বাঙ্গি, বেগুন, শশা, এছাড়া টমেটো, চাল কুমড়া, খিরাই, পুইশাক, লালশাক, বরবটি, ঝিঙ্গা, পিয়াজ, রসুন ইত্যাদিও চাষাবাদ হতো। এই চরে আমরাই মূলত এ সব ফসল ফলাতাম। তবে সারা বছর এ চরে ফসল ফলতো না। কারন, বর্ষা মৌসুমে এ চরটা সম্পূর্ন তলিয়ে যেতো বন্যার পানিতে। তবে এসব জমিতে তখন ধঞ্চে বোনা থাকতো। মাঝে মধ্যে আমন ধানও থাকতো। শীত মৌসুমে চরে ফসল বুনার ধুম পড়ে যেতো। ১৩/১৪ পাখি জমির অধিকাংশ জুড়েই চিনাল ভাংগির ফসল থাকতো। যখন এসব ফসল পাকতে শুরু করতো তখন ক্ষেতে পাহারার ব্যবস্থা করতে হতো। কারন, আমাদের ফসলের ক্ষেত বরাবর বংশাই এর পূর্ব পাড়েই বেদে পরিবারের বসবাস। যাকে আমরা বেদেপাড়া হিসেবে চিনি। যখন বাংগি পাকা শুরু করতো তথন বেদে ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে নদী সাঁতরিয়ে বাংগি খেতে এই চরে আসতো। খাওয়ার চেয়ে নষ্টই করে ফেলতো বেশি।ওদের উপদ্রপ থেকে রক্ষার জন্য ক্ষেতে পাহারা দিতে আসতে হতো আমাদেরকে। আমাদের বাড়ি থেকে হাকডাক দিতে দিতে অনেক গুলি বাংগি চুরি হয়ে যেতো। আর এ পারে আসতে আসতে ওরা সাঁতরিয়ে ওঠে পড়তো। এভাবে ওদের ধরা খুবই মুশকিল হতো। দুপুর রোদে অনেক সময় একা একা ক্ষেতে পাহারা দিতে আসতে চাইতামনা। কিন্তু দু‌একজন সঙ্গী-সাথী সাথে পেলে তখন আর বারন খাকতো না। ঐ সময়ে আমার একমাত্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু বললে সুহিনই ছিলো (আজ সুহিন প্রয়াত)। তো সুহিনকে সাথে পেলে নাচতে নাচতেই চলে আসতাম।


সাভার বাজার সংলগ্ন বংশী নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত রূপনগর।---- স্যাটেলাইট ভিউ

আমরা অনেক সময় সাথে করে কিছু খাবার পানি এবং ২/১ টা পাত্র নিয়ে আসতাম। কারন, দুপুর রোদে টমেটো বর্ত্তা করে খেতে খুব মজা হতো। দুপুর রোদে শশার মাচার ছায়ায় বসে বসে ক্ষেত পাহারা দিতাম। আজ যেখানে আমাদের জামে মসজিদটি রয়েছে সেখান হতে একটু উত্তর দিকে নদীর পাড় ঘেঁষে ঘন কাঁশবন ছিলো সারি সারি। এই কাঁশবনে বাবুই পাখিদের আস্তানা ছিলো। সারাক্ষন কিচির মিচির শব্দে মাতিয়ে রাখতো জনশূন্য নদীর পাড়টাকে। আমরা ঐ ঘন কাঁশবনে একা কখনো যেতে সাহস পেতামনা। কারন, শুধু যে বাবুই পাখিদের বাসাই ছিলো তাই না, ওখানে ছিলো শেয়াল পন্ডিতের বসত ভিটা। তাছাড়া সাপ পোকেরও ভয় ছিলো।
একটি মজার ঘটানার কথা মনে পড়ে গেলো। সেদিন চকে এসেছিলাম সুহিনসহ আরো কয়েকজন সমবয়সী ছেলেরা। সবাই বুদ্ধি আটলাম, আমরা আজ কাঁশবনে ঢুকবো এবং বাবুই পাখির বাসা থেকে ডিম পেড়ে নিয়ে আসবো। যা ভাবা তাই কাজে পরিনত করলাম। সবাই মিলে দল বেঁধে ঢুকলাম। খুব আস্তে আস্তে একপা দুপা করে কাঁশবনে ঢুকে পড়লাম।

: ইশ কত বাসা !
: হ্যাঁ ডিমও আছে প্রায় সবগুলোতেই।
আনন্দে সবাই আঠখানা, এভাবে একেকজন একেকভাবে আনন্দে হৈ হুল্লা করতে লাগলাম। অবশেষে প্রায় ২/৩ মুঠো ডিম নিয়ে আমরা বেরিয়ে এলাম কাঁশবনের ঝোড় থেকে।এরপর সবগুলো ডিম ভেংগে একটা পেয়ালায় একত্রিত করলাম। প্রায় অর্ধেক পেয়ালা ভরে গেলো। শেষে পেঁয়াজ-মরিচ দিয়ে ভাঁজলাম এবং কত স্বাদ করে যে খেয়েছিলাম যা আজো মনে পড়ে। তখন ইচ্ছে হয় আবার সেই ডানপিটে দূরন্ত দিনগুলোতে ফিরে যাই এক দৌড়ে।
যা বলতেছিলাম, তো—আমরা এ জমিটা বেশ কয়েক বছর এভাবে চাষাবাদ করি। ১৯৯৪ সালে আমাদের বাড়িটা বিভিন্ন কারন বশত বিক্রি করে দিতে হয়। তখন বাবা সিদ্ধান্ত নেন এই চকে এসে বাড়ি করবেন। আমরা কথাটা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেলাম। কেউ-ই রাজি হলামনা এ ধুধু চকে বাড়ি করতে কিন্তু এক রকম সকলের অমতে তার সিদ্ধান্ত অটুট রাখলেন।
সেদিন ছিলো বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ১৯৯৪। ধুধু করছে চারপাশ। মাঝখানে আমাদের বাড়ি। আগের বাড়িতে বিদ্যুত ছিলো কিন্তু এখানে ঘুটঘুটে অন্ধকার, আনকোঁড়া এক অভিজ্ঞতা। একদিনেই বাড়ির সবকিছু স্থানান্তরিত করা হলো। এভাবে এক বিরান চকের মাঝখানে বসবাস করতে লাগলাম। দূর থেকে যে-ই দেখতো, তারা বলতো—ঐ চকে কে বাড়ি করলো, কোনো দুর্দান্ত লোক ছাড়া তো কল্পনাও করা যায়না। কারন কোনো ডাকাত-টাকাত না হলে এমন শুকনো চকে এসে বাড়ি করবে কে।এভাবে ৫/৬ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলো।

তখনও আমরাই এই চরে একমাত্র বাসিন্দা। অনেকের অনেক মন্তব্যের মুখোমুখি হতে হয় রাস্তা-ঘাটে। কেনো চরের মধ্যে বাড়ি করলাম, কেনো রাজধানীর মতো সোনার বাড়িটা বিক্রি করে শুকনো চরে গিয়ে বসতি গড়লাম ইত্যাদি নানা প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হতো প্রায়শই। উল্লেখ্য, আমরা যে বাড়িটা বিক্রি করে এই চরে বাড়ি করি, ঐ বাড়িটা সত্যিই ছিলো ঐ এলাকার ভেতর রাজধানীর মতো জমজমাট। বাড়ির পাশ দিয়েই চলে গেছে রাস্তা, বিদ্যুত ছিলো তাছাড়া অনেক লোকের যাতায়াত ছিলো আমাদের সেই পুরোনো বাড়িটায়। দূর-দূরান্তের কেউ অচেনা লোকও দেখেছি আমাদের বাড়িতে পানি খেতে আসতো, কেউ আসতো নামাজ পড়তে আবার শনি আর মঙলবার তো সাইকেল আর মটর সাইকেলের গ্যারেজ হয়ে যেতো আমাদের পুরো বাড়িটাই। কাউকে মানা করতাম না, সব ধরনের মানসিক সেবা পেতো আমাদের ঐ বাড়িটাতে। আর তাই অনেকে দু:খ করেও বলতো কিসের জন্য আমরা এই সিদ্ধান্ত নিলাম, বাড়িটা বিক্রি করে দিয়ে চরে গিয়ে উঠলাম।
শীত মৌসুমে আমরা এই নতুন বাড়িটা করি। ঐবার অর্থাত ওবছর (বর্ষা আসার পূর্বে) এই চরে আমরা প্রায় একাই বসবাস করতে লাগলাম। বর্ষার পানিটা নেমে যাবার পর চরটা শুকনো হলো। অনেকের আগ্রহ বাড়লো। ৩/৪টা বাড়ি হয়ে গেলো। আমরা যখন একা একা একবছর কাটাই তখন থেকেই এই গ্রামের নাম রূপনগর বলে অনেকেই বলতে থাকে। “
রূপনগর” নামকরনের পেছনেও যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। আপনাদের মনে পরে কিনা; বাংলাদেশ টেলিভিশনে ১৯৯৪ তে একটি ধারাবাহিক নাটক প্রচারিত হয়ে হয়, যা নাকি ঐসময়ে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করে জনমনে। ঐ নাটকটির নামছিলো “রূপনগর”। নাটকটির প্রেক্ষাপট এই নতুন বাড়িঘর করার সাথে কিছুটা মিল ছিলো। অর্থাত নাটকের নায়ক তৌকির আহম্মেদ সন্ত্রাসীদের ভয়ে আশ্রয় নেয় শহর থেকে দূরে নদীর তীরবর্তী একটি গ্রামে, যার নাম ছিলো রূপনগর.... এই ভাবে নাটকটি আরো কিছু দূর এগিয়ে যায়। নাটকটির প্রতিটি পর্বই ছিলো কৌতূহলপূর্ন এবং রহস্যময়। অর্থাত এক পর্ব শেষ হলে পরবর্তী পর্বের জন্য দিন গুনতে হতো আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত। আমার মনে হয় বাংলাদেশের ৮০% মানুষই (যারা টিভি দেখেন)রূপনগর নাটকটির দর্শক ছিলো।
উল্লেখ্য, এই নাটকটিকে কেন্দ্র করে মজার একটি ঘটনা ঘটে ছিলো যা না বলতে পারলে নাটকটি যে কতখানি জনপ্রিয় হয়েছিলো তা আপনাদের কাছে পরিস্কার হবেনা। সেদিন ছিলো নাটকটির শেষ পর্ব। রাত ৯টায় সম্প্রচার হতো নাটকটি। তখন ঘড়ির কাটায় সময় রাত প্রায় ৯টা। তার কিছুক্ষন পূর্বে হালকা করে একটু বৃষ্টি হয়ে যায়। আমরা তখন এখানে বাড়ি করিনি।সবাই টিভি সেটের সামনে, এক্ষনি শুরু হবে নাটকটি- ঠিক এমন সময় বিদ্যুত চলে গেলো। আর তখনই ঘটলো মজার কান্ড। একযোগে ফোর্ডনগর গ্রামের আবাল-বৃদ্ধ সবাই যারা টিভি সেটের বসা ছিলো সবাই খেয়াঘাটে চলে এলো সাভার গিয়ে নাটকটির শেষ পর্ব দেখার জন্য।
এই হুড়হুড়িয়ে বেরিয়ে আসার দৃশ্যটা ছিলো ঠিক হেমিলনের বাশিওয়ালার পেছনে পেছনে যেভাবে ছুটে গিয়েছিলো ঐ শহরের ছোট ছোট বাচ্চারা ঠিক তেমন ভাবে আমরা সবাই খেয়াঘাটে এসে উপস্থিত হলাম। ঘাটে তখন ২/১টা নৌকা বেড়ানো ছিলো। ওসব নৌকার ধারণ ক্ষমতা ছিলো সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১২ জন কিন্তু সেখানে ওঠার চেষ্টা করে প্রায় ২০/২৫ জন করে। আর ফলশ্রুতিতে যা হবার তাই, অর্থাত একে একে ঘাটের তরী ঘাটেই ডুবিয়ে দিলো সবকটি।নাটকটি তো কোনো ভাবে মিস করা যাবেনা। আমরা কজন খালের ভেতর থেকে একটি সেলু নৌকা (ইঞ্জিন চালিত মাঝারি নৌকা)আস্তে আস্তে খালের সরু মোহনা দিয়ে বের করে নিয়ে এলাম। এভাবে সবাইকে কৌশলে ফাকি দিয়ে আমরা বেশ কয়েকজন নদী পাড় হয়ে চলে এলাম সাভার। ঘাট থেকে বাজারে ওঠার রাস্তাটি ছিলো উচ্চু এবং ঢালু। কিছুক্ষন পূর্বেই হয়েছিলো বৃষ্টি। এই ঢালু পথটুকু হয়ে গেছে পিচ্ছিল আর কর্দমাক্ত।তাড়াতাড়ি করে ওঠতে গিয়ে আমাদের কয়েকজন ওখানেই চিতপাটাং।কিন্তু শেষ পর্যন্ত যেভাবেই হোক দেখেছিলাম নাটকটির শেষ পর্ব।

সুতরাং বাড়ি করার পরপর অনেকেই ঐ রূপনগর নাটকটির নামানুসারে আমাদেরকে রূপনগরের বাসিন্দা বলে ডাকতে থাকে। অনেকে ব্যঙ্গ করেও বলতো- তোমরা কি রূপনগরের লোক। কারন ছিলো, এই ধুধু চরে আমাদের একটা মাত্র বাড়ি আর ঐ একটা বাড়ি দিয়ে একটা গ্রামের স্বপ্প দেখাও সেদিনের জন্য ছিলো বেমানানসই। তাছাড়া আমাদের কাছেও গ্রামের নাম রূপনগর পরিচয় দিতে কেমন যেনো লাগতো। একবার একটা নামফলক ঝুলিয়ে দিয়েছিলো ওপারের (ফোর্ডনগর) বোরহান উদ্দিন ফকিরের মেয়ের ঘরের নাতি শাহিন। ওটাতে লেখাছিলো- “এই গ্রামের নাম রূপনগর, নামকরনে- শাহিনুর রহমান শাহিন।’’

আজ রূপনগর গ্রামের নামটি চলে গেছে সরকারী খাতায়। গ্রামের নামানুসারে ভোটা তালিকায় নথিভুক্ত করা হয়েছে এই জনপদে বসবাসরত নাগরিকবৃন্দকে। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে এর ব্যাপ্তি। এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- রূপনগর জামে মসজিদ, যার পেছনে মূখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন আমার বাবা মর্হুম জনান মো. মগর আলী। এখানে স্থায়ী ভাবে বসেছে খেয়াঘাট। শহরের কোলাকল মুক্ত একটি গ্রামীন জনপদ চিহ্নিত করে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এখানে বসতবাড়ি গড়ে তুলছে। শহরের পাশে অবস্থিত বলে যোগাযোগের কোনো অসুবিধা হয়না। বংশী নদীতে একটি সেতু হয়ে গেলে রূপনগর হতে পারে একটি উপযুক্ত আবাসিক এলাকা। রূপনগরের বর্তমান লোক সংখ্যা আনুমানিক হাজারের কাছাকাছি। আজকের বাসিন্দাদের অনেকেই জানেনা এই জনপদের সৃষ্টির ইতিকথা। আমার এই প্রয়াশটুকু নিবেদন করলাম- কৌতুহলপূর্ন পর্যটক এবং নতুন আগন্তুকদের জন্য।

শনিবার, ১৩ জুন, ২০০৯

শামিম ভায়ের চিঠি... দুই

প্রিয় ফারুক;

তোমার ই-মেইল পেলে বেশ ভাল লাগে তাই প্রথমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার অনুরুধ করছি। তবে আমার বাংলায় ইমেইল পড়া একটু কষ্টকর। কারন আমার সাইবার ক্যাফে থেকে কপি করে বাসার কম্পিউটারে সেট করে বাংলা পড়তে হয়। যাই হোক তোমার ই-মেইলের জবাব দেবার চেষ্টা করছি।
দূরে একা একা থাকতে থাকতে একেক সময় খুবই খারাব লাগে। তাছাড়া অনেকদিন হলো একা একা দিন কাটাচ্ছি----
:>> আসলে কি তুমি একা ? দেখ এক অর্থে তুমি একা। আমরা প্রত্যেকেই একা। দেশেউ আমরা আসলেই একাই ছিলাম, তবে আমরা যেটি করেছিযে কিছু বন্ধু-বান্ধব সৃষ্টি করতে পেরেছিলাম যাদের সান্নিধ্যে আমরা আমাদের এককিত্বকে ভুলে থেকেছি। কিন্তু দেখ সেই বন্ধূত্ব যথেষ্ঠ ছিলনা বলেই আমাদের দেশের মায়া ছাড়তে হয়েছে। দেশে তোমার বন্ধুরাউ যার যার প্রয়োজনে দুরে চলে গেছে এবং কারো সাথে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিযোগিতার। আমি বিশ্বাস করি মানুষ অসীম প্রতিভার অধিকারী তাই মানুষ সবসময়ই নিজের জগত গড়তে পারে, যদি সে চায়।তুমিকি পারনা নতুন করে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে? যে যায়গাতে আছ তাকে নিজের করে ভাবতে? নিশ্চই পার তবে সেই যে অতীত, সে তোমাকে বাধা দেয়। তোমার অতীত তোমাকে ভাবতে বাধ্য করে যে, অতীতেই তোমার নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা। দেখ যে খাপ খাওয়াতে পারেনা সে অতীতকে আকড়ে ধরে। আর প্রকৃত যোদ্ধা অতীত থেকে শিক্ষা নেয়া ছাড়া অতিতের কাছে কিছুই প্রত্যাশা করেনা, কারন প্রত্যাশার বিষয়টি ভবিষ্যতের সাথে জড়িত। তাই আমি তোমাকে বলব সাহসী হও এবং নিজেকে খাপ খাওয়াও। আমি জানি এর মধ্যে বেদনা আছে কিন্তু অতীতে বাস করার মধ্যে আছে গ্লানি। দেখ তোমার কোনটা বেশি পছন্দ বেদনা, না গ্লানি?
তারপরও আমি বলতে চাই বিদেশ এবং স্বদেশ কখনোই এক হবে নাঃ>> ভূল। যদিও আক্ষরিক অর্থে হবেনা তবে, ধারনাগত ভাবে হতে পারে। বহু লোক বিদেশকে স্বদেশ হিসাবে বরন করে চিরতবে প্রবাসী হয়নি? আমি বলছিনা যে, তোমার আমার সেটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত তবে “ বিদেশ এবং স্বদেশ একই রকম হবেনা” -এটি নেহায়েত পশ্চাদপদ প্রচলিত চিন্তাধারা, যে মন্ত্র তোমাকে পদে পদে কষ্ট দেবে। একবার চেষ্টা করে দেখনা হতেও তো পারে।হ্যাঁ আপনি বলবেন অবশ্যই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছেঃ >> তোমার বস্তুগত অবস্থা তথা অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে মানি তবে মানসিক অবস্থার মনে হয় পরিবর্তন হয়নি। এই পরিবর্তনটি বেশি জরুরী।ভাবছি একটা পিসি বা লেপটপ নেবো যাতে কিছু সময় পাস করতে পারিঃ >> ভালো এবং পজেটিভ চিন্তা। তবে একে শুধু বিনোদনের উতস হিসাবে না দেখে দেখো অন্য কোনভাবে কাজে লাগানো যায় কিনা ( যেমন ইন্টারনেটের সাহায্যে সসয় ফোন করা সুযোগ বা ব্যাবসা, ভালো চাকরি খোজা, অফিসের কাজ বাসায় সেরে ফেলা.. ইত্যাদি) ?
আমার কাছে মনে হয় আমি কোনো লক্ষ বস্তু ঠিক করতে পারছিনাঃ >> সব সময় লক্ষ্য বস্তু ঠিক করা যায়না। অনেকসময় ঘটনা প্রবাহ বা সময়ই লক্ষ্যবস্তু ঠিক করে দেয়। হাদিসে একটি কথা আছে “ভাগ্যের পিছে ধাওয়া করোনা, ভাগ্যই তোমাকে খুজে নেবে”। জহির রায়হানের “সময়ের প্রয়োজনে” নামে একটি প্রবন্ধ আমরা স্কুলে পড়েছিলাম সেখানে তিনি একজন সাধারন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশ্ন করেছিলেন কেন সে যুদ্ধ করছে তার সহজ উত্তর ছিলো “সময়ের প্রয়োজনে”। তার কাছে স্বাধিনতা নামক বিষয়টি পরিস্কার ছিলনা। স্বাধিনতার সুফল-কুফল সম্পর্কে তার কোন ধারনা ছিলনা বা তার দরকার ছিলোনা। দেশে তখন যুদ্ধাবস্থা তার উপর যুদ্ধ আপতিত হয়েছে। এটাই ছিল তার নিয়তি এবং যুদ্ধ করাটাই যার স্বাভাবিক পরিনতি।

আমরা বেশিদিন পৃথিবীতে বাচবনা। আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের জীবনের লক্ষ্য নিয়ে কেউ সমালোচনাও করবে না। প্রায় অর্ধেক জীবন আমরা পেরিয়ে এসেছি, যেটি করার কথাছিল (লক্ষ্য স্থির) অনেক আগে সেটি যেহেতু করা হয়নি/ হয়ে উঠেনি তাই বাকি সময়টা সেটা নিয়ে চিন্তা করে জীবনকে ভারাক্রান- করার কোন দরকার মনে করিনা। এখন যত বেশি পার বর্তমানকে শিশুর মতো মানসিকতা নিয়ে পাড় করার চেষ্টা কর। সত ও নৈতিক জীবন যাপন কর যা প্রতিদান একদিন আল্লার কাছে চেও।
তো যাই হোক, জানিনা আমার পরামর্শ কতখানি কাজে লাগবে তবে অন্যের সাথে নিজের তুলনা করে নিজেকে দুখিঃ সাজিও না। কে জানে হয়তো তুমিউ সর্বোত্তম অবস্থানে আছ কিন্তু মানুষ হবার দোষে স্বাভাবিক প্রবনতার কারনে তুমি তা বুঝতে পারছোনা। ভালো থাক।

আল্লাহ হাফেজ।

শামিম ভায়ের চিঠি... এক

প্রিয় ফারুক,

তোমার ই-মেইল পেয়ে বেশ ভাল লাগল। কারন তোমার অতীতের সাথে আমারওযে একটা সংযোগ আছে। যেমন ধর বংশী নদীর কথা। তোমার মতো আমিও তাকে মিস করছি। বাংলায় তোমার সাথে ই-মেইল চালাচালি করার সুবাদে দির্ঘদিন পর বাংলায় লেখার সুযোগ হচ্ছে। তোমার সঙ্গি সাথিদের গল্প শুনে তাদের দেখতেও ইচ্ছা করছে।
তবে হয়তো ইউরোপে থাকার কারনেই হোক, ‘সময়ের প্রয়োজনে’-ই হোক আমি হয়তো তোমার চেয়ে কম আবেগপ্রবন হয়ে গেছি। এখন আমি পারত পক্ষে এখানকার বাঙ্গালীদের সাথে মিশিনা। তাদের মানসিকতার সাথে আমার মানসিকতার একটি বিস-র ব্যবধান রচিত হয়েছে। তারা ইউরোপে থাকে এতে তাদের একটি অহমিকা আছে কিন্তু নেই তার সাথে সাজুয্য পুর্ন যোগ্যতা। তারা এখনো কুয়ার ব্যাঙ্গের মতো চিন্তা করে, অর্থের মাপকাঠি দিয়ে অবাস্তকে বিচার করে। বস্তা-পচা অভ্যাস ও দেশীয় রাজনিতীর কাদাছোড়াছুড়ি থেকে তারা কোনভাবেই বের হতে চায়না। যাই হোক আমি তাদের কথা লিখে আমি আমার লেখাকে লম্বা করতে চাচ্ছিনা।

আমি চেষ্টা করছি পশ্চিমা বা বিশ্ব সভ্যতাকে নিজের মতো করে বুঝতে। তাদের ভালো দিকগুলিকে নিজের মধ্যে ধারন করতে ও আমার ভালোদিকগুলি দিয়ে তাদের প্রভাবিত করতে।
যেমন ধর: স্টেলিওসের কথা, সে একজন গ্রিক বয়স ৩০ বেলজিয়ামে প্রোগ্রামার হিসাবে নামকরা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। খুব মোটা অংকের স্যালারী ড্র করে। তার সাথে আমার প্রতি সপ্তাহে একবার কাছের একটি ফাষ্ট ফুডে আড্ডা হয়। সে অত্যন- যুক্তিবাদি কিন্তু সে ধর্ম, পরকাল বা খোদায় বিশ্বাস করেনা। তার সাথে এ নিয়ে প্রচুর তর্ক হয়। কিন্তু সেটি সমঝোতাপূর্ন পরিবেশে। সে আমাকে আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে সাহায্য করে ও উতসাহ দেয়।
মিশেল : একজন বেলজ। বয়স ৩৫। সে ক্যাথলিক থেকে ইসলাম গ্রহন করেছে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলোসোফির ছাত্র থাকা কালে ইসলাম সম্পর্কে আগ্রহ হয়। কিন্তু তার প্রফেসররা তার প্রশ্নের সদুত্তর না দিতে পারায় সে নিজেই এ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে এবং ইসলাম তার এতই ভালো লাগে যে সে মুসলিম হয়ে যায়। সে এখন একটি হাইস্কুলের শিক্ষক। সে তোমার আমার মতো সাধারন মুসলিমের চেয়ে ইসলাম সম্পর্কে অনেক বেশী জানে। মাঝে মাঝে তার সাথে আমার ইসলাম সম্পর্কে আলোচনা হয়। । মজার ব্যাপার হলো সে অনেকদিন আগে একবার বাংলাদেশেও গিয়েছিল। বাংলাদেশের মেয়েদের তার ভিষন পছন্দ হয়ে ছিল। তাই সে একটি বাংলাদেশি মেয়েকে বিয়েও করতে চেয়েছিল। এমনকি আমার ছোট বোনের ব্যাপারে একটু কথাও হয়েছির কিন্তু আমার বাসা থেকে রাজি না হওয়াতে বিষয়টি আর বেশীদুর গড়ায়নি। সে এখন একজন মরোক্কান মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করেছে। তার বিয়ের পর আর তার বাসায় যাওয়া হয়নি তবে সে আমার কাজের যায়গাতে মাঝে মাঝে আসে। দির্ঘদিন যোগাযোগ না থাকলে সে আমাকে ফোন করে।
ভার্জিনী : একজন রুয়ান্ডান তবে বর্তমানে বেলজ নাগিরকত্ব পেয়েছে। বয়স ৩০-৩২। রুয়ান্ডার গৃহযুদ্ধের সময় প্রতিপক্ষ তার পরিবারের সবাইকে হত্যা করে। সে একমাত্র পালিয়ে প্রথমে ফ্রান্সে ও পরে বেলজিয়ামে চলে আসে। সে ট্রান্সলেশনের উপর গ্রাজুয়েশন করেছে এবং কাজের সন্ধান করছে। সে তার সুবিধাজনক সময়ে সপ্তাহে একবার কি দুবার আমাকে ফোন করে তার বাসায় যেতে বলে। সে আমাকে ফেঞ্চ শিখার ব্যাপারে সাহায্য করছে এবং আমরা মাঝে মাঝে রুয়ান্ডা ও বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করি।
ইসাবেল : একজন ডাচভাষি বেলজ। বয়স ৩০। আমি আগে যেখানে কাজ করতাম তার পাশেই থাকতো সেই সুবাদেই পরিচয়। তখন তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হত। বর্তমানে সে ইংল্যান্ডে একটি নামকরা কম্পানীতে কাজ করে এবং সেখানেই থাকে। তবে মাসে একবার দুবার বেলজিয়ামে তার পরিবারের কাছে আসলে মাঝে মধ্যে আমার সাথে দেখা করে। তাছাড়া ইমেইলের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। তার ইসলাম সম্পর্কে ভিষন আগ্রহ আমি তাকে ইসলাম সম্পর্কে বলি আর সে আমাকে ডাচ ভাষা শিখার ব্যাপারে সাহয্য করে। আমার ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার ব্যাপারে সে ভিষন আগ্রহী।
আসলান : যদিও সত্যিকারে একজন তুর্কি কিন্তু নেদারল্যান্ডের নাগরিকত্বধারি ও সেখানেই বিয়ে করেছে। বয়স ৩৫/৩৬। বেলজিয়ামে একটি উচ্চতর ডিগ্রি নিচ্ছে পাশাপাশি একটি সুপারমার্কেটে কাজ করছে। মুসলিম ও ভিষন আবেগ প্রবন কিন্তু সে তার সাথে শুধু ডাচ ভাষাতেই কমিউনিকেশন করতে হয় বলে আবেগ খুব বেশি শেয়ার করতে পারিনা। প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহেই তার সাথে কফি খেতে খেতে আড্ডা হয়। সে আমার ডাচ নিয়ে ঠাট্টা করে আর আমি তার ইংরেজি নিয়ে। সে আমার পরস্পরে পড়াশোনা, ইসলাম ও ক্যারিয়ার নিয়ে একে অন্যেকে উতসাহ দেই।
পেরে : একজন স্প্যানিশ। বয়স ৩৫। ভার্জিনীর প্রতিবেশী। যদিও সে একজন ফরেস্ট ইঞ্জিনিয়ার কিন্তু কাজ করছে একটি ৪ তারা হোটেলে। তার সাথে বেশিদিনে পরিচয় নয় তারপরও তার পারসোনালিটি আমার খুবভালো লাগে। একজন ক্যাথলিক হয়েউ ইসলাম ও জিবন সম্পর্কে তার উদার ধারনা আমাকে ভিষন ভাবে নাড়া দেয়। তার সাথে আমার কথা হয় ভাঙ্গা ভাঙ্গা ফ্রেঞ্চে কখোনো সখোনো ইংরেজিতে। ইদানিং আমি তার কাছে স্প্যানিশ শিখার আগ্রহ প্রকাশ করেছি।
মুহাম্মদ : যদিও এটি তার নতুন নাম। ইসলাম গ্রহন করার পর সে এই নাম গ্রহন করেছে যদিও তার পরিবার এবং সন্তান সন্ততি এখোনো ইসলাম গ্রহন করেনি। বয়স ৪৫। সে ভারতীয় মহাসাগরের একটি দ্বীপ, মাদাগাস্কারের অধিবাসি। বেলজিয়ামে ডিপ্লোম্যাট হিসাবে আগমন কিন্তু তার নতুন সরকারের সাথে রাজনৈতির মতোবিরোধিতার কারনে সে তার দেশে ফিরে যেতে অনিচ্ছুক এবং এখানেই থেকে যাবার চেষ্টা করছে। সে জানতে পেরেছে যে তার পুর্বপূরুষ ছিল মুসলিম এবং ভারতীয় তাই সে ইসলাম ও ভারতিয় ব্যাপারে অনুসন্ধান করছে এবং একারনেই তার সাথে আমার সখ্যতা। সে নিজে একজন কালোমানুষ কিন্তু তার স্ত্রী ফ্রেঞ্চ বংশোদ্ভুত সাদা মহিলা। কিন্তু মহিলা কালোমানুষ সম্পর্কে তার ভিষন মায়া। তার পরিবারটি একটি চমতকার পরিবার। শহর থেকে দুরে মফস্বলে সে থাকে। সে শহরে আসলে তার সাথে আমার কথা-বার্তা হয়। একবার তার বাসায় গিয়েছিলাম। তার আতিথেয়তায় আমি অভিভুত যদিও আমার বাসায় তাকে এখোনো আনতে পারিনি।
যাই হোক অনেক বেশী লম্বা হয়ে যাবার কারনে আমি শেষ করছি। আমার এতো কথা বলার উদ্দেশ্য এই যে, বালাদেশে জম্ন হয়েছে বলে সবমসময় বাঙ্গালীদের সমুদ্রে হাবুডুবু খেতে হবে তা নয়। যদি তোমার সুযোগ ও পরিবেশ থাকে তবে বিশ্ব সভ্যতার সাথে সংযোগ সংস্থাপন করো। নিজের অভিজ্ঞতাকে অন্যদের সাথে মিলিয়ে নাও। বিশ্বকে আপন করতে না পারলে কুয়ার ব্যাঙ্গ হিসাবেই জন্ম ও মৃতূ হবে, স্রষ্টার সৃষ্টি সোনালী সুর্য, নীল সমুদ্র ও সবুজ ভুমি তোমার কাছে নিরর্থকই রয়ে যাবে।

শুক্রবার, ১২ জুন, ২০০৯

Send off Safeer...

Dear Safeer!
Today you`re leaving to next destination taking off this platform
So that new adventures can achieve.

I`ll not thank you to decrease your credit while staying with us.
But you were having minded and confident on yourself -
So that you have got these opportunities.
So, I`ll not stop your flight,
I know and belief that nobody can stop the speed of life;
Even I should deeply respect it must.
This is very terrible to say good bye.

May God bless you!
Always remember that never should forget the root
Even you get some new too.

At last I`ll add-
Nothing to give you
Nothing I have;
But having in heart only in heart
That’s name Love only Love
Given you this only
Keep in your heart.
Faruque Bhai
Freshly Frozen Food, Dubai, UAE. Dated 16th Feb/2008

প্রবাসে পরিচয়

স্মৃতিগুলোই রয়ে যায় অবশিষ্ট। দুবাইয়ের মরুময় আবহাওয়ায় নিজেকে আজো খাপ খাইয়ে নিতে পারলামনা। যে আশা আকাঙ্খা নিয়ে আসা তার বিন্দু মাত্রও পূরণ করতে পারলামনা। দুইটি বছর পার হয়ে গেলো। এই প্রবাস জীবনে অনেকের সহচার্য পেলাম। অনেক না জানা, না দেখা অভিজ্ঞতা হলো। অনেক পুরোনো মুখ ফেলে এসে অনেক নতুন মুখের সন্ধান পেলাম এই দুবাইতে। অনেকের মধ্যে একটি নাম অনেকদিন মনে থাকার কথা। যদিও মানুষ কাউকে চিরদিন বেঁধে রাখতে পারেনা। একদিন তাকে বিদায় দিতেই হয়। অনেক আদরের জিনিসটিকেও ছেড়ে দিতে হয় নীদাবী করে। এটাই মানুষের বড় ব্যর্থতা। এখানেই পরাজয় ঘটে উশৃঙ্খলার ।
মনে পড়ে গভীর ভাবে শ্রষ্ঠার অপার ভাবনার কথা, তাঁর পরিচালনার কথা। গেয়ে ওঠি এই গান শ্রষ্ঠার পানে, খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে, বিরাট শিশু আনমনে....

বন্ধুত্বকে আমি একটু ভিন্ন চোখে দেখি, যা আর দশজন থেকে কিছুটা হলেও ব্যতিক্রম। এতে তাই একটু আপত্তি বা দুকথা ওঠতেই পারে কিংবা কারো কারো চোখে বেমানসই লাগতেই পারে। সেটা হলো সকল ব্যবধানের দেয়াল টুটা। আমার ভাবনায় বন্ধুত্ব মানে না থাকবে ব্যবধান গরিব-ধনীর, না থাকবে পার্থক্য ৮০ বছর আর ৮ বছরের শিশুর, থাকবেনা ব্যবধান সাদা-কালোর, থাকবেনা ব্যবধান দেশ-বিদেশের। এই হলো আমার বন্ধুত্ব। যদি সুন্দর মনের মানুষের সংঘ পাই, যদি এই ব্যবধানগুলো না মানার একটি সংস্কারশীল মন পাই তার সাথেই আমি বন্ধুত্ব গড়ি। তার কাছে বলতে ভয় পাইনা অনেক আন-রিক কথা। অনেক এমন কথা আর অভিজ্ঞতা যা হৃদয় স্পর্শ করে। পৃথিবীর অনেক মানুষের ভিড়ে এমন অনেক বন্ধু আমি পেয়েছি যারা আমার মনের চিন্তা- চেতনায় মিলেছিলো অনেকাংশে।
দুবাইতে এসে এমন একজনকে পেয়েছিলাম হঠাত করে। পরিচয় হওয়ার অনেকদিন আগে থেকেই দেখতে ছিলাম ওকে। একদিন কথা বলবো বলে অনেক সময় কাটিয়েছি। প্রায় প্রতিদিনই দেখা হতো, হতো না কথা। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে অন্যদিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতাম। ঠিক ও-ও মনে হয় কি যেনো বলবে বলে বুঝা যেতো। কিন্তু এগিয়ে আসা হয়নি অনেকদিন।
একদিন হঠাত করে বলে ফেললাম -- আপনার নাম কি? উত্তর পেলাম- শাকিল। এরপর জিজ্ঞেস করলমার কোথায় বাড়ি, কোথায় কাজ করা হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কথা। ভেঙ্গে গেলো কথা না বলার প্ররম্ভিক ইতস্ততা।
এরপর থেকে শুরু হলো একে একে অনেক কথা। আমাদের হোটেলে মেইনেনেন্স কাজের ভার নিয়েছিলো শাকিলদের মালিক। কাজের গতি এবং শ্রমিকদের তদারকি করা এবং মাঝে মাঝে সাহায্য করতে শাকিল সপ্তাহে প্রায় ৪/৫ দিন আসতো। প্রায় ২/৩ মাস ধরে কাজ চলতে থাকে।
ইতিমধ্যে রমজান এসে গেলো। ওরা নিয়মিত রোজা রাখতো। ইফতারের সময় হলে আমরা সবাই মিলে ইফতার করতে ক্যাফেটেরিয়ায় বসতাম। আন্তরিকতা আরো বাড়তে লাগলো। রোজা শেষ হয়ে গেলো। এরপর পর ওদের কাজও শেষ হয়ে গেলো।
শাকিল চলে এলো আগের যায়গায় অর্থাত অফিসে। মূলত শাকিল অফিসিয়াল কাজের দায়িত্বেই নিয়জিত ছিলো। ওদের অফিসটা দেরাতে। আল্‌ মাখতুম হাসপাতালের সামনের রাস্তায় কিছুটা ভেতরে গিয়ে হাতের ডানপাশে অবস্থিত শাকিলদের অফিসটা।
প্রতিদিন ফোনে কথা হয়। সুবিধা ছিলো এখানে লোকাল কলের কোনো বিল হয়না। এর সুবিধা নিয়ে দিনের অনেক সময় যখনই সময় পেতাম আলাপচারিতায় বসে যেতাম।
কী আলাপ হতো, পারিবারিক, প্রবাসের ভাল লাগা- না লাগা, স্বদেশের কথা, দেশীয় রাজনৈতিক কথা, নিত্যদিনের চলমান ঘটনার ধারাভাষ্য ইত্যাদি নানা কথা হতো সারা দিন ধরে। আমাদের ভিলাতেই লেন্ড লাইনছিল। কিচেনের পাশেই টেলিফোন সেট। রান্না করতে এসে মনির কিংবা জামাল ওদেরকে রান্না করতে দিয়ে টেলিফোনের বোতামে টিপ দিয়ে কানেক্ট হতাম শাকিলের সাথে।
ওরা গত জানুয়ারী থেকে ইন্টারনেটে টেলিফোন সার্ভিস চালু করে। প্রতি মিনিট ১ দিরহাম। সস্তায় দেশে ফোন করার সুবিধা ভোগ করার জন্য অনেকে ভিড় জমায় ওদের অফিসে। মোটামুটি ব্যবসা চলতে থাকে।
কিন্তু শাকিলের ওপর চেপে যায় লম্বা ডিউটি। সকাল ৯/১০ থেকে রাত ১২/১ টা পর্যন- খোলা রাখতে হয় অফিস। এই দীর্ঘ সময়টা কাটানো শাকিলের জন্য বেশ বিতৃষ্ণার ব্যাপার হয়ে পড়ে। তাই ফোনে আলাপচারিতা জমে ওঠে আরো বেশ ভাল করে। চলতে থাকে আলাপচারিতা।
জীবন বড্ড গতিময়, জীবনের তাগিদে বিদায়ের ডাক এসে যায় দুজনেরই। আমি দুবাই গ্র্যান্ডে হোটেল ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার ব্যাবস্থা করলাম। আর শাকিলের ফোন এলো দেশ থেকে, ওকে জরুরী ভাবে যেতে হবে বাড়িতে। আর এভাবেই যবনিকা টানতে হলো ক্ষনকালীন পরিচয়ের।

ফারুক-২৮/০৩/০৬

Award " Employee of the Month"




















While working in Dubai Grand Hotel, the Chairmen of the Hotel awarding me as " E mloyee of the month April 2005 " as reward of appreciation of my service in His Hotel showing full dedication and hard work for the organization.

My Letter to Nasir (2005)

My dear Nasir,

Thank you much more than what I can pronounce for your very nice mail. My regards also to your friends Protiq, Konok, Harun, Jony and others.Just I read your mail, I can say really this is a fantastic writing and I want to say mostly about your excellent SMS collection, how deepest sound that Make a heart which never breaks, Make a touch which never paints. I'm very satisfied with your sending SMS. Now we can turn our view to us. This is very good information that our younger brother Nizam is studding at a college. Actually I forgot his name though it shouldn't for me, my special congratulation for Nizam.Yes Nasir, this is very fine that you're going to Jalalabad, I have more message for Rajib and his family members. Yesterday I received one registered letter from Billal, I think you know enough him. I attached his reply with your mail's attachment, you just open the file and take a print out and please give it to Billal, this is a Bangla writing.Yes Nasir, this is a four star hotel and I'm working as a storekeeper I think you know this. You know star hotel means everything you can enjoy here; there are available live entertainments also. Guest comes here for enjoy and enjoy. You don't know how much liquor I mean alcoholic drink consumption in the hotel, people comes here only for drinking, I have to deal more than 150 kinds of beverage items other hand food, printing stationary and general items also but my salary is very poor. This is a Indian hotel, our hotel owner is from Punjab of India. You know Shikhh, they are Shikhh. I have to maintain this large quantity store item by computer system using Solomon VI.I'm having Internet connection with my computer, I can browse web site. I can read bangla news papers etc.On the 26th March on our Independent day I convey my deep respect to our martyrs who sacrificed their lives in 1971. Nasir if you want you can write me I mean you can send me Bangla mail, you're asking how? Yes, first you should write your bangla letter in MS word then you attach the file then you send as I just attached Billal`s letter.
So, ok Nasir please give this letter to Billal (Rekha`s Husband). No more today, Insha Allah we'll meet next 29th March. Allah Hafez.

Best Regards
Faruque

বুধবার, ১০ জুন, ২০০৯

বাবা


বাবা তুমি ছত্রধর হয়ে
আজ মাথার উপরে ছায়া দিচ্ছো,
বটবৃক্ষের নীচে যেমনি
ক্লান্ত- পথিক--
তপ্ত দুপুরেও নিশ্চিন্তায়
নিঝুম সন্ধ্যার মতো ডুবে যায়
ঘুমের দেশে।

আজ স্বপ্নলোকে তোমার বিদায়ীক্ষন
দেখে হুঁ হুঁ করে
কান্নায় ভেঙ্গে যায় বুকটা।

হৃদয় বীণার তারগুলো
নিষ্ঠুরভাবে ছিড়ে
যাচ্ছিলো;
সাত সাগরের ঢেয়ের মতো হঠাত
অশান্ত- হয়ে
জলোচ্ছাস আর টর্নেডোর মতো
অস্থীর হয়ে যায়
ঘুমন্ত- হৃদয়।

বাবা তুমি থাকবেনা যেদিন---
আজকের এই স্বপ্ন সেদিন বাস্তব হয়ে যাবে;
স্বপ্নের সে নিষ্ঠুর বাস্তবতা
কী করে নেবো বাবা মেনে?




ফারুক হোসেন
৬ জুলাই ২০০১, শুক্রবার ভোরবেলা।

মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০০৯

মরুর বুকে...




কিছু একটা লিখবো বলে ভাবতে ছিলাম অনেকদিন ধরে কিন্ত মনমানসিকতা আর সময় সুযোগ না হওয়াতে লেখা হয়ে ওঠেনি। বিদেশের অভিজ্ঞতা নিয়েই কিছু একটা লিখবো। গত বছর ঠিক এমন সময় দেশেছিলাম।
বৈশাখের আজ উনিশ তারিখ। বাহিরে প্রচন্ড গরম । বিদায় নিলাম দেশ থেকে জুনের এগারো তারিখে; একটি মর্মান্তিক দিনে। সুহিন এই দিনটিতেই চলেগিয়েছিলো চির দিনের জন্য।
এলাম দুবাই এর এক প্রান্তে জাবেল আলী ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এরিয়া দুই। একটি হিমায়ীত ফেক্টরীতে কাজ নিলাম। শহর থেকে প্রায় ৪০/৫০ কিলোমিটার দূরে এই জাবেল আলী এলাকা। খুব একা হয়ে পরলাম এখানে এসে।
যদিও প্রবাসে এটা নতুন অভিজ্ঞতা না আমার জন্য কিন্তু আশপাশে কাউকে পেলামনা প্রথম এসে। বাংলা বলার মতো একজনও মানুষ পেলামনা। প্রথম দিন এসে চাচাতো ভাই মনিরের সাথে ফোনে অনেক কান্নাকাটি করলাম।
ফেক্টরীর প্রায় পচানব্বই ভাগ লোকই ইন্ডিয়ার কেরালা প্রদেশের। মালায়লাম ভাষা তাদের মুখে। যাকে সহজে সহ্য করা যায়না। অনেক ভাষা শুনেছি কিন্তু এ ভাষার মতো এত কর্কশ এবং কঠিন ভাষা কোথাও শুনিনি। যখন ওরা কথা বলে মনে হয় হাতুরি দিয়ে লোহা পিটাচ্ছে। ঠিক কামার বাড়ির পাশ দিয়ে গেলে যে শব্দ পাওয়া যায় তেমনটি। মাথা ধরে ওদের পাশে একটু বসে থাকলে।
দুর্ভাগ্য বশত আমার থাকার জায়গা হলো ওদের সাথে। আরেকটি অভ্যেসের কথা তো বলাই হয়নি। মদ ওদের কাছে পানির মতো। ছুটির দিনগুলো ওদের কাছে ঈদের দিনের মতো উল্লাসের।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু করে মদের আসর চলতে থাকে পরের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত অত্যন- অতিষ্ঠের ভেতর পরে গেলাম। ওদিকে বাঙালী কাউকে পাচ্ছিনা,আরো বেশি দুঃখ আর কষ্ট পেতে লাগলাম। বড় কষ্ট হলো কারো সাথে এই দুঃখ কষ্টগুলো নিয়ে আলাপ করার কাউকে পাচ্ছিনা।
পাশেই একটি মসজিদ পেলাম। কাজের শেষে রুমে না বসে থেকে মসজিদে গিয়ে নামাজ পরে কারোর খোজ করতে থাকি। রাতের খাবার খেয়েও বিছানায় না গিয়ে হাটতে থাকি কারোর খোজে। এভাবে চলতে লাগলো প্রায় দশ বারো দিন। একদিন মসজিদে আসরের কি মাগরিবের নামাজ পড়তে যাই, তখন একজন পাকিস্তানী লোকের সাথে দেখা হলো। লোকটার নাম ছিলো সম্ভবত লোকমান । তার সাথে কথায় কথায় একজন বাংলাদেশী লোকের সন্ধ্যান পেলাম।
ওনি বললেন আমাদের ফ্যাক্টরীতে একজন বাংলাদেশী ছেলে আছে ওর নাম আনোয়ার। খুব ভালো ছেলে। আমি বললাম ওকে কখন পাওয়া যাবে। লোকটা বললো ও তো দিনের বেলায় কাজে থাকে আমি সন্ধ্যায় ওর রুমে গেলে আনোয়ারকে পেতে পারি।
প্রথম দিন আনোয়ারের খুজে এভিআই ফ্যাক্টরীতে গিয়ে ওকে পেলামনা। পরের দিন আবার গেলাম। একটি ছেলে দাড়িয়ে আছে গোসল করা জন্য। কাধে গামছা, হাতে গোসলের বালতি। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম এখানে আনোয়ার বরে কি কেউ আছে? ছেলেটা আমার প্রশ্নে উত্তর না গিয়ে
আমাকে সরাসরি ওর রুমে নিয়ে দুতলা খাটে নিয়ে বসালো।
আশ্চর্য হয়ে গেলাম ছেলেটির কান্ড দেখে। আমাকে জানে না চিনেনা অথচ এভাবে অপরিচিত একজন লোককে এভাবে সরাসরি রুমে নিয়ে গিয়ে খাটের উপর বসতে দিলো। আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। ছেলেটা বলতে লাগলো আমিই আনোয়ার, তবে আমাকে কিভাবে চিনলেন বা কিভাবে আমার কাছে এলেন।
আমি পাকিস্তানী লোকমান ভায়ের সব কথা আনোয়ারকে বললাম। আমি খুবই খুশি হলাম আনোয়ারকে পেয়ে কারন, কথা বলার মতো আমি কাউকে পাচ্ছিলাম না। তাছাড়া আনোয়ারের ব্যবহারে আরো বেশি খুশি হলাম। একদিনের পরিচয়ে আনোয়ার আমাকে ওর দুবাই আসার প্রেক্ষাপট এক এক করে বলে শুনালো।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা কমপ্লেক্সে আনোয়ারদের বাড়ি। দুবাই হয়ে লন্ডন যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বেড়িয়েছিলো সে কিন্তু আরবাবের শঠতায় এবং কনট্রাককৃত দালালের প্রতারনায় আজ ওকে দুবাইতেই কাজ করতে হচ্ছে, কঠুর প্ররিশ্রমের কাজ করতে হচ্ছে। এখন লন্ডনের আশাও ছেড়ে দিয়েছে আনোয়ার।
ওদের পরিবারের ছবির এ্যালবামটি বের করে আমাকে দেখাতে লাগে আনোয়ার।
আনোয়ারের সাথে সখ্যতা টিকে থাকে মাত্র এক সপ্তাহ। ভেবেছিলাম ওকে পেয়ে আমার একাকীত্বটা বুঝি লাগব হলো কিন্তু এক সপ্তাহ পর আবার আমি একা হয়ে গেলাম। আনোয়ার কাজের জায়গা পরিবর্তন করে দুবাই শহরে চলে যায়। যাবার বেলায় এক খানা বই আমাকে দিয়ে গেলো সে।
এই বই খানা আনোয়ারের এক দিদি উপঢৌকন দিয়েছিলো ও যখন দেশ ত্যাগ করে।
পথের মানুষটি আবার পথে নেমে এলাম। খুজতে লাগলাম অন্য কারো খুজে। রাতের খাবার খেয়ে এশার নামাজটা পড়েই একা একা পিচঢালা পথ ধরে হাটতে থাকি। এভাবে চলতে থাকলো বেশ কিছু দিন।
একদিন আসরের নাজাজ পড়তে পেট্রোল পাম্পস্থ মসজিদে এলাম। নামাজ শেষ করে ডানে-বামে সালাম ফিরালাম।এরপর মুনাজাত করে মসজিদের বাহিরে এলাম। সেদিন ছিলো শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। মসজিদ চত্বরে পেয়ে গেলাম ৫/৭ জন বাঙালী লোক। কথাবার্তায় নামধাম পরিচয় আদান প্রধান হয়ে গেলো। আমিও তাদের পেয়ে খুব খুশি হলাম। আবার মনে মনে ভাবলাম; খুশিটা টিকে থাকলে হয় কারন, এভাবে খুব খুশি হয়েছিলাম আনোয়াকে পেয়েও।
ই দলে ছিলো আজকের অতি পরিচিত রানা, আমির ভাই, মনির ভাই এবং আরো কয়েকজন যাদের নাম মনে পড়ছে না। ওরা সবাই সীট্রেল কোম্পানীর লোকজন।

এর কিছু দিন পর রাত তখন সাড়ে আটটা কি নয়টা হবে আমি একা একা হেটে হেটে আসতে ছিলাম ডাটকু থেকে টেকনোস্ট্রীল হয়ে গরিকার মোর দিয়ে ফ্রেশলিতে। রাস্তায় মনির ভাই এবং রাকিব ভায়ের সাথে দেখা হয় ওনারা বলেন, আমার মতো একা একা সময় কাটায় এমন আরেকজন লোক ঐখানে গরিকার সামনে একটা ওয়ারহাউজে সিকিউরিটিতে আছেন।
আমি আগ্রহ প্রকাশ করলাম লোকটার সাথে দেখা করতে। সেদিন না, পরে একদিন এলাম ঐ ওয়ারহাউজে।
পরিচয় হলো আজকের হামিদ ভায়ের সাথে। সেই থেকে পরিচয় এরপর এই ওয়ারহাউজটাকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলি এক বিশাল মিলন মেলা। হামিদ ভায়ের এই ওয়ারহাউজটাকে একখানা কফিহাউজ বললেও বেশি বলা হবেনা। দুবাইতে এই ওয়ারহাউজটা হয়ে গেলো একখানা স্মৃতিমাখা আড্ডাখানা।

খুব নীরব, একান- নির্জন এলাকাটাতে দিন দিন গড়ে তুললাম জীবন-,প্রাণবন- আড্ডাখানায়। আর এই আড্ডার কেন্দ্র বিন্দু হিসেবে পরিচয় পেলো হামিদ ভায়ের এই ওয়ারহাউজটা। দুইজন একাকীত্ব লোক দিনে দিনে খুজে বের করলাম অনেক বাংলাদেশী লোক যারা এই লাকাতেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে কিন্তু পরিচয় না থাকার কারনে কেউ কাউকে চিনতামনা বা যাতায়াত ছিলোনা একে অপরের মাঝে।
প্রথম বেশি আনাগোনা ঘটে সীট্রেল কোম্পানীর লোকজনের সাথে। এদের মধ্যে- মনির, রাকিব,রানা,আমির,সোজাউদ্দৌলা,ওদের যাতায়াতই বেশি হতো।
আমার রুমটা ছিলো একখানা মদের বার। বৃহঃবার এলেই শুরু হতো একটানা মদের আসর আর চলতো বৃহঃবার মধ্যরাত এবং পরের দিন নাস্তার পর থেকে সারাদিন এবং রাতের অর্ধেকাটা পর্যন্ত তাছাড়া অন্যান্য দিনও বাদ পড়তো না। আমি অতিষ্ঠ হয়ে পড়ি ওদের আচরণে। একটু বিশ্রামও নিতে পারতামনা শান্তিতে।
হামিদ ভায়ের সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে বৃহঃবার এলেই চলে আসতাম ওয়ারহাউজে। এভাবে চলতে থাকে আমাদের আড্ডা।
প্রথমে এই আড্ডায় আমরা চারজন ছিলাম নিয়মিত ভাবে মনির,রাকিব,হামিদ এবং আমি। একবার এক বৃহঃবার আমরা এই চারজন কথা বলতে বলতে ভাবলাম- আমরা তো প্রতি বৃহঃবার একত্রি হই আর এই সুবাধে জমে ওডে বিভিন্ন কথা নিয়ে আলাপ আলোচনা।
কিন্তু এই আলোচনায় আমরা ইসলামিক কিছু চিন্তা ভাবনা নিয়ে আসলে কেমন হয়। তাছাড়া আমরা সবাই মুসলমান আমাদের সকলের একটা মূল উদ্দেশ্য আছে এই পৃথিবীতে আসার এবং আমরা বিশ্বাস করি মৃত্যু, মৃত্যুর পর পরজগত।
আমরা এই দুনিয়াতে যেভাবে রোজগার করবো তা পাবো পরজগতে গিয়ে। এটা আমরা বিশ্বাস করি এবং মানি। এ সমস্ত চিন্তার মিলন ঘটানোর জন্য আমরা চারজন সিদ্ধান- নিলাম- এখন থেকে প্রতি বৃহঃবার একটি দিন আমরা আমাদের আড্ডার আসরে অন্যকোনো বাজে আলোচনা না করে যে যতটুকু জানি দ্বিনের আলোচনা করবো।
সিদ্ধান- মতো আমরা কাজ শুরু করলাম। এখন শুধু আমরা চারজনই নই এই আড্ডায় যোগ হতে লাগলো আরো অনেকেই। বৃহঃবার এলেই সব কাজ সেরে যত আগে এসে যোগ দেয়া যায় আড্ডায় এই চিন্তাই থাকতো।
এশার নামাজ পড়ে অথবা নামাজের আগে আলোজনা শুরু করে এক দেড় ঘন্টা ব্যাপী আমাদের আলোচনা চলতো। যেহেতো আমরা বিভিন্ন জন বিভিন্ন জায়গা থেকে সপ্তাহের একটি দিন একত্রিত হওয়ার সুযোগ পেতাম এবং একটি সুন্দর,সুষ্ঠু পরিশোধিত রাস্তার আলোচনায় যোগ দেয়ার হতো তাই এটাকে আমরা একটি ঈদের দিনের মতো আনন্দিত মনে হতো।
কেউ যাকে খালি মুখে না ফিরে যায় সেজন্য একটু তাবারতের ব্যবস্থাও করতাম আমি আর হামিদ ভাই। রান্না কাজটা আমি নিজে করতেই আনন্দবোধ করতাম বেশি। চলতে থাকলো আমাদের আড্ডা। বাড়তে লাগলো সদস্যবৃন্দ।
পার্শবর্তী কোম্পানীর লোক যাদের পেলাম তাদের মধ্যে- জিমামকো থেকে ফরিদ, জসীমউদ্দিন, শরিফ, সোহেল আর রুবেলের সাথে তখনও পরিচয় হয়নি। ফরিদদের সাথে পরিচয় হয় ইউসিসি ক্যাম্পে গিয়ে । একদিন বিকেলে ইউসিসিতে যাই হামিদ ভাই আর আমি তখন ফরিদের সাথে পরিচয় হয়।
ওরাও সাক্ষাত করতে এসেছিলো ইউসিসি ক্যাম্পের নতুন বাংলাদেশী লোকদের সাথে। ইউসিসি ক্যাম্প হামিদ ভায়ের ওয়ারহাউজ থেকে ৫/৭ মিনিটের রাস্তা। এখানে নতুন বাংলাদেশী লোজ আসে প্রায় ৩০/৪০ জন। কনস্ট্রাকশন কোম্পানীতে এসে সবাই মনোবল হারিয়ে নীরাশ হয়ে সময় কাটাতো।
উত্তপ্ত পরিবেশে সারাদিন কাজ করতে হয়। হার ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়। এক একটি ইটের ওজন ৪০ কেজি আর সারাটা দিন এরকম ইট টেনে নিতে হয় এক স্থান হতে অন্যস্থানে। প্রচন্ড গরম অসহ্য পরিশ্রম। দুবায়ের স্বপ্ন দেখে জন প্রতি এক একজন লোক দেড় থেকে দুই লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে এসেছে। কারো কারো আরো বেশি খরচ পড়েছে।
মান্নান ভাই, রুবেল ভাই মোজাম্মেল, সালাউদ্দিন, কারো মনে শান্তি নেই। সবার একই কথা কিভাবে তারা এত কষ্টের কাজ করবে তাছাড়া বেতন মাত্র ৫৪০/ দিরহাম।
রুবেল ভাই সাত বছর পুলিশের চাকরি করে এসেছে। সেখানেও অনেক কথা। সাত বছর পুলিশের চাকরি করলো দুনম্বর কাগজ দেখিয়ে।
অবেশেষে গৃহস্থের একদিন... চাকরি খুয়ালো। মাথায় ঢুকলো বিদেশের চিন্তা। চলতো তদবির।অবশেষে ইউসিসি কোম্পানী জুটলো চার আঙ্গুল কপালে। রোদে পুড়ে মাথার ঘাম পা পর্যন- নামার আগেই শুকিয়ে যায়। অসহ্য খাটুনি। এই যদি জানা থাকতো তা হলে কি আর মিথ্যে স্বপ্ন দেখতো দুবাইকে নিয়ে, রুবেল ভায়ের দীর্ঘ নিঃশ্বাসের সাথে সাথে কথা গুলো বের হয়।
আমরা সপ্তাহে দু একদিন গিয়ে ওনাদের পাশে গিয়ে দাড়াতাম। কিছু দিয়ে হয়তো সাহায্যে আসতে পারতামনা কিন্তু হৃদয়ের সহানুভূতিটুকু ভাগাভাগি করতাম। শুধু যে, দুঃখের কথাই হতো তা নয় মাঝে মাঝে হতো অনেক মজার মজার গল্প। হাজী খাটাসের গল্পের কথা মনে হলে এখনো হাসতে হাসতে দম বন্ধ হয়ে আসে।
শুনেছি পুলিশের অনেক দৌরাত্মের কথা। পুলিশ কিভাবে একজন সাধারন মানুষকে অযথা হয়রানি করতে পারে সে গল্পও শুনেছি রুবেল ভায়ের কাছ থেকে।
আমাদের বৃহঃবারের আড্ডায় দাওয়াত করতে হামিদ ভাই আর আমি বের হতাম আমাদের পার্শবর্তী এলাকায় যেখানে যেখানে বাঙালীদের ক্যাম্প আছে।
মাঝে মাঝে সাথে পেতাম রাকিব ও মনির ভাইকেও। সীট্রেলে আসে আরো কিছু নতুন বাঙালী লোক। হামিদ ভায়ের কাছে খবরটা শুনে তাদের সাথে দেখা করার জন্য খুব ব্যস্ত হয়ে আছি। তখন আমাদের ক্যাম্প ফ্রেশলির পেছনেই। তাই ডিউটি শেষ হলেই ওয়ারহাউজে চলে আসতাম যখন কখন।
এক সন্ধ্যায় সীট্রেলে এলাম নতুনদের সাথে দেখা করতে। ওরা প্রায় ১৮/১৯ জন লোক একসাথে আসে। এদের মধ্যে পান্নু, মোসতফা, নাহিদ, ওদের সাথে প্রথম পরিচয় হয়। এরপর আসা যাওয়া করতে করতে সবার সাথেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠলো।
পরিচয় হলো মার্বেল আর্টের ফারুকের সাথে। ওকে ডাকতাম মিতা বলে। কারন, আমার নামের সাথে ওর নাম মিলে যায়। ফারুক চট্রগ্রামের ছেলে। মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছে তাই নামাজ কালাম এবং সুরা কেরাতে সহি শুদ্ধতা আছে। আমাদের বৃহঃবারের আসরে ফারুককে নিয়মিত আসতে দাওয়াত দিতাম। কিন্তু সারা দিন কাজ করে সব সময় আসার সুযোগ হতো না বা ইচ্ছা থাকলেও আসতে পারতো না। তারপরও চেষ্টা থাকতো আসরে উপস্থিত হওয়ার জন্য। গড়ে ওঠলো দিন দিন মধুর সম্পর্ক।
এভাবে দেখতে দেখতে সময় গড়ালো অনেক।রমজান মাস এলো। আমার খাওয়া দাওয়ায় খুব অসুবিধা দেখা দিলো। ইফতারটা যদিও চলে কিন্তু সেহরিটা খাওয়ার উপযুক্ত না।
মালওয়ারি পাক, সাউথ ইন্ডিয়ান স্টাইলে রান্নাবান্না খাবারের গন্ধ শুকলেই খেতে ইচ্ছে করেনা। তাছাড়া রোজা রাখতে গেলে একটু আকটু ভালো মন্দ যদি না হয় তাহলে রোজা রাখার মতো মনে হয়না। আমি হামিদ ভায়ের ওয়ারহাউজে এসে ওঠলাম। রোজার পুরো মাসটা এখানেই সেহরি খাওয়ার ব্যবস্থা করলাম।
কোনো কোনো দিন রাতে এখানেই থেকে যেতাম আবার কোনো কোনো দিন ভোর রাতে ওঠে আসতাম সেহরির জন্য। দুধ কলা দিয়ে এক মুঠ ভাত খেতে না পারলে কিভাবে রোজা রাখা যায়। এভাবে রোজার মাসটা চলে গেলো। রোজার সময়েও আমাদের বৃহঃবারের আড্ডাটা টিকিয়ে রেখেছি। তখন আসরটা রাতে না করে ইফতারির আয়োজন করে দু চারটা কথাবার্তা হতো।
কোনো কোনো দিন ১০/১২ জন একত্রিত হয়ে আমরা ইফতার করতাম। বড় আনন্দের সাথে রোজার মাসটা কাটালাম। এখানে রোজার সময় প্রতিটি মসজিদে সরকারি এবং বেসরকারি ভাবে আয়োজন করা হয় ইফতারের ব্যবস্থা। পুরো মাস এই ইফতার পার্টির সু বন্দোবস্ত থাকবেই। আমাদের নিকটস্থ ডাকটু জামে মসজিদ। হামিদ ভায়ের ওয়ারহাউজ থেকে হেঁটে গেলে মসজিদে পৌঁছতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৫ মিনিট। রোজার সময় আমাদের অফিস আউয়ারও ছিলো বেলা ৩টা পর্যন্ত সুতরাং ছুটির পরই আমি চলে আসতাম ওয়ারহাউজে।

অসমাপ্ত.....

মৃত্যু





সেদিন ছিল বুধবার। প্রতিদিনের মতো সূর্য উদয়ের মধ্যদিয়ে দিনের সূচনা হলো। কিন্তু আজ অতো সকালে ঘুম থেকে ওঠা হয়নি। কখন যে পুবাকাশে সূর্যটা উকি দিয়ে সিনেটা টানটান করে দাড়িয়ে ওঠেছে তা আজ টেরই পায়নি রাহাত। আজকে কোনো টেনশন নেই। পড়া-শোনার ঝামেলা একদম নেই। কারণ, গতকাল শেষ হয়ে গেলো উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা । কিন্তু যখন ঘুম থেকে ওঠে রাহাত দেখতে পেলো সূর্যমামা তাকে ঘুমন্ত রেখে অনেক আগেই সে জেগে ওঠেছে তখন বড্ড খারাপ লাগলো তার। কারন, অনেক কাজ পড়ে আছে যে। রাহাত তাড়াহুড়া করে হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।এরপর অনেক দিন ধরে জমে থাকা টুকিটাকি কিছু কাজ সেরে নিলো সে। এ ভাবে দুপুর হয়ে এলো। আর মন বসছেনা ঘরে। যে করেই সোজা গিয়ে হাজির হলো সুহিনদের বাড়িতে।
রাহাত-সুহিনের সম্পর্ক মামা-ভাগ্নে, প্লাস পরম বন্ধুত্বের বন্ধন। মামা ভাগ্নে সম্পর্কটার চেয়ে বন্ধুত্ব সম্পর্কটাই গড়ে ওঠেছে চরমভাবে। মামার বয়স যখন চৌদ্দ কী পনেরো আর ভাগ্নের এগারো-বারো তখন থেকে তিল তিল করে গড়ে ওঠেছে এই হৃদ্যতা। ধীরে ধীরে দিন যাচ্ছিলো আর এসম্পর্কটাও যেনো আরো গভীর থেকে গভীরত্বে পৌচ্ছে যাচ্ছিলো।যে কোনো আনন্দ-উতসবে মামা-ভাগ্নের যুগল আনাটাগোনা ছিলো একটা কম্বলসারি বিষয়। পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছেও তাদের এই সম্পর্কটা মাঝে মাঝে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠতো।
সুহিন আজ দশম শ্রেণীর ছাত্র। আর মামার শেষ হলো ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা। এতোদিন মামা রাহাত পরীক্ষার পড়ার চাপে সময় পায়নি ভাগ্নের সাথে অন্তরঙ্গ আলাপের। প্রায় মাসখানিক সময়ের জমানো কথাগুলো স্তূপাকৃতি ধারণ করে আছে মামার হার্ডডিস্কে।
বর্ষা মৌসুম আসন্ন।মাঝখানে ছোট্ট নদীটি বাধ সেধেছে। বর্ষার জলে পূর্ন হয়ে বড়োসড়ো হতে শুরু করেছে নদীটি। ছোট একটি নৌকা বেয়ে রাহাত তার কাঙ্খিত ভাগ্নের সমীপে হাজির হলো। আজ টিফিন আওয়ারে বাড়িতে ফিরেছে সুহিন। তাই অমন সময় ওকে পাওয়া গেলো। বন্ধু-মামাটিকে দূর থেকে দেখেই মুসকি মুসকি হাসিতে স্বাগত জানালো সুহিন। এক পর্যায় কুশলাদি বিনিময়ের পর মামা-ভাগ্নে বেরিয়ে পড়লো।
আজ অন্যসব দিনের মতো সুহিনকে প্রাণ চাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছেনা। কিন্তু রাহাত সেদিকে তেমন একটা ভাবলো না। এতোদিন পেটে জমে থাকা কথার ঝুড়ি খুলতে লাগলো রাহাত। ওদিকে সুহিনের কোনো প্রকার মনোযোগ বা আগ্রহ দেখা যাচ্ছেনা রাহাতের কথার প্রতি। ও শুধু রাহাতের কথাগুলো শুনে যাচ্ছে কিন্তু তার কোনো উত্তর বা প্রত্যুত্তর করছেনা। শুধু হু,হ্যা করে যাচ্ছে মাঝে মধ্যে। কিন্তু রাহাত কিছুতেই জানতোনা যে, আগামী কয়েক ঘন্টার মধ্যে ঘটতে যাচ্ছে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এলো। খোলা আকাশের নীচে মেঠু পখ ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো ওরা। ডানে-বামে পাকা ধানের ক্ষেত। দুএক পষলা বৃষ্টি নেমে এলো আকাশ থেকে। বৃষ্টি থেকে রেহাই পেতে নিকটস্থ একটি বাতান ঘবে আশ্রয় নিলো মামা-ভাগ্নে। মামাটা গ্রাম্য লোকজ-সঙ্গীত-প্রিয় কিন্তু তার ভাগ্নেটা আবার এর উল্টোটা অর্থাত আধুনিক সংস্কার ব্যন্ড সঙ্গীতের ভক্ত। আশ্চর্য বিষয়, আজ ঘটলো এর বিপরীত ঘটনা। সুহিনের কণ্ঠ বেয়ে বেরোচ্ছে লোকজ সঙ্গীতের এক মরমী ব্যতীক্রমধর্মী সুর; যে সুর কখনোই সুহিনের কণ্ঠ থেকে বের হতে দেখেনি মামা রাহাত। গানটি ছিলো___ “পরের জায়গা পরের জমি ঘর বানাইয়া আমি রই, আমি তো ভাই ঘরের মালিক নই… ’’ মামা হু হু করে অট্ট হাসিতে ফেটে ফড়লো।
: কি রে তোর মাথা-মুন্ড ঠিক আছে তো? ওসব গান তোর গলায়..
হাসতে হাসতে কুটি কুটি।কিন্তু সুহিন এতটুকুও বিচলিত হলোনা বরঞ্চ তার সুরের মূর্ছনা আরো ছড়িয়ে গেলো।
ওরা বেরিয়ে এলো বাতান ঘর থেকে আবার খোলা আকাশের নীচে। নদীর তীর ধরে হাটতে হাটতে ভিড়ানো একটি নৌকায় ওঠে বসলো রাহাত আর সুহিন। পড়ন্ত বিকেল। সুহিনের মা নদীর ওধার থেকে ওকে ডাকছে। সে ডাক শুনে সুহিন বলল …
: যাইরে !
সুহিন চলে গেলো। রাহাত কিছুক্ষণ চেযে থেকে এক পর্যায় বাড়ি ফিরে এলো। কিছুই ভালো লাগছিলোনা। রাহাতদের বাড়ি থেকে একটু উকি দিলেই সুহিনদের বাড়ি দেখা যায় পরিস্কারভাবে। বাড়ি ফিরে রাহাত কোনো কাজেই মন বসাতে পারছিলোনা। হঠাত চোখ পড়লো সুহিনদের বাড়ির দিকে।কী ব্যাপার, এতো লোকের ছোটাছুটি কেনো সুহিনদের বাড়ির দিকে? আচমকা অস্থিরতা শুরু হলো রাহাতের মনেপ্রাণে। সে তাড়াতাড়ি করে ছুটতে লাগলো ওদিকে। দূর থেকে শুধু দলে দলে লোকজনের দৌড়াদৌড়ি দেখা যাচ্ছে। রাহাতে ওপারে পৌছতে না পৌতেই কে যেনো বলে ওঠলো__
: সুহিন নেই !
: না… !!! বলে চিতকার করে আকাশ বাতাস কাপিয়ে শত মানুষের ভীড় ঠেলে রাহাত সুহিনের পাশে গিয়ে দাড়ালো। এ কি দৃশ্য ! এ কি দৃশ্য সে চেয়ে চেয়ে দেখছে! না, অসম্ভব। এ- হতে পারে না…!
:তোমরা মিথ্যে বলছো, কে বলেছে সুহিন নেই, সুহিন মরে গেছে? তোমরা দেখো ও ঘুমিয়ে পড়েছে… ঘুমিয়ে…।
রাহাতের এই আবোলতাবোল কথাবার্তা কেউ শুনতে পায়না।
তার নৈ:শব্দ, বাকশূণ্য-অশ্রুহীন কান্না কেউ দেখতে পায়না। কীভাবে সে বিশ্বাস করে সুহিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। খানিকক্ষন পূর্বেও সে-যে সুহিনের খুব কাছাকাছি ছিলো।
: তাহলে কি ও রাহাতেকে ধোকা দিয়ে চলে গেলো, নাকি ও বলে কয়েই বিদায় নিয়েছিলো? রাহাতের মনে পড়ে যায় বাতান ঘরে বসে সুহিন যে গানটি তাকে শুনিয়েছিলো।
: তাহলে কি সুহিন মৃত্যুর আগে পূর্বাভাস পেয়েছিলো যে, এ পৃথিবী নশ্বর, অহেতুক, অযথা-নীরর্থক?
রাহাতের এই দগ্ধ প্রশ্নগুলো বাহাসে বাতাসে ঘুরপাক খেয়ে তারই কানের কাছে বাজতে থাকে বিকট আওয়াজে। তিল তিল করে গড়ে ওঠা হৃদ্যতা ঝড়ের বেগে ম্লান হয়ে গেলো নিমিষে। বিদ্যুত স্পৃষ্ট হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলো সুহিন। এতো গভীর ভালোবাসা, এতো নিবিড় অন্তরঙ্গতা, এতো হৃদয়স্পর্শী মায়ার বাধন-সব, সব উবে গেলো? অবোঝ, হতভাগা মামা কিছুই বুঝতে পারলোনা। এতকাছে থেকেও বুঝতে পারলোনা সে গানের মর্মার্থ কী ছিলো। এ যেনো তারই ব্যর্থতা, এ যেনো তার গ্লানী। রাহাতের এলোমেলো বিক্ষিপ্ত আহাজারি। কেউ শুনেনা তার আকুলাতা, তার আকুতি। কেউ দেখেনা তার হৃদয়ের উত্তপ্ত বহ্নিশিখা।
সমস্ত সুখ-বারতা বিধ্বস্ত হয়ে গেলো বিধির লীলায়, নিষ্ঠুরভাবে। পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য্য, সকল উতকৃষ্টতা রাহাতের দুচোখে অহেতুক, ছলনা আর প্রতারনা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায়না। কেউ যদি তাকে খুব করে ধরে জিজ্ঞেস করে…. পৃথিবীর সকল কথার সত্য কথাটি কি বা কোনটি। সে অকপটে উত্তর দেয়__ “মৃত্যৃ’’। তাকে যদি বলা হয়__ মায়াময় ছায়াঘেরা এ ধরিত্রীর কোন সৌন্দর্যটি তাকে সবচেছে বেশি মুগ্ধ করেছে, তার উত্তর__ “ কেনো মৃত্যু’’। তাকে ফের প্রশ্ন করা হয়, একটি শেষ উচ্চারণ করতে, তার কণ্ঠ নি:সৃত হয়ে যে উচ্চারণটি বাতাসে কম্পন সৃষ্টি করে সেটি হলো__ মৃত্যু!মৃত্যু!মৃত্যু!মৃত্যু!মৃত্যু!......!!!!

মো. ফারুক হোসেন
রূপনগর, ধামরাই, ঢাকা।

Relationship



I can not explain you what I think you but just I know and feel you very nearer some one. From the first day I got you as my younger brother and as a good friend also. So many words rose up about you in Freshly but never I listened to those.
Just turn you past, it was the first day I met you. I yet didn’t know your name. In the morning I went out for office. That time our accommodation was at Parco. I have come down from the 1st floor and attempted to take seat in Staff Bus then I saw you. You was put on white half shirt with black pant and it was a plastic envelop file on your hand. We have reached at office together by bus. On the way I got a message from my room mat Thomas. Thomas said- Faruque, this is Safeer, Mr. Santhosh (Production manager of Freshly) told you to take the boy as your assistant. I confirmed the message by telephonic conversation with Mr. Santhosh. I took you at the office and had a general brief regarding Daily Production Report (DPR). I think it was Thursday. Suddenly I got a phone from Ashish sir the Operation Manager of Freshly, he said, Faruque who told you to appoint the new boy in Production Office, send him to Production Line right now. I answered him, ok sir. Then I had to send you to the Production Line, one day you work in the Line with the workers. I heard that day you were weeping much after back to room. I was so sorry for this behavior but nothing was to do for me. After two days Sun day we came back office. Mr. Santhosh also came; I told him details about you. He said- don`t worry, just be cool and keep patience everything will become okay. I found one thing is very clear that in managements there are remains much more jealous mentalities. One person is not satisfied others. Without informing to Operation Manager why Production manager was appointed the boy in Production Office it was the fact. Several days you had to learn physical knowledge from the Lines. These times were very boring to you. After some days I took you back in Production Office. But after I got you I mean after introduction with you I encourage you every times. I don`t know why its feeling, I got you from the first day as my younger brother and so many time I told you- you are my brother, I shall train up you well so that you can be befit in future. I used to laugh and told- Safeer in this connection I may bit you some time, don`t mind yet? I satisfied showing your progress day by day. My faith was strengthening on you that one day you must successful either here or some where. Time was passing, in the mean time it was came my yearly vacation time. After 2/3 months I submit my leave application and it was accepted from 13th Sep/07 for 30 days leave. One by one I handed over my responsibilities to you. I knew the task is very hard for you but I had deep confidence on you. I departed and went away to home. Very often I was keeping touch with you. After 15 day suddenly you got chicken pox I think it was a bad luck for you. All the DPR became pending and thus daily reports pilled up and created a huge quantity backlog. My 30 days leave had completed and I came back at Freshly. I got approx 150 DPRs bunch to be entered and to be completed. Same time you also released from chicken pox. Another one and half month it was taken to come back at a normal position. Our relationship is still same and not less than increases day by day. Company`s yearly salary increment has done recently and I got 5oo/ AED what was not satisfaction by me. Anyway, I have to stay with this salary because of my family problem. Now you should get some increment as you have to do responsibilities more. Yours application is now hanging under the consideration of management. One time we did and shown much dedicational work for company`s bright vision but now a days we lost the energy to do same.
Safeer life is very complicated and we have to live the life doing hard struggle in evry moment. We find/see there is joy, sorrow, love, etc. actually this is the variety of life. If we would not get these different tests of our walking way may our life would appear meaningless. This human had done all the activities whatever wonderful and surprising things invented in the world. In human life we find different perception, different tests and various feelings. See, you are hanged on one woeful situation, is this out of our life? Of course not! Love is another one feeling of life. No one literary or wise man could not complete the explanation of Love. This is created by God only. Many expectations we make in mind and wonderful that every moment its created one by one itself but you know, some are died before born and some are refused, some on the waiting list and a very few are got successes. From your description I got clear knowledge that Saina and you were into deep love one time. You can not belief any thing without her. Several times I examined you on different angels and ways but each of these; whatever I got the feedback that you are always on same decision.
Love is this- whatever you think, whenever and wherever you move behind of all Saina`s face you can not avoid or automatically its come. In this case, God knows best ever you`ll get successful your dream or not. I wish and deeply pray to almighty Allah so that you can get her as your part of life.
You can agree or not but I guided and directed you those things what are good for me and should do for human life. I’m instructing you those things what are valuable and meaningful and should be belonging with our life may be it seams you bitter test but true. Professional experience is must valuable and acceptable to anywhere and in this connection I build up you. Today may be you will be not with me but this is true I’m training up you. This is not my proud but from the mind its come. You from Kerela and me from Bangla, there is a long distance and different between us and maybe never would be meet together after back at home each other. One day must come we’ll be not at a same platform then these moment and whatever having together today these only will be memorized in an occasion. We are working with cooperation and every day meeting, talking, chatting, very frankly and like a member of an undivided family. Our office room becomes a house of chambers. Sometime it’s a coffee shop sometime it becomes very important silent place, then only sound is coming from the mouse scroll and keyboards button. Entertainment also not out of our boundary, we do it sometime. Thus our friendship, understanding comes so closer to closest. But it didn’t come, over night; it came day by day. Not also present environment we talk about our home too. We knew each other our personal matter also.
Love is not sin or this is not denied by anyone. We fall into love. This feeling, this sense created by God very clearly. We feel it by heart what is invisible and can realize only. You know- man can live with this attraction and feeling; if this sense would absence beginning the creation of God, might not created this sun light, moons smiling, rivers current, trees greenness. So, our feeling is of course not wrong; definitely this is our right thirst. You fallen into love with Saina, can you deny ever? Never, though you normally can tell out but your heart never can say; if you really fallen into love.
Everything we can discuss today. Why, what is the meaning? Its meaning, we are very closest today. Actually this is called love. A little gift if given to some one with feeling of love you know; that would be the highest valuable thing and not can similar any thing even it is precious diamond too.

আমার প্রথম ব্লগ

কৃতজ্ঞতা স্মীকার করছি এই ব্লগটি তৈরিতে শামিম ভায়ের গুরুত্বপূনর তথ্যের জন্য। ফারুক ৯/৬/০৯