
কিছু একটা লিখবো বলে ভাবতে ছিলাম অনেকদিন ধরে কিন্ত মনমানসিকতা আর সময় সুযোগ না হওয়াতে লেখা হয়ে ওঠেনি। বিদেশের অভিজ্ঞতা নিয়েই কিছু একটা লিখবো। গত বছর ঠিক এমন সময় দেশেছিলাম।
বৈশাখের আজ উনিশ তারিখ। বাহিরে প্রচন্ড গরম । বিদায় নিলাম দেশ থেকে জুনের এগারো তারিখে; একটি মর্মান্তিক দিনে। সুহিন এই দিনটিতেই চলেগিয়েছিলো চির দিনের জন্য।
এলাম দুবাই এর এক প্রান্তে জাবেল আলী ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এরিয়া দুই। একটি হিমায়ীত ফেক্টরীতে কাজ নিলাম। শহর থেকে প্রায় ৪০/৫০ কিলোমিটার দূরে এই জাবেল আলী এলাকা। খুব একা হয়ে পরলাম এখানে এসে।
যদিও প্রবাসে এটা নতুন অভিজ্ঞতা না আমার জন্য কিন্তু আশপাশে কাউকে পেলামনা প্রথম এসে। বাংলা বলার মতো একজনও মানুষ পেলামনা। প্রথম দিন এসে চাচাতো ভাই মনিরের সাথে ফোনে অনেক কান্নাকাটি করলাম।
ফেক্টরীর প্রায় পচানব্বই ভাগ লোকই ইন্ডিয়ার কেরালা প্রদেশের। মালায়লাম ভাষা তাদের মুখে। যাকে সহজে সহ্য করা যায়না। অনেক ভাষা শুনেছি কিন্তু এ ভাষার মতো এত কর্কশ এবং কঠিন ভাষা কোথাও শুনিনি। যখন ওরা কথা বলে মনে হয় হাতুরি দিয়ে লোহা পিটাচ্ছে। ঠিক কামার বাড়ির পাশ দিয়ে গেলে যে শব্দ পাওয়া যায় তেমনটি। মাথা ধরে ওদের পাশে একটু বসে থাকলে।
দুর্ভাগ্য বশত আমার থাকার জায়গা হলো ওদের সাথে। আরেকটি অভ্যেসের কথা তো বলাই হয়নি। মদ ওদের কাছে পানির মতো। ছুটির দিনগুলো ওদের কাছে ঈদের দিনের মতো উল্লাসের।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু করে মদের আসর চলতে থাকে পরের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত অত্যন- অতিষ্ঠের ভেতর পরে গেলাম। ওদিকে বাঙালী কাউকে পাচ্ছিনা,আরো বেশি দুঃখ আর কষ্ট পেতে লাগলাম। বড় কষ্ট হলো কারো সাথে এই দুঃখ কষ্টগুলো নিয়ে আলাপ করার কাউকে পাচ্ছিনা।
পাশেই একটি মসজিদ পেলাম। কাজের শেষে রুমে না বসে থেকে মসজিদে গিয়ে নামাজ পরে কারোর খোজ করতে থাকি। রাতের খাবার খেয়েও বিছানায় না গিয়ে হাটতে থাকি কারোর খোজে। এভাবে চলতে লাগলো প্রায় দশ বারো দিন। একদিন মসজিদে আসরের কি মাগরিবের নামাজ পড়তে যাই, তখন একজন পাকিস্তানী লোকের সাথে দেখা হলো। লোকটার নাম ছিলো সম্ভবত লোকমান । তার সাথে কথায় কথায় একজন বাংলাদেশী লোকের সন্ধ্যান পেলাম।
ওনি বললেন আমাদের ফ্যাক্টরীতে একজন বাংলাদেশী ছেলে আছে ওর নাম আনোয়ার। খুব ভালো ছেলে। আমি বললাম ওকে কখন পাওয়া যাবে। লোকটা বললো ও তো দিনের বেলায় কাজে থাকে আমি সন্ধ্যায় ওর রুমে গেলে আনোয়ারকে পেতে পারি।
প্রথম দিন আনোয়ারের খুজে এভিআই ফ্যাক্টরীতে গিয়ে ওকে পেলামনা। পরের দিন আবার গেলাম। একটি ছেলে দাড়িয়ে আছে গোসল করা জন্য। কাধে গামছা, হাতে গোসলের বালতি। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম এখানে আনোয়ার বরে কি কেউ আছে? ছেলেটা আমার প্রশ্নে উত্তর না গিয়ে
আমাকে সরাসরি ওর রুমে নিয়ে দুতলা খাটে নিয়ে বসালো।
আশ্চর্য হয়ে গেলাম ছেলেটির কান্ড দেখে। আমাকে জানে না চিনেনা অথচ এভাবে অপরিচিত একজন লোককে এভাবে সরাসরি রুমে নিয়ে গিয়ে খাটের উপর বসতে দিলো। আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। ছেলেটা বলতে লাগলো আমিই আনোয়ার, তবে আমাকে কিভাবে চিনলেন বা কিভাবে আমার কাছে এলেন।
আমি পাকিস্তানী লোকমান ভায়ের সব কথা আনোয়ারকে বললাম। আমি খুবই খুশি হলাম আনোয়ারকে পেয়ে কারন, কথা বলার মতো আমি কাউকে পাচ্ছিলাম না। তাছাড়া আনোয়ারের ব্যবহারে আরো বেশি খুশি হলাম। একদিনের পরিচয়ে আনোয়ার আমাকে ওর দুবাই আসার প্রেক্ষাপট এক এক করে বলে শুনালো।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা কমপ্লেক্সে আনোয়ারদের বাড়ি। দুবাই হয়ে লন্ডন যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বেড়িয়েছিলো সে কিন্তু আরবাবের শঠতায় এবং কনট্রাককৃত দালালের প্রতারনায় আজ ওকে দুবাইতেই কাজ করতে হচ্ছে, কঠুর প্ররিশ্রমের কাজ করতে হচ্ছে। এখন লন্ডনের আশাও ছেড়ে দিয়েছে আনোয়ার।
ওদের পরিবারের ছবির এ্যালবামটি বের করে আমাকে দেখাতে লাগে আনোয়ার।
আনোয়ারের সাথে সখ্যতা টিকে থাকে মাত্র এক সপ্তাহ। ভেবেছিলাম ওকে পেয়ে আমার একাকীত্বটা বুঝি লাগব হলো কিন্তু এক সপ্তাহ পর আবার আমি একা হয়ে গেলাম। আনোয়ার কাজের জায়গা পরিবর্তন করে দুবাই শহরে চলে যায়। যাবার বেলায় এক খানা বই আমাকে দিয়ে গেলো সে।
আনোয়ারের সাথে সখ্যতা টিকে থাকে মাত্র এক সপ্তাহ। ভেবেছিলাম ওকে পেয়ে আমার একাকীত্বটা বুঝি লাগব হলো কিন্তু এক সপ্তাহ পর আবার আমি একা হয়ে গেলাম। আনোয়ার কাজের জায়গা পরিবর্তন করে দুবাই শহরে চলে যায়। যাবার বেলায় এক খানা বই আমাকে দিয়ে গেলো সে।
এই বই খানা আনোয়ারের এক দিদি উপঢৌকন দিয়েছিলো ও যখন দেশ ত্যাগ করে।
পথের মানুষটি আবার পথে নেমে এলাম। খুজতে লাগলাম অন্য কারো খুজে। রাতের খাবার খেয়ে এশার নামাজটা পড়েই একা একা পিচঢালা পথ ধরে হাটতে থাকি। এভাবে চলতে থাকলো বেশ কিছু দিন।
পথের মানুষটি আবার পথে নেমে এলাম। খুজতে লাগলাম অন্য কারো খুজে। রাতের খাবার খেয়ে এশার নামাজটা পড়েই একা একা পিচঢালা পথ ধরে হাটতে থাকি। এভাবে চলতে থাকলো বেশ কিছু দিন।
একদিন আসরের নাজাজ পড়তে পেট্রোল পাম্পস্থ মসজিদে এলাম। নামাজ শেষ করে ডানে-বামে সালাম ফিরালাম।এরপর মুনাজাত করে মসজিদের বাহিরে এলাম। সেদিন ছিলো শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। মসজিদ চত্বরে পেয়ে গেলাম ৫/৭ জন বাঙালী লোক। কথাবার্তায় নামধাম পরিচয় আদান প্রধান হয়ে গেলো। আমিও তাদের পেয়ে খুব খুশি হলাম। আবার মনে মনে ভাবলাম; খুশিটা টিকে থাকলে হয় কারন, এভাবে খুব খুশি হয়েছিলাম আনোয়াকে পেয়েও।
এর কিছু দিন পর রাত তখন সাড়ে আটটা কি নয়টা হবে আমি একা একা হেটে হেটে আসতে ছিলাম ডাটকু থেকে টেকনোস্ট্রীল হয়ে গরিকার মোর দিয়ে ফ্রেশলিতে। রাস্তায় মনির ভাই এবং রাকিব ভায়ের সাথে দেখা হয় ওনারা বলেন, আমার মতো একা একা সময় কাটায় এমন আরেকজন লোক ঐখানে গরিকার সামনে একটা ওয়ারহাউজে সিকিউরিটিতে আছেন।
আমি আগ্রহ প্রকাশ করলাম লোকটার সাথে দেখা করতে। সেদিন না, পরে একদিন এলাম ঐ ওয়ারহাউজে।
পরিচয় হলো আজকের হামিদ ভায়ের সাথে। সেই থেকে পরিচয় এরপর এই ওয়ারহাউজটাকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলি এক বিশাল মিলন মেলা। হামিদ ভায়ের এই ওয়ারহাউজটাকে একখানা কফিহাউজ বললেও বেশি বলা হবেনা। দুবাইতে এই ওয়ারহাউজটা হয়ে গেলো একখানা স্মৃতিমাখা আড্ডাখানা।
খুব নীরব, একান- নির্জন এলাকাটাতে দিন দিন গড়ে তুললাম জীবন-,প্রাণবন- আড্ডাখানায়। আর এই আড্ডার কেন্দ্র বিন্দু হিসেবে পরিচয় পেলো হামিদ ভায়ের এই ওয়ারহাউজটা। দুইজন একাকীত্ব লোক দিনে দিনে খুজে বের করলাম অনেক বাংলাদেশী লোক যারা এই লাকাতেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে কিন্তু পরিচয় না থাকার কারনে কেউ কাউকে চিনতামনা বা যাতায়াত ছিলোনা একে অপরের মাঝে।
প্রথম বেশি আনাগোনা ঘটে সীট্রেল কোম্পানীর লোকজনের সাথে। এদের মধ্যে- মনির, রাকিব,রানা,আমির,সোজাউদ্দৌলা,ওদের যাতায়াতই বেশি হতো।
আমার রুমটা ছিলো একখানা মদের বার। বৃহঃবার এলেই শুরু হতো একটানা মদের আসর আর চলতো বৃহঃবার মধ্যরাত এবং পরের দিন নাস্তার পর থেকে সারাদিন এবং রাতের অর্ধেকাটা পর্যন্ত তাছাড়া অন্যান্য দিনও বাদ পড়তো না। আমি অতিষ্ঠ হয়ে পড়ি ওদের আচরণে। একটু বিশ্রামও নিতে পারতামনা শান্তিতে।
হামিদ ভায়ের সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে বৃহঃবার এলেই চলে আসতাম ওয়ারহাউজে। এভাবে চলতে থাকে আমাদের আড্ডা।
প্রথমে এই আড্ডায় আমরা চারজন ছিলাম নিয়মিত ভাবে মনির,রাকিব,হামিদ এবং আমি। একবার এক বৃহঃবার আমরা এই চারজন কথা বলতে বলতে ভাবলাম- আমরা তো প্রতি বৃহঃবার একত্রি হই আর এই সুবাধে জমে ওডে বিভিন্ন কথা নিয়ে আলাপ আলোচনা।
কিন্তু এই আলোচনায় আমরা ইসলামিক কিছু চিন্তা ভাবনা নিয়ে আসলে কেমন হয়। তাছাড়া আমরা সবাই মুসলমান আমাদের সকলের একটা মূল উদ্দেশ্য আছে এই পৃথিবীতে আসার এবং আমরা বিশ্বাস করি মৃত্যু, মৃত্যুর পর পরজগত।
আমরা এই দুনিয়াতে যেভাবে রোজগার করবো তা পাবো পরজগতে গিয়ে। এটা আমরা বিশ্বাস করি এবং মানি। এ সমস্ত চিন্তার মিলন ঘটানোর জন্য আমরা চারজন সিদ্ধান- নিলাম- এখন থেকে প্রতি বৃহঃবার একটি দিন আমরা আমাদের আড্ডার আসরে অন্যকোনো বাজে আলোচনা না করে যে যতটুকু জানি দ্বিনের আলোচনা করবো।
সিদ্ধান- মতো আমরা কাজ শুরু করলাম। এখন শুধু আমরা চারজনই নই এই আড্ডায় যোগ হতে লাগলো আরো অনেকেই। বৃহঃবার এলেই সব কাজ সেরে যত আগে এসে যোগ দেয়া যায় আড্ডায় এই চিন্তাই থাকতো।
এশার নামাজ পড়ে অথবা নামাজের আগে আলোজনা শুরু করে এক দেড় ঘন্টা ব্যাপী আমাদের আলোচনা চলতো। যেহেতো আমরা বিভিন্ন জন বিভিন্ন জায়গা থেকে সপ্তাহের একটি দিন একত্রিত হওয়ার সুযোগ পেতাম এবং একটি সুন্দর,সুষ্ঠু পরিশোধিত রাস্তার আলোচনায় যোগ দেয়ার হতো তাই এটাকে আমরা একটি ঈদের দিনের মতো আনন্দিত মনে হতো।
কেউ যাকে খালি মুখে না ফিরে যায় সেজন্য একটু তাবারতের ব্যবস্থাও করতাম আমি আর হামিদ ভাই। রান্না কাজটা আমি নিজে করতেই আনন্দবোধ করতাম বেশি। চলতে থাকলো আমাদের আড্ডা। বাড়তে লাগলো সদস্যবৃন্দ।
পার্শবর্তী কোম্পানীর লোক যাদের পেলাম তাদের মধ্যে- জিমামকো থেকে ফরিদ, জসীমউদ্দিন, শরিফ, সোহেল আর রুবেলের সাথে তখনও পরিচয় হয়নি। ফরিদদের সাথে পরিচয় হয় ইউসিসি ক্যাম্পে গিয়ে । একদিন বিকেলে ইউসিসিতে যাই হামিদ ভাই আর আমি তখন ফরিদের সাথে পরিচয় হয়।
ওরাও সাক্ষাত করতে এসেছিলো ইউসিসি ক্যাম্পের নতুন বাংলাদেশী লোকদের সাথে। ইউসিসি ক্যাম্প হামিদ ভায়ের ওয়ারহাউজ থেকে ৫/৭ মিনিটের রাস্তা। এখানে নতুন বাংলাদেশী লোজ আসে প্রায় ৩০/৪০ জন। কনস্ট্রাকশন কোম্পানীতে এসে সবাই মনোবল হারিয়ে নীরাশ হয়ে সময় কাটাতো।
উত্তপ্ত পরিবেশে সারাদিন কাজ করতে হয়। হার ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়। এক একটি ইটের ওজন ৪০ কেজি আর সারাটা দিন এরকম ইট টেনে নিতে হয় এক স্থান হতে অন্যস্থানে। প্রচন্ড গরম অসহ্য পরিশ্রম। দুবায়ের স্বপ্ন দেখে জন প্রতি এক একজন লোক দেড় থেকে দুই লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে এসেছে। কারো কারো আরো বেশি খরচ পড়েছে।
মান্নান ভাই, রুবেল ভাই মোজাম্মেল, সালাউদ্দিন, কারো মনে শান্তি নেই। সবার একই কথা কিভাবে তারা এত কষ্টের কাজ করবে তাছাড়া বেতন মাত্র ৫৪০/ দিরহাম।
রুবেল ভাই সাত বছর পুলিশের চাকরি করে এসেছে। সেখানেও অনেক কথা। সাত বছর পুলিশের চাকরি করলো দুনম্বর কাগজ দেখিয়ে।
অবেশেষে গৃহস্থের একদিন... চাকরি খুয়ালো। মাথায় ঢুকলো বিদেশের চিন্তা। চলতো তদবির।অবশেষে ইউসিসি কোম্পানী জুটলো চার আঙ্গুল কপালে। রোদে পুড়ে মাথার ঘাম পা পর্যন- নামার আগেই শুকিয়ে যায়। অসহ্য খাটুনি। এই যদি জানা থাকতো তা হলে কি আর মিথ্যে স্বপ্ন দেখতো দুবাইকে নিয়ে, রুবেল ভায়ের দীর্ঘ নিঃশ্বাসের সাথে সাথে কথা গুলো বের হয়।
আমরা সপ্তাহে দু একদিন গিয়ে ওনাদের পাশে গিয়ে দাড়াতাম। কিছু দিয়ে হয়তো সাহায্যে আসতে পারতামনা কিন্তু হৃদয়ের সহানুভূতিটুকু ভাগাভাগি করতাম। শুধু যে, দুঃখের কথাই হতো তা নয় মাঝে মাঝে হতো অনেক মজার মজার গল্প। হাজী খাটাসের গল্পের কথা মনে হলে এখনো হাসতে হাসতে দম বন্ধ হয়ে আসে।
শুনেছি পুলিশের অনেক দৌরাত্মের কথা। পুলিশ কিভাবে একজন সাধারন মানুষকে অযথা হয়রানি করতে পারে সে গল্পও শুনেছি রুবেল ভায়ের কাছ থেকে।
আমাদের বৃহঃবারের আড্ডায় দাওয়াত করতে হামিদ ভাই আর আমি বের হতাম আমাদের পার্শবর্তী এলাকায় যেখানে যেখানে বাঙালীদের ক্যাম্প আছে।
আমাদের বৃহঃবারের আড্ডায় দাওয়াত করতে হামিদ ভাই আর আমি বের হতাম আমাদের পার্শবর্তী এলাকায় যেখানে যেখানে বাঙালীদের ক্যাম্প আছে।
মাঝে মাঝে সাথে পেতাম রাকিব ও মনির ভাইকেও। সীট্রেলে আসে আরো কিছু নতুন বাঙালী লোক। হামিদ ভায়ের কাছে খবরটা শুনে তাদের সাথে দেখা করার জন্য খুব ব্যস্ত হয়ে আছি। তখন আমাদের ক্যাম্প ফ্রেশলির পেছনেই। তাই ডিউটি শেষ হলেই ওয়ারহাউজে চলে আসতাম যখন কখন।
এক সন্ধ্যায় সীট্রেলে এলাম নতুনদের সাথে দেখা করতে। ওরা প্রায় ১৮/১৯ জন লোক একসাথে আসে। এদের মধ্যে পান্নু, মোসতফা, নাহিদ, ওদের সাথে প্রথম পরিচয় হয়। এরপর আসা যাওয়া করতে করতে সবার সাথেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠলো।
পরিচয় হলো মার্বেল আর্টের ফারুকের সাথে। ওকে ডাকতাম মিতা বলে। কারন, আমার নামের সাথে ওর নাম মিলে যায়। ফারুক চট্রগ্রামের ছেলে। মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছে তাই নামাজ কালাম এবং সুরা কেরাতে সহি শুদ্ধতা আছে। আমাদের বৃহঃবারের আসরে ফারুককে নিয়মিত আসতে দাওয়াত দিতাম। কিন্তু সারা দিন কাজ করে সব সময় আসার সুযোগ হতো না বা ইচ্ছা থাকলেও আসতে পারতো না। তারপরও চেষ্টা থাকতো আসরে উপস্থিত হওয়ার জন্য। গড়ে ওঠলো দিন দিন মধুর সম্পর্ক।
এভাবে দেখতে দেখতে সময় গড়ালো অনেক।রমজান মাস এলো। আমার খাওয়া দাওয়ায় খুব অসুবিধা দেখা দিলো। ইফতারটা যদিও চলে কিন্তু সেহরিটা খাওয়ার উপযুক্ত না।
মালওয়ারি পাক, সাউথ ইন্ডিয়ান স্টাইলে রান্নাবান্না খাবারের গন্ধ শুকলেই খেতে ইচ্ছে করেনা। তাছাড়া রোজা রাখতে গেলে একটু আকটু ভালো মন্দ যদি না হয় তাহলে রোজা রাখার মতো মনে হয়না। আমি হামিদ ভায়ের ওয়ারহাউজে এসে ওঠলাম। রোজার পুরো মাসটা এখানেই সেহরি খাওয়ার ব্যবস্থা করলাম।
কোনো কোনো দিন রাতে এখানেই থেকে যেতাম আবার কোনো কোনো দিন ভোর রাতে ওঠে আসতাম সেহরির জন্য। দুধ কলা দিয়ে এক মুঠ ভাত খেতে না পারলে কিভাবে রোজা রাখা যায়। এভাবে রোজার মাসটা চলে গেলো। রোজার সময়েও আমাদের বৃহঃবারের আড্ডাটা টিকিয়ে রেখেছি। তখন আসরটা রাতে না করে ইফতারির আয়োজন করে দু চারটা কথাবার্তা হতো।
কোনো কোনো দিন ১০/১২ জন একত্রিত হয়ে আমরা ইফতার করতাম। বড় আনন্দের সাথে রোজার মাসটা কাটালাম। এখানে রোজার সময় প্রতিটি মসজিদে সরকারি এবং বেসরকারি ভাবে আয়োজন করা হয় ইফতারের ব্যবস্থা। পুরো মাস এই ইফতার পার্টির সু বন্দোবস্ত থাকবেই। আমাদের নিকটস্থ ডাকটু জামে মসজিদ। হামিদ ভায়ের ওয়ারহাউজ থেকে হেঁটে গেলে মসজিদে পৌঁছতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৫ মিনিট। রোজার সময় আমাদের অফিস আউয়ারও ছিলো বেলা ৩টা পর্যন্ত সুতরাং ছুটির পরই আমি চলে আসতাম ওয়ারহাউজে।
অসমাপ্ত.....
অসমাপ্ত.....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন