এক.
আরিফ,
শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০০৫ বিকেল ৫:২০ মিনিট (স্থানীয় সময়)
তারপর তোরা কেমন আছিস? আশা করি বাড়ির সবাইকে নিয়ে ভালই আছিস। কী যে অসম্ভব ভাল লেগেছিল যখন আমরা প্রথম ইনটারনেটের মাধ্যমে কথা বললাম। আমার খুবই ভাল লেগেছে। যাহোক এখন থেকে আমরা নিয়মিত ভাবে এভাবে ভয়েজ চ্যাট করবো। আর যখনই হাতে সময় পাবো তখনি দু এক লাইন লিখে এভাবে এ্যাটাচম্যান্ট ফাইল করে পাঠাবো।
এবার অন্য কথায় আসি--
আরিফ, আমি যখন ভিজিট ভিসায় ছিলাম তখন প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর আমাকে ভিসা চেঞ্জ করার জন্য অন্য একটা দেশে যেতে হতো। এটা এ দেশের নিয়ম। আমি এই সুযোগে একবার গিয়েছি ইরানের কিশে। এবং ৩ বার গিয়েছি ওমানের মাস্কাটে। বিমান ভ্রমণের ভাল অজ্ঞিতা হয়েছে বলতে পারিস। যগিও এই ভ্রমণ ছিল ইচ্ছার বাহিরে। যা হোক অনেক প্রতিক্ষার পর গত ১৬ এপ্রিল সর্বশেষ ভিসাটি চেঞ্জ করে এ্যামপ্লয়মেন্ট ভিসা পেলাম। এখন দুবাইকে এ্যামপ্লয়মেন্ট ভিসা পাওয়া ট্রাফ ব্যাপার হয়ে দেখা দিয়েছে।
আমার ডিইটিটা হলো স্টোরে অর্থাৎ হোটেলের যত ধরনের মালামাল লাগে তা আমাকেই তদারকি করতে হয়। এখানে আছে খাবার দ্রব্য সামগ্রী, বিভিন্ন রকম মালামাল এখানে আছে। এই ধর, বড় একটা মদি দোকানে যা যা পাওয়া যায় আমাদের স্টোরেও সেরকম মালামাল আছে। এরপর আছে বড় একটা স্টোর যেখানে আছে শুধু মদ আর মদ। সব গুলোই বিদেশী দামি দামি মদ। সব চেয়ে বেশী দামের মদের নামটি হলো ”জনি ওয়াকার ব্লো লেবেল” এর দাম হলো ৭৬৭.৫২ দিরহাম অর্থাৎ ১৩,০৪৭.৮৪ টাকা। কথা গুলো বলছি কিন্তু জাস্ট অজ্ঞিতার জন্য। আসলে বড় বড় হোটেলে এদেশে মদের আড্ডা বলা যায়। শুধু দুবাইতেই নয় সারা দুনিয়া জুড়েই এটা লক্ষ করা যায়। আমাদের স্টোরে আসে প্রায় ৩০০ প্রকারের মদ। এই সমস্ত কিছুর দায়িত্ব আমাকেই করতে হয়। প্রতি মাসের শেষে যাচাই করে দেখতে হয় কত গুলো মালামাল এলো আবার কত গুলো মালা মাল কোথায় ইসু করলাম। সব কিছুর জবাবদিহিতা আমাকেই করতে হয়। আগামী ৩১ এপ্রিল ইনভেন্ট্রী অর্থাৎ যাচাই করে দেখার দিন। এ দিন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সমস্ত স্টকের চেক করা হবে। প্রথমে খুব একটা হিমশিম খেয়ে যেতাম এত বড় দায়িত্বের কাজগুলো করতে কিন্তু এখন ইনশাআল্লাহ কোন সমস্যা হয়না।
আমার কম্পিউটারে ইন্টারনেট আছে কিন্তু অফিসে বসে বসে অফিসিয়াল কাজ ছাড়া অন্যকোন কাজ করার অনুমতি আমাদের নেই। সুতরাং চ্যাটিং করতে গেছে লাগবে হেডফোন। এর চেয়ে পাশেই আছে ইন্টারনেট ক্যাফে ওখানে গিয়ে মাত্র ৩ দিরহামের বিনিময়ে প্রতি ঘন্টা ব্রাউজ করা যায়।
গত কাল রুই মাছ রান্না করেছিলাম। এর আগের দিন রান্না করেছিলাম গরুর মাংস। মাংশটা তাজা পাওয়া গেলেও মাছ তো আর তাজা পাওয়া যায়না। এখানে প্রতি কিলো রুই মাছের দাম ৬ দিরহাম। সাকশব্জি তাজা পাওয়া যায় কিন্তু দাম বেশি। আমার সমস্যা হলো হোটেলের রান্না খেতে পারিনা।
আজ থাক আবার কথা হবে। বাড়ির সবাইকে নিয়ে ভাল থাক।
আরিফ এই মদ টদ নিয়ে বাড়িতে আলাপ করিসটা।
ফারুক।
দুই.
৪ এপ্রলি,০৫
আজকরে খবর
আরিফ আজ আবার ফিরে এলাম। আজকের চিঠিটি কয়েকজনের নামে লিখছি- সময় সুযোগে খবর গুলো পৌছে দিবি । কি ভাবে শুরু করি ভাবছি। হ্যাঁ, আমি আসার পর যাদের কাছে চিঠি দিয়ে কোন উত্তর পাইনি তারা হলো----
১. সাজেদুল হাসান চিশতি, একজন আন্তরিক বন্ধু, যার কথা অনেক বার মনে পড়ে।
২. মাধব গোস্বামী, বর্তমানে পড়াশোনা করছে টাঙ্গাইলের করোটিয়ায় ওদের বাড়ি দধিঘাটা। এও অন্তরঙ্গ একজন।
৩. সুব্রত, ছোট ভাই প্লাস ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।
৪. আমাদের পংকু বিয়াই, যার সাথে অনেক অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটিয়েছি অনেকবার
৫. ভাতিজা মশিউর
৬. ভৈরবের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম উরফে রাজিব।
৭. আজ এখানে কাল ওখানে সে হলো চিত্তদার ছোট ভাই স্বপন সরকার,
৮. ভাতিজি বিলকিস আক্তার।
উপরে উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গ কোন চিঠির উত্তর আজ পর্যন্ত দেয়নি। তাদের উপর আমার দুঃখ তারা এভাবে কেন ভুলে গেলো নিরবে? তাদের কোন খোজখবর থাকলে এবং পারলে জানাবি পরবর্তী মেইলে।
বাড়ির সবার খবর এক এক করে জানাবি ভাল লাগবে শুনে। আমার এখন কিছুতেই মন টিকছেনা প্রবাসে। আজ ৪১৭ দিন হলো বাড়ি ছেড়েছি কতকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে এতদিনে তাই নারে? শুনেছি ওপারের শইন্তা এক্সিডেন্ট হয়ে মারা গেছে। জানিনা আরো কত কী হবে ।
ইন্টারনেট সম্বন্ধে একটি বয়ের নাম বলছি পারলে বইটা কিনে পড়তে পারিস, অনেক কিছু জানতে পারবি।
নামঃ মাস্টারিং ইন্টারনেট
লিখেছেনঃ মোঃ ওমর ফয়সাল
৬০৮ পৃষ্ঠার বইটির দাম ১৮০ টাকা।
সিডিসহ এরদাম ২৩০টাকা।
প্রকাশ করেছেনঃ জ্ঞানকোষ প্রকাশনী
ফোন: ৭১১৮৪৪৩ , ঢাকা।
আজ রাখছি আবার কথা হবে।
আল্লাহ হাফজে
ফারুক, দুবাই।
তিন.
৩ মে, ২০০৫
প্রিয় ভাতিজা আরিফ,
খুবই ভাল লাগছে এই যোগাযোগ স্হাপন করতে পেরে। সকালে তোর সাথে কথা বললাম। এর আগে কাল তোর পাঠানো বাংলা মেইল পেলাম, এটা খুবই ভাল যোগাযোগ মাধ্যম। আমি সিদ্ধান- নিয়েছি আমরা মাসে দুবার ভয়েজ চ্যাট করবো ইন্টারনেটের মাধ্যমে । আর আমি মাঝে মাঝেই মেইল পাঠাবো তুই যখনই সময় সুযোগ পাস তখন চিঠি গুলো পড়িস। আর জানতে চাওয়া প্রশ্নের উত্তর মনে করে দিস।
আর বিশেষ কথা হলো এই, জুলাই এর ১৫ তারিখের আগে টাকা পাঠানো আমার দ্বারা সম্ভয় নয়। এটা হলো মে, অর্থাৎ আরো ২ মাস অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু ওদিকে তোর দাদা দাদীর সমস্যা হবে। যাহোক তুই তোর দাদাকে বলবি ৫ হাজার টাকা খরচ করার জন্য এই দুই মাসের জন্য। কোথা থেকে খরচ করবে ওনি জানেন। তুই শুধু বলবি কাকা বলেছে ওখান থেকে ৫ হাজার টাকা তুলে জুলাই এর ১৫ তরিখ পর্যন্ত চলার জন্য। আর নিয়মিত ভাবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওধুষ খাওয়া ও চলা ফেরা করতে বলবি। আর পরবর্তীতে যখন আমরা কথা বলি তখন তোর দাদা দাদীকে সংগে আনার জন্য চেষ্টা করবি। সংগে করে আনতে পারিস সেলিমকেও। আর তুই যখন যা ইচ্ছা আমাদের বাড়ির, পাড়াপ্রতিবেশীদের খবর, তোদের একটা সমিতি করেছিলি তার খবর, গ্রামের উন্নতির খবর, পাশের গ্রাম ফোর্ডনগরের খবর ইত্যাদি লিখতে পারিস। বিস্তারিত খবরাখবর পেলে মনে হবে না আমি অনেক দূরে আছি। আর তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আমি দেব ইনশা আল্লাহ জুলাই/আগস্টে। আমি ঋণ করে আর টাকা পাঠাবোনা কারন ঋণ করে টাকা পাঠালে আমার কাছে বোঝার মতো লাগে আর সময়ও যেন শেষ হতে চায়না। যা হোক আমার জন্য দোয়া করিস যাতে আগামী জুলাই/আগস্টে একটা কম্পিউটার কিনে দিতে পারি।
আজ প্রচুর ব্যস- ছিলাম। পুরো দিনটাতেই বিভিন্ন ভাবে ব্যস- থাকতে হয়। সময় সুযোগ পেলেই আমি লিখব। আর তুইও সময় পেলে কিছু লিখবি। আজ এখানেই রাখি। আল্লাহ হাফেজ।
ফারুক হোসেন,
দুবাই গ্রেন্ড হোটেল।
আরিফ আবার লিখব এই কামনায় তোর প্রিয় ফারুক কাকা।
চার.
৯ মে, ২০০৫
আরিফ,
আশা করি ভালই আছিস সবাইকে নিয়ে। আর আমিও আল্লাহর মেহেরবানীতে ভালই আছি। শুনলাম রুনার নাকি কি হয়ে ছিল হঠাৎ করে, ক্লিনিকেও ভর্তি করা হয়েছিল। পরে শুনলাম এখন সুস্থ এবং বাড়িতে আছে। যা হোক দোয়া করি সমস- অসুখ বিসুখ থেকে আল্লাহ তোদের ভাল এবং হেফাজতে রাখুন।
আরিফ , ইনশা আল্লাহ আগামী শুক্রবার ১৩/৫/২০০৫ তারিখ বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় নেটে কথা বলব। তখন বাবাকে আসতে বলবি, তার সাথে কিছু কথা আছে। আর যদি সম্ভব হয় ওপাড়ার স্বপনকে উপস্থিত রাখবি। এখন ওদের জন্য কিছু কথা বলছি - চেষ্টা করবি কথা গুলো পৌছে দেয়ার জন্য।
১। সুব্রতঃ (বাসা- সাভার মধ্যপাড়ায় সম্ভার স্কুলেও উপর তলায়।)
দীর্ঘ দুটি বছরের তিল তিল সাধনার পরীক্ষা দিতে যাচ্ছ আগামী ১২ মে হতে, তোমার জন্য আমার আশীর্বাদ এবং দোয়া থাকলো উদ্দিষ্ট্য লক্ষ্যে পৌছানোর। সাহস রাখবে, দৃঢ় বিশ্বাস, অটল সাহসই গন্তব্যে পৌছে দিতে অনেকাংশে সহায়তা করে। সুতরাং উড়হদঃ ড়িৎৎু, মড় ধযবধফ! ------ ফারুক ভাই।
২। ভজনঃ ( পশ্চিম পাড়া, ফোর্ডনগর)
পরীক্ষা ? ঘাবরানোর কোন কারন নেই, সকাল সকাল চলে যাবে কেন্দ্রে। আশা রাখি এবং বিশ্বাস করি ভাল করবে। সুতরাং ভয় করো না। ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দাও। সাহস রেখো। ফারুক দা।
৩। প্রকাশঃ ইংরেজীটার চিন্তা বেশী? আত্মবিশ্বাস রেখো এবং প্রবল সাহস রেখো দেখবে ভাল করছো পরীক্ষায়। সুতরাং নির্ভয়ে পরীক্ষা গুলো দাও এটাই কামনা করছি-------- তোমার প্রিয় ফারুক দা।
৪। দীলিপ, পলাশ, গনেশ...: তোমাদের জন্যও সমপরিমান দোয়া এবং আশীর্বাদ রইল। ভাল ভাবে পরীক্ষা গুলো শেষ করে আবার হাসি গানে ইন্টারনেটের পাতা ভাসাবে এটাই আজকের দিনের কামনা। সুতরাং ভয় নেই, এগিয়ে চলো---- প্রিয় ফারুক দা।
বিঃদ্রঃ সকলের জন্যঃ পরীক্ষা গুলো ভালভাবে শেষ করো তোমাদের নিয়ে দূরে বসেই কিছু করার পরিকল্পনা করছি। ইন্টারনেটের যুগে এর আশির্বাদ কাজে না লাগাতে পারলে ব্যর্থ হবে আমাদের পথ চলা। সুতরাং পরে খুলে বলব।
আরিফ আবার ফিরে আসি তোর কাছে। আমি নতুন একটি মাধ্যমে বাংলা ইমেইল করার উপায় এবং এ ব্যাপারে অন্য মেইলে বর্ননা করেছি। চেষ্টা করে দেখ পারিস কিনা। না পারলে এভাবেই আগের মতো ফাইল এ্যাটাচম্যান্ট করে মেইল পাঠাবি।
ফারুক, দুবাই।
পাঁচ.
Monday, May 16, 2005
চিঠিটি ২ পাতার
আরিফ,
আমি গভীর ভাবে দুঃখিত নিয়মিত না লেখার জন্য এবং তোর নিরাশ হয়ে ফিরে যাওয়াতে। আসলে কয়েকদিন ধরে একটু ব্যস্ত ছিলাম। তাছাড়া ইচ্ছে করলে অবশ্য লিখতে পারতাম। যাহোক আমি নিয়মিত লেখার চেষ্টা করবো। আর ভুল বশতঃ একটি মেইল তোর এড্রেসে চলে গেছে আসলে ঐ মেইলটি অন্য কারো কাছে লিখেছিলাম। এদিকে বড় ভাই এবং আমি ভালই আছি। তাছাড়া মনির ও জামালও ভালই। মনির এখন প্রচন্ড ব্যস্ত ভিসার ব্যবসায়। যা হোক ব্যবসা করে বড়লোক হলে আমরা তো বলতে পারবো আমাদের এক চাচাতো ভাই বড় লোক হয়েছে। এ ব্যাপারে তোরাও মাথা ঘামাসনে। ওরা যা খুশি করুক। আগেও বলেছি এখনও বলি যদি কেউ এ ব্যাপারে কোন কিছু জানতে চায় বা জিজ্ঞেস করে তোরা পরিস্কার বলবি- আমরা কিছু জানিনা। আরিফ, বাবার সাথে আমার একটু কথা বলার দরকার ছিল। হাতে টাকা কড়ি নেই যে ফোন করবো। ইন্টারনেটে এলে আমার একটু সুবিধা হতো। তুই বলেছিস শুক্রবারদিন বন্ধ থাকে কিন্তু শুক্রবার ছাড়া আমার নেটে বসার সময় হয়না। বন্ধের দিন হলে ভাল করে কথা বলা যায়। আমার ডিউটি এখানের সময় সকাল ৯টা থেকে শুরু এবং সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। ইচ্ছে করলে প্রতি দিন ডিউটি শুরুর আগে অর্থাৎ এক ঘন্টা আগে এসে নেটে কথা বলতে পারি কিন্তু আমাকে সকালের ঘুমটা এক ঘন্টা কম করতে হবে। পরে আমি জানাব কবে নেটে বসতে হবে।
তোর দাদাকে বলবি আর মাত্র এক দেড় মাস কোন ভাবে চলতে আগামী জুলাই এর ১৫ তারিখের মধ্যেই ইনশা আল্লাহ টাকা পাঠাবো। আমি বলেছিলাম ৫ হাজার টাকা তুলে তোর দাদাকে চলার জন্য, তুই কি বলেছিলি? বিষয়টা জানাবি। আমাদের সাভারের সমিতিটার কি খবর পারলে জানাবি। পঙ্গু ভাইদের সাথে সমিতিটা করেছিলাম, তোর দাদা এ ব্যাপারে জানেন। আমাদের বাড়িতে বিদ্যুতের মাসে কত টাকা করে বিল আসে পরের চিঠিতে জানাবি।
আজ জ্যৈষ্ঠ মাসের ২ তারিখ, আম কাঠাল কিছু দিন পরই বাংলার ঘরে ঘরে মৌ মৌ গন্ধ ছড়াবে। এখনও অবশ্য জ্যৈষ্ঠের ফলমূল হাট-বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, তবে দামটা একটু বেশি।
এখানে এখন তাপ মাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। বাহিরে যারা কাজ করে তারাই বুঝতে পারে তাপ কাকে বলে। ওদিকে খোকন ও কটা সাভাবিক ভাবে কাজ করছে। একটু আকটু খারাপ তো লাগবেই। তবে কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে। ওদের বাড়িতে ওদের জন্য চিন্তা করতে নিষেধ করবি।
এখন কিছু খন্ড চিঠি লিখছি।
১। শিউলি ও আমিনুরঃ তোমরা কেমন আছো? আশা করি ভালই আছো। আমার স্নেহ ও আদর প্রিয় ভাগিনা সাদের জন্য। জানিনা সাদ এতদিনে কতকি বলতে এবং বুঝতে শিখেছে। আমিনুর, শুধু তুমি নও- দেশের অনেকেই বিদেশে আসার জন্য চেষ্টার কোন ক্রটি করছে না। কিন্তু ভাই বিদেশটা সত্যিই এক ভাগ্য পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় কেউ জিতে আবার কেউ এর বিপরীতটি লাভ করে। এখানে তোমাদের উপযুক্ত কাজ যে নেই তা না কিন্তু এখানে অর্থাৎ দুবাইতে লেবার ভিসা ছাড়া আর বাকি সব কাজের জন্য সার্টিফিকেট দরকার। ইদানিং অনেকে নকল সার্টিফিকেট বানিয়েও বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। কিন্তু রিস্ক নিতে হচ্ছে। আমি মনে করি দেশে যদি কিছু করা যায় সেটাই বেটার। অনেক দিন হয় তোমাদের কোন খবর জানিনা মাঝে মাঝে লিখলে খুব ভাল লাগবে। সবাইকে নিয়ে ভাল থাকো এটাই আমি দোয়া করি।
শেষান্তে-- তোমাদের ফারুক ভাই।
২। বড় আপা এবং দুলা ভাইঃ আপা ও দুলা ভাই, আসসালামু আলাইকুম। আপনারা বেশ কিছু দিন ধরে কোন খোজখবর জানান না অবশ্য আরিফের কাছে বা বাবার সাথে যোগাযোগ হয় তখনই আমি আপনাদের কথা জিজ্ঞাস করি। আফরোজা, নিপা, লাবনী ওদেরকে আমার আদর ও ভালবাসা জানাবেন। আপনাদের সুখি জীবন কামনান্তে--- ফারুক।
৩। সেজু ভাই ও ভাবিঃ ভাবি ও ভাই তোমরা কে কেমন আছো আজ পর্যন্ত একটা চিঠি বা কোন মাধ্যমে জানতে পারলাম না। সত্যিই এটা খুবই পরিতাপের বিষয়। তারপরও আমি সবসময়ই তোমাদের খবর বার্তা রাখার চেষ্টা করি। আশা করি আল্লাহর কৃপায় ভালই আছো। আমিও তাই দোয়া করি। বাড়ির সবাই কে নিয়ে ভাল থাকো এই কামনায়- তোমাদের ছোট ভাই, ফারুক।
৪। মেজু ভাই ও ভাবীঃ মেজু ভাই ও ভাবী, তোমরা কেমন আছো? আশা করি সেলিম, আশা ওদের কে নিয়ে ভালই আছো। আমিও দোয়া করি বাড়ির সবাইকে নিয়ে আল্লাহর মেহেরবানীতে সুকুশলেই থাকো। তোমরা আমার ভিসার ব্যাপারে সবাই এতদিন চিন্তায় ছিলে আল্লাহর মেহেরবানীতে গত মাসের ১৬ তারিখে আমার এমপ্লয়ম্যান্ট ভিসা লেগেছে। এখন বাহিরে ঘুরতে বা কোথাও যেতে কোন অসুবিধা নেই। আমি নিজেও অনেক দুঃখিত মেজু ভাই এর ভিসার টার ব্যাপারে। মেজু ভাই, আমার মনে হয় তুমি যদি বিদেশের চিন্তা বাদ দিয়ে দেশেই কাজটা মনদিয়ে করতে তা হলেই ভাল হতো। যদিও এখানে আসো তা হলে কাজ করতে হবে পরের আন্ডারে এবং প্রচন্ড পরিশ্রমের মধ্যেদিয়ে। তারপর আবার ভিসার কি সমস্যা! মনির ভিসা বের করার জন্য অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমিও এভাবে চেষ্টা করতে পারি কিন্তু ভরসা পাইনা। মনির যে লোকটার মাধ্যমে ভিসার কথা বলছে আমি ওর সাথে সেখানে গত সপ্তাহে গিয়েছিলাম, আমাদের হোটেলে কাজ করে শিলু করে এক লোক, গাইবান্ধার। ঐলোকটা হলো শিলুর খালু। তো ওনার সাথে কথা বললাম। ওনি ভিসার ব্যাপারে ডিল করেন। ঢাকায় ওনাদের ওভারসিজের নাম হলো রাজ। ওনার হাতে নাকি এখন ভিসা আছে ক্লিনার এবং কোন ফ্যাক্টরির লেবার। কিন্তু সব গুলোর জন্যই সার্টিফিকেট দরকার। সার্টিফিকেটও নকল করে আজকাল বানানো যায় এবং এমন লোক আছে যারা সার্টিফিকেট বানিয়ে এটেস্টট করে দিবে। টাকার বিনিময়ে অনেককিছুই হচেছ। যাহোক ভাই, আমি প্রথমে দেখি মনিরের ভিসা গুলি কি ভাবে কি হয়। পরে আমি দেখবো। আজ এখানেই রাখছি, বাড়ির সবাইকে নিয়ে ভাল থাকো এই কামনায় --- ইতি। ফারুক।
আরিফ, পরে আবার লিখব। চিঠিগুলি পৌছে দিস।
ছয়.
19-May-05
আরিফ,
কাল সকালে যখন ফোন করেছিলি তখন দুবারই লাইনটা কেটে গিয়েছিল। কারন, আমার মোবাইলটা খারাপ হয়েগেছে, ফ্রিকুয়েন্সি পায়না- তাছাড়া ব্যাটারিটাও লূ হয়ে গেছে। আপাততঃ আমাকে মোবাইলে না খুজলেই চলবে। কারন, আমরা নিয়মিত ইমেলে যোগাযোগ করলে আর ফোন- টুনের দরকার হবে না। তাছাড়া, জরুরী হলে বড় ভাইকেই করলে হবে, আমি জেনে নেব। আমার জন্য দোয়া করিস যাতে আগামী জুলাইতেই কম্পিউটার কেনার জন্য টাকাটা পাঠাতি পারি। আর তোর ভিসার ব্যাপারে এখনো কোন কিছু হয়নি। আমার মনে হয় দেশে যদি কিছু করতে পারতি তাহলে বিদেশে এসে কষ্ট করতে হতো না। আমার কাছে বিদেশটা এখন বন্দি খানার মতো লাগে। দেশে যারা আছে তাদের কে অবশ্য আমাদের অবস্থা বুঝাতে পারবনা। কারন, আমি নিজেও যখন দেশে ছিলাম তখন বিদেশটাকে সোনার হরিনের মতো মনে করতাম। কিন্তু আমার ভুল ভেঙ্গেছে, আমি বুঝতে পেরেছি টাকাই জীবনে সব কিছু নয়। যাহোক, এবার বাবা ও মার সাথে কিছু কথা বলি,
বাবা ও মা,
আমার সালাম নিও। আমি তোমাদের কাছে লিখিনা বলে আরিফের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছো। আসলে আমি আরিফের কাছেও নিয়মিত তোমাদের খোজখবর নিচ্ছি। যাহোক, বলো তোমাদের kixi-¯^v¯’¨ কেমন আছে এবং নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যাচ্ছো কিনা? মা তোমার কথাও ভাবি, সব সময় তোমাদের কথা মনে পড়ে। তুমি ঠিক মতো ওষুধপত্র খেয়ো এবং ভাল থেকো। বাবা, আমি এর আগে আরিফের কাছে বলেছিলাম ওখান থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ করার জন্য। আমিও জানিনা শেষে ওটার ব্যাপারে কি করলে বাবা তোমার সাথে কথা বলা জরুরী । আমি আগেও বলেছি কিছু টাকা এক সাথে পাঠিয়ে কয়েক মাসের অগ্রিম ঋন হতে হয়েছে। এই ঋনগুলি শেষ হবে আগামী জুন মাসে। এরপর আগামী জুলাইএর ১৫ তারিখে যে বেতন পাবো তখন পাঠিয়ে দিব। আমি আরিফের জন্য একটা কম্পিউটারের জন্য কিছু টাকা পাঠাতে চেছেছি সুতরাং জুলাইতে এক সাথেই টাকাটা পাঠাবো। আমার জন্য দোয়া করো আমি যাতে মান সম্মান মতো নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে পারি। একটি সুসংবাদ হলো আমাদের হোটেলে যারা ভাল কাজ দেখাতে পারে তাদেরকে স্পেশাল ভাবে হোটেলের মালিক বিশেষ ভাবে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্মাননা জানান এবং একটি সার্টিফিকেট হাতে তুলে দেন। তোমাদের দোয়া গুনে আমি সেই পুরস্কারটি পাওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সম্মাননাটি পাবো। এ সময় ছবিও তোলা হবে। পরে আমি সে ছবি পাঠিয়ে দিব। তুমি আরিফের সাথে বাস স্ট্যান্ডে আসতে পারলে আমি কথা বলতে পারতাম এবং তোমাদের ছবিও দেখতে পারতাম। কিন্তু সমস্যা হলো শুক্রবার ছাড়া আমি পারিনা। যাহোক, তোমাদের খবর জানিও। আমি এবং বড় ভাই ভালই আছি। আজ এখানেই রাখছি।
ইতি- তোমাদের ফারুক।
সাত.
২১ মে, ২০০৫, শনিবার।
আরিফ,
তারপর বল কেমন আছিস? এদিকে তোর আব্বা এবং আমি ভালই আছি। তাছাড়া মনির ও জামালও ঠিকমত ডিউটি করছে এবং ভালই আছে। বৃহঃবার রাতে তোর আব্বার ওখানে গিয়েছিলাম। আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে বড় ভায়ের ক্যাম্পের দূরত্ব বেশি নয় কিন' টেক্সিতে যেতে হয় টেক্সি ভাড়া ৫ দিরহাম এবং সময় লাগে মাত্র ১৫ মিঃ। তো রাত সাড়ে ১০টায় ওখান থেকে এসে কাপড় চুপড় গুলোও ধুয়ে নিলাম। এভাবে বৃহঃবার গেলো। শুক্রবারদিন ছিলাম প্রচন্ড ব্যস-। কারন, গতকাল আমাদের রুমের সমস- জিনিসপত্র বের করতে হয়। রুমে আছি ৪জন। ডাবল বেড। আমাদের ক্যাম্পে চলছে চুনকাম। সমস- জিনিস পত্র বাহিরে বের করে রুমে সারা দিন রং করা হয়। এখন এখানে প্রচন্ড তাপ। ৪২ ডি.সে. তাপমাত্রা। এসি ছাড়া রুমে শোয়াই যায়না। সুতরাং বুঝতেই পারিস কাল কি হেস--নেস- হতে হয়েছে। তবে বিকেল ৪টা নাগাদ রং করা শেষ হলে আমরা আসবাবপত্র নিয়ে ফের রুমে উঠে যাই। গত কাল রেধেছিলাম খাসির মাংস। সাধারনত প্রতি শুক্রবারে মাংস রান্না করি। আমি বিস-ারিত খবর গুলি বলি এ কারনে যে, যাতে আমাদের মাঝে যে এক হাজার হাজার মাইলের দূরত্ব তা ঢেকে ফেলার জন্য। দেখ, এখন চলছে তথ্য প্রযুক্তির যুগ। এই দ্রুত গতির যুগে আমরা যদি একটা খবর দ্রুত গতিতে আদানপ্রদান না করতে পারি তা হলে আমরা তো এর সুফল থেকে দূরে সরে গেলাম। আমরা এই যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগাতে পারলেই সফল হবো। আজ এসএইচসি পরীক্ষা স'গিত করেছে। কারন দেশে পরীক্ষার চেয়ে গুরুত্বপূর্ন হরতাল পালিত হচ্ছে। আমাদের দেশ উন্নতি হবে কিভাবে। যে দেশে শিক্ষার কোন মূল্য দেয়া হয়না, জ্ঞান গরিমার কোন তুয়াক্কা করেনা সে দেশ উন্নতি হবে কিভাবে? সারা দেশ ব্যাপী চলছে পরীক্ষা আর তা বাহিল করে আজ হরতাল পালন করা হচ্ছে। দেশের মায়া মূলত আমাদের নেই।
যা হোক, আরিফ, আগামী শুক্রবার দিন আমরা নেটে বসে কথা বলবো। ঐদিন তোর আব্বাও থাকবে। সময়টা পরে তোর আব্বা ফোনের মাধ্যমে জানিয়ে দিব। তারপর হিন্দি কবিতাটি পড়ে কিছু বুঝতে পারলি কি? জানাবি ফিলিংস।
আট.
২৩ মে, সোমবার। পাতার সংখ্যা- দুই
আরিফ,
আমার কাছে ভালই লাগছে এই যোগাযোগ। গতকাল তোর পাঠানো মেইল পড়ে ফোনও করলাম। সাথে পেলাম সারোয়ারের একটি চিঠি, ওর সে চিঠির উত্তর কিছুক্ষন পরই দিচ্ছি। নদীর পানি তা হলে বাড়তে শুরু করেছে। তাছাড়া এখনতো পানি বাড়ার সময়ই। জ্যৈষ্ঠ মাস। বাঁশ হাটা থেকে রেডিও কলোনী হয়ে যে রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে আসলে এ রাস্তাটা খুবই জরুরী। কারন, বাজারের যত ধরনের হেভি যানবাহন আসা যাওয়া করে তা এই রুটটাই উপযুক্ত। তবে আমাদের বংশাই নদীর উপর যে ব্রীজ হবার কথা ছিল তার খবর কি? সরকার যায় সরকার আসে কিন্তু কেউই কথা মতো কাজ করে না। পানি ওঠে পড়বে কিছুদিনের মধ্যেই আর এই সময় মসজিদের কাজ ধরাটা মনে হয় ঠিক হয়নি। কারন, বর্ষার পানি আসার আগেই কাজ করে ফেলা উচিৎ ছিল। তুই বলেছিস আমাদের মসজিদের জন্য নতুন ঈমাম সাহেব রেখেছে। তাহলে শফিকুলের আব্বা এখন কি করছেন বা কোথায় আছেন? পরে জানাবি। তোর নিয়মিত চিঠি পেয়ে ভালই লাগছে কিন্তু বিস্তারিত লেখলে আরো ভাল লাগতো। যাহোক, বাড়িতে একটা কম্পিউটার হলে তখন সময় করে অনেক কিছু লেখতে পারবি। তুই লেখেছিস কাকা আমি বেশি পড়াশোনা করিনি তো তাই ভুল ক্রটি হতে পারে। শুন, পৃথিবীতে অনেক জ্ঞানী লোক ছিলেন যারা বয়স্ক হয়েও পড়ালেখা শিখেছেন। সুতরাং ঘাবরানোর প্রশ্নই উঠেনা। আমি তোকে এখন স্কুলে ভর্তি হতে বলছিনা। যখন যা হাতের কাছে ভাল একটা বই পাবি তা পড়ার চেষ্টা করবি। এই দেখ, প্রথমে তুই ইন্টারনেট বিষয়টা বলতে গেলে কিছুই জানতি না বা বুঝতি না কিন্তু এখন অনেককিছুই বুঝতে পেরেছিস। এটা কিসের জন্য? এটা চেষ্টার ফলে। মানুষের জীবন সারাটাই শিক্ষার জন্য। প্রতি দিন কিছুনা কিছু শিখতে হবে।
আগামী শুক্রবার কোন এক সময় কথা বলব। সময়টা তোর আব্বা ফোন করে জানিয়ে দিবে। রাজিব যখন এসেছিল কখন ওর সাথে কথা বলতে পারতাম নেটে। যাহোক পরে কোন সময় দেখব।
আরিফ যদি কোন সময় চিশতি অর্থাৎ সাজেদুল তোর সাথে কোন ভাবে যোগাযোগ করে তাহলে ওকে আমার ই-মেইল এড্রেসটা দিয়ে লিখতে বলবি। ও যে মেইল এড্রেস দিয়ে ছিল ওটাতে মেইল পাঠালে ফেরৎ আসছে। বুঝতে পারছিনা কারনটা কি। এবার সারোয়ারের চিঠির উত্তরে আসি---
ছোট ভাই সারোয়ার,
আমার শুভেচ্ছা রইল তোদের জন্য। আশা করি ময়ূরী এবং পারভেজকে নিয়ে ভালই আছিস। আমিও তোদের জন্য সুখ-শান্তি কামনা করি। তোর চিঠি আমি পেয়েছি, খুব ভালই লাগলো চিঠি পড়ে। শুন, আমি তোকে ওটা বলিনি আসলে আমাদের সবার উচিত বাবা-মাকে যতদূর পারা যায় সেবা যত্ন করা। এই সেবা যত্ন যে শুধু টাকা দিয়েই হবে তা কিন্তু না। যার যতটুকু সামর্থ তা দিয়েই দেখা উচিত। দুটি কথা বলেও কিন্তু তা পারা যায়। বাবা মাকে কষ্ট দেয়া আমার কল্পনারও অতীত। আমি চাই তারা একটু সুখের মাধ্যমে অবসর সময়টুকু অতিবাহিত করুক। আমি গত মার্চে কিছু টাকা হাওলাদ-টাওলাদ করে একটা অংকের টাকা পাঠিয়েছিলাম। আর সেই ঋন পরিশোধ করতে আমার আগামী জুন মাসের বেতনটাও লেগে যাবে। আমি টাকা পাঠাতে পারবো আগামী জুলাই এর ১৫ তারিখে। আমার বেতন ১২/১৩ হাজার টাকা। এরই মাধে সবকিছু করতে হয়। প্রতি মাসে বাবা মার খরচ যাই লাগুক আমি দিতে প্রস্তুত আছি। ইনশা আল্লাহ আগামী জূ
জুলাই থেকে স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আমি কারো কথাই ভুলে যাইনি। তোদের কথাও ভাবি। সেজুভাই আছে তার কথাও চিন্তা করি। আমার জন্য দোয়া করিস যাতে সবার জন্যই কিছু করতে পারি। তুই বলেছিস কিছু পুঁজি হলে কিছু করা যায়। আমাকে পরে লেখবি কত টাকা পুঁজি হলে কিছু করতে পারিস। আর কি করার চিন্তা করছিস? আমি সাধ্য মতো চেষ্টা করবো। আরিফ, রুনা, সেলিম ওদের ভাল বই পড়া দরকার তা আমিও উপলব্ধি করি। আর এর জন্য আগামী জুলাই মাসে আমি চেষ্টা করছি একটা কম্পিউটার ওদের জন্য কিনে দেয়া যায় কিনা। এখন যুগ হলো ইন্টারনেটের। পড়াশোনা, গবেষনা, যেকোন জ্ঞান অর্জনে কম্পিউটার খুবই জরুরী। কিন্তু দুখের বিষয় হলো আমাদের ছেলেমেয়েরা কম্পিউটারকে ইয়োজ করছে অন্য পথে। গেইমস্, ছবি দেখা, ইত্যাদি কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করছে। কম্পিউটার আবিস্কারের মূল বানী হলো কম্পিউটার হোক জ্ঞান অর্জেনের মূল আধার। আর আজকাল ইন্টারনেট হয়ে কম্পিউটারের কদর আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা দৈনন্দিন জীবনের সাথে এখন অঙ্গাঅঙ্গি হয়ে গেছে। ইন্টারনেটে কি না হচ্ছে? একজন গবেষক, তার গবেষনার জন্য দরকার হয় হাজার বই পুস্তক। বিভিন্ন লেখকের বই থেকে উদৃতি দেয়া প্রয়োজন হয়। কিন্তু তার জানা নেই কোথায় পাবেন তিনি এত বড় বই এর সংগ্রহ। কিন্তু তার যদি ইন্টারনেট ফেসিলিটি থাকে হাতের কাছে তিনি পারেন ইচ্ছে মতো জ্ঞানের জগতে চড়ে বেড়াতে। আজকাল সবকিছুই ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে। কেনাকাটা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন সকল কাজই হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন পত্রপত্রিকা অন-লাইনে বের হচ্ছে। ইন্টারনেট হলো পৃথিবীর সকলের জন্য। প্রতি দিন খবরের কাগজ আসে, হকাররা দ্বারে দ্বারে বিলি করার অনেক পূর্বেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর সকল মানুষ পড়ে নিতে পারে। আমাদের ঐতিহ্য-ইতিহাস, সাংস্কৃতি, সাহিত্য, সকল বিষয় আজ ইন্টারনেটের পাতায় ভাসছে। পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা যায় যখন যা ইচ্ছে হয়। আমি গত কাল একটা পেইজ পেয়েছি এখানে আছে কয়েক লালন, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, হাসনরাজা, গাজির গান, বিয়ের গান, সারি গান ইত্যাদির কয়েক হাজার ঐতিহ্যবাহী গানের বিশাল সংগ্রহ। আমি তার একটি কপি পাঠিয়ে দিলাম ভিন্ন একটি ফাইলের মাধ্যমে।
যাহোক, নিয়মিত যোগাযোগ রাখিস। এবং যতদূর পারিস বাড়ির সবার সাথে মিশেমিশে সবার সুখ-দুখে থাকিস এই প্রত্যাশায় আজ এখানেই রাখি।
ইতি- তোর ফারুক ভাই, দুবাই থেকে।
আরিফ, অন্য একটি এডবির পিডিএফ ফাইল পাঠালাম, ওটিতে পাবি কয়েক হাজার গানের শিরোনাম। পারলে প্রিন্ট করে সারোয়ারকে দিবি। আর কম্পিউটারটা হয়ে গেলে আর প্রিন্ট করার দরকার হবেনা শুধু ফ্লপিতে করে নিয়ে কম্পিউটারে সেইভ করে রাখতে পারবি। তখন আমিও অনেক কিছু ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে তোদের জন্য পাঠিয়ে দিব। আমার জন্য দোয়া করিস যেন আমাদের আশাটা পূর্ন হয়। তোর দাদা-দাদিকে দেখে রাখি, ওনাদের বয়স হয়েছে অনেক ভারি কাজ করতে পারেনা যখন যা বলে শুনিস। আর যখন যা হয় তা আমার সাথে তথ্য বিনিময় করিস।
আজ এখানেই রাখছি। আমি ভাল আছি। দোয়া করি তোরাও বাড়ির সবাইকে নিয়ে ভাল থাক।
ইতি- তোর প্রিয় ফারুক কাকা।
নয়.
২৫ মে।
আরিফ,
আজ আবার হাজির হলাম। কাল তোর আব্বার সাথে তোর নাকি কথা হয়েছে। আমাকে তোর আব্বা বলল তুই নাকি বিকেলে আসতে পারছিসনা, কারন- বিকেলে নাকি সাইবার ক্যাফে গুলো বন্ধ থাকে। তুই আসলে জানিসনা বাস স্ট্যানেড কয়েকটা সাইবার ক্যাফে আছে। যাহোক, তাহলে ওখানকার সময় তুই সকাল ১০টায় উপসি'ত থাকিস। তখন কথা হবে। গতকাল মশিউরের পাঠানো একটি চিঠি পেয়েছি। খুব সুন্দর করে লিখেছে চিঠিটি। আমি ওর চিঠির উত্তর দিচ্ছি তুই কষ্ট করে ওকে জানিয়ে দিস ও যোগাযোগ করে নিয়ে যাবে। ও আছে ওর খালার বাড়িতে । ওখানে থেকেই নাকি পড়াশোনা করছে। ওর খালাতো ভাই মিজানের নাম্বার দিয়েছে ০১৮৭-০২৭২৪৩ । তো ও চিঠিটির ব্যাপারে ও জানিয়ে দিস। তারপর কেমন আছিস। আশা করি ভালই আছিস। ওখানে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে, তাই না? প্রতিদিন এটিএন বাংলা চ্যানেলে খবর দেখি। দেশে তেলের দাম আবারও বৃদ্ধি পেলো। এভাবে দিনদিন সব জিনিসের দাম শুধু বেড়েই চলছে। এবার মশিউরের চিঠির উত্তরে আসি। তা হলে তোরা ভাল থাক আল্লাহ হাফেজ।
ইতি- ফারুক চাচা।
সুপ্রিয় মশিউর,
অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর হাতের নন্দিত পত্রখানার জন্য। শুনে খুশি হলাম আবার পড়ালেখা শুরু করেছিস। পত্রের মাঝে পেলাম সুন্দর সুন্দর বানী খচিত রচনা। মুগ্ধ হলাম বার বার পড়ে। আমিও হারিয়েছি সকল সুখের বাংলা আমার। হারিয়ে গেছে সেই পড়ন- বিকেল গুলো আমার জীবন থেকে। এখানে আছে শুষ্ক মরু। নেই মমতা ঘেরা সেই সুপরিচিত বাতায়ন। দখিনা বাতাসে প্রাণ ভরে ওঠতো কতো জোস্না রাতে। রজনীগন্ধার সুভাস বেসে যেতো মৌ মৌ করে। ঝিঁ ঝিঁ পোঁকারা ডাকতো আধাঁর রাতে বাঁশ ঝাড়ের ফাঁকে ফাঁকে। সেদিন গুলোর কথা আমি কী করে ভুলি? বার বার মনে পড়ে হারানো সেই স্মৃতি গুলো। আমার বিদেশ আসাটা ভুল হয়েছে বলব। কারন, বিদেশের মাটি আমাকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে আপন দিনগুলোকে। কত নিবিড় ছিল ফেলে আসা সেই দিনগুলো। শংকা হয় আবার কি মিলবে মেলা হাটতলা-বটতলা??? আবার কি হবে দেখা ছাঁয়া ঘেরা বিকেল বেলা। আমাদের হিন্দু পাড়ায় কয়েকদিন পর পরই কীর্তন , হরিসভা, মহোৎসব, ইত্যাদি নানা অনুষ্ঠান লেগেই থাকতো, আমার আনাগোনা ছিল প্রতিটি সভাতে। মানা ছিলনা যেতে হরিসভায় না ছিল মানা ফকিরি গানের মজলিশে। মশিউর আমার সন্দেহ হয় সেই দিনগুলো কি আবার ফিরে আসবে??? আমি ছিলাম বাঁধনহারা এক দুরন- বিহঙ্গ। আজ শৃঙ্খলিত হয়েছি প্রবাসের পিঞ্জিরায়।
আমাকে লওয়াও ছুটি এ দুরন্ত ছুটাছুটি হতে
ব্যর্থ শূর্ণ পানে
আমার গানের বানী, আমার কবিতার কথাগুলো আজ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। বন্দি এ জীবনে না মরে আছি বেঁচে। যাহোক, এখন বল কিভাবে যাচ্ছে যাপিত দিনগুলো? আমি ভাল আছি শারীরিক ভাবে, মানসিক নয়। আমার সাথে মনির এবং জামাল ওরাও ভাল আছে সুখের আশায়। মশিউর, আমরা জীবন ব্যাপীয়া সুখ সুখ বলে ছুটে বেড়াই পৃবিথীর এ প্রান- থেকে ও প্রানে- সত্যিকারের সুখ আসলে কোথায় জানিস কি??? আমি পাইনি সদোত্তর কারো কাছ থেকে। তুই হয়তো ভাববি শুধু নিরাশার কথাই বলে যাচ্ছি। আসলে জীবনটাই নিরাশায় ভরা। মশিউর, তোর ঐ চিঠিটার সাথে পঙ্কু ভাইকেও লিখেছিলাম। জানি অহিদ ভাই আরেক ভাবুক লোক। পারলে পরবর্তী চিঠিতে লিখে জানাস অহিদ ভায়ের বর্তমান হালচাল। আর মনোযোগ সহকারে লেখাপড়া চালিয়ে যা কোন সাহায্যে আসতে পারলে গর্বিত হবো। সুতরাং পরে চিঠিতে লিখবি। অনেক আশা ছিল আরিফ, সেলিম ওরা পরবর্তী জেনারেশনে চেঞ্জ আনতে পারবে কিন' হলোনা। সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। যাহোক পেছনের কথা ভেবে কী লাভ। সময় পেলে লিখবি, বড় খুশি হবো- যেমনটি কাল হয়েছিলাম। আবারও একবার শুভ কামনা ব্যক্ত করছি তোর বন্ধুদের সহ মিজান এবং ওদের বাড়ির ছোট-বড় সবার জন্য। আর অবশ্যই আমার সালাম পৌছে দিবি মিঞা ভাই এবং ভাবিকে। আজ এখানেই ইতি টানছি। শুভ সন্ধ্যা।
ফারুক হোসেন
দুবাই গ্র্যান্ড হোটেল, দুবাই।
দশ.
২৮ মে
আরিফ,
সকাল বেলার শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি। অনেক ধন্যবাদ বাবাকে সাথে করে সাইবার ক্যাফে আসার জন্য। কাল বেশ খারাপ লেগেছে , তুই গেলি তোর দাদাকে ডাকতে অথচ সময় লাগলো প্রায় আধা ঘন্টা। এই সেই করে আধা ঘন্টা পাড় হয়ে গেলো। আমি ও দিকে চিল্লাতে চিল্লাতে মরি। যাহোক, এবার কাজে কথায় আসি।
কম্পিউটার কেনার কথা বলেছিলাম কিন্তু এখন ভাবছি তুই যদি আগামী ৩ মাসের মধ্যে চলে আসস তাহলে কম্পিউটার দিয়ে কি হবে? আমার মনে হয় কম্পিউটার টা একটু পড়ে কিনি, দেখা যাক কি হয়। মন খারাপ করার কিছু নেই, আমি দেখছি, ঠিক আছে? তোকে সম্ভবত আমাদের হোটেলে নিয়ে আসবে। যদি হোটেলের ভিসা পাওয়া যায় তা হলে তোর কাজ হবে কিচেনে অথবা হাউজ কিপিং এ। কিচেনে হলেই ভাল হবে। কারন, কিচেনের কাজ নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে। আর হাউজ কিপিং এ গেস্টদের বিছানাপত্র তৈরি করতে হয়। মনির এটা করছে। আর জামাল আছে কিচেনে। আরিফ, বিদেশটা বড়ই কঠিন, এখানে কাজ ছাড়া অন্য কিছুই নেই। পরে বলবি, কি কঠিন কাজ, আসলে আগেই বলছি এখানে সব জায়গায়ই কাজ মানেই কষ্ট। এখানে দেশ না যে, নিজের ইচ্ছে মতো বা মন মতো কাজ করবো, এখানে কতৃপক্ষের হুকুম মতো কাজ করতেই হবে। যাহোক, এবার তোর দাদার সাথে কিছু কথা বলছি।
বাবা,
আমার সালাম নিও এবং মাকেও আমার সালাম বলিও। গতকাল তোমার সাথে কথা বলে এবং সরাসরি ছবি দেখে মনটা ভরে গেলো। কিন্তু বাবা তোমার শরীরটা খুব ভেঙেগ গেছে। কোন রূপ চিন্তা-ভাবনা করিওনা কাল তোমাকে বলেছি তোমাদের চিকিৎসা, খাওয়া দাওয়া, কাপড়-চুপড় ইত্যাদি যাবতীয় খরচ যাই লাগুক আমি নিয়মিত পাঠাব তোমরা কোন চিন্তুা করোনা। আগামী জূলাই এর ১৫ তারিখ হতে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা নিয়মিত পাঠাবো। আর এই কদিন চলার জন্য ওখান থেকে আরো ৫ হাজার টাকা উঠিয়ে খরচ করো। আর বাকি ৫০ হাজার টাকা আমার একাউন্টে জমা করে দাও।
একাউন্ট নম্বর হলো।
মোঃ ফারুক হোসেন
একাউন্ট নং ১২৮০৩
অগ্রনী ব্যাংক, সাভার শাখা।
জমি জমার ব্যাপারে পরে দেখব। যাহোক, তোমরা আমার জন্য কোন চিন্তা ভাবনা করো না এবং মাকেও চিন্তা করতে মানা করো। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া আর ওষুধ পত্র খেয়ো। বাড়ির সবাইকে নিয়ে ভাল থেকো এই প্রত্যাশায় আজ এখানেই বিদায় নিলাম। ইতি- তোমাদের ফারুক।
আরিফ, তোর দাদাকে যা বললাম সেটাই করতে বলিস। পরে ইমেইল করে জানিয়ে দিস কি করা হয়েছে। আজ আর লেখছি না। তোরা সবাই ভাল থাক।
ইতি তোর ফারুক কাকা।
এগারো.
২৯ মে
আরিফ,
কাল তোর মেইল পাঠানোর আগে তোর আব্বা ফোন করে জানিয়ে দিলো বড় আপার মেয়ে হয়েছে। এরপর তোর মেইলও পেলাম।
বড় আপা তোকে বলছি শুন, সবই আল্লাহর ইচ্ছা- তার ইচ্ছা ছাড়া পৃথিবীর কিছুই হয় না। আশা করেছিলি তো যে, একটা ছেলের মুখ দেখবি কিন্তু বোন সবই তাঁর ইচ্ছা। তাঁর ইচ্ছার বাহিরে আমাদের যাওয়ার কোন সাধ্য নেই। তাছাড়া মন খারাপ করিস না ছেলেমেয়েতে আসলে কোন তফাৎ নেই। একজন মেয়েও পারে সাফল্যের সাথে সুনাম অর্জন করতে। চিন্তা ভাবনা করিসনা আল্লাহ মুখ দিয়েছেন তিনি আহারের ব্যবস্থা করবেনই। তাছাড়া আমার দিক থেকে বলছি যতদূর সম্ভব পাশে এসে দাড়াতে সুখ-দুখটুকু অন্তত ভাগ করে নিতে প্রস্তুত আছি। আমার জন্য দোয়া করিস আমি যেন সবার পাশে এসে একটু শান্তির কথা বলতে পারি। দুলা ভাইকেও ঘাবড়াতে মানা করিস, আল্লাহ ভরসা। আফরোজা, নিপা এবং লাবনী ওদের লেখা পড়ার ভাল ব্যবস্থা কর। জানিনা আফরোজা এখন কোন ক্লাশে। আজ কাল স্কুলে ভাল পড়া লেখা হয়না। ওদের জন্য ভাল একজন প্রাইভেট মাস্টার ঠিক করে দে। আমি চেয়ে ছিলাম আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরগন আমাদের চেয়ে আরো পড়াশোনায় অনেক জ্ঞানীগুনী হবে। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি সব উলট পালট করে দিলো।
যাহোক পেছনের কথা ভেবে লাভ নেই । আপা এক কাজ করতে পারিস আফরোজাকে আমাদের বাড়িতে রেখে পড়াশোনা করাতে পারিস। আমাদের সংসারে তো মা আর বাবা দুজনই। এখানে থাকলে সাভারে স্কুলে পড়াশোনা করতে পারবে আর একজন ভাল মাস্টার প্রতি দিন এসে যেয়ে পড়ায়ে গেলে ভাল পড়াশোনা হবে। তাছাড়া মার তো বয়স হয়েছে এখন অনেক কাজই করতে পারেনা। মাকে একটু সাহায্য সহ যোগিতা করলে মারও একটু আয়েশ হলো। আর আফরোজা নিপা ওদের পড়া শোনার খরচটা আমার উপর ছেড়ে দিতে পারিস এতে আমি ধন্য হবো। পরে চিঠি লিখে জানাস আর নবাগত বাচ্চার দিতে খেয়াল রাখিস আর রীতি মতো টিকা গুলো দিয়ে নিস। আজ এখানেই রাখি। তোরা সবাই ভাল থাক।
আল্লাহ হাফেজ।
আরিফ, পত্রটা আপাকে পড়িয়ে শুনাস। আজ আসি। খোদা হাফেজ।
বারো.
৫ জুন, রবিবার
আরিফ,
তোর পাঠানো একটি চিঠি পেলাম গতকাল, তাতে পেয়েছি ৩টি পাসপোর্টের কপি। যথাসময়ে তা বড় ভায়ের কাছে পাঠিয়ে দিব। তোরা কেমন আছিস? আশা করি ভালই আছিস।
আরিফ সাভারের সুব্রতর সাথে কি তোর দেখা হয়? যদি দেখা হয় ওকে একটু লেখতে বলবি। আমি জানি ওদের এখন পরীক্ষা চলছে কিন্তু এখন প্রায় শেষের দিকে। ওর সাথে একটু যোগাযোগ করার খুব দরকার। একটু চেষ্টা করবি। পানি মনে হয় আস্তে আস্তে নদী ছাপিয়ে মাঠে ওঠে পড়বে। লোক জনের ধান কাটাও প্রায় শেষ, তাইনা? অনেকে ধানের বতর নিতে খুব ব্যস্ত। বাংলার দৃশ্য আমাকে খুব করে কাছে টেনে নেয়। হায় রে আমার মন মাতানো দেশ, হায়রে আমার সোনা ফলা মাটি... খান আতার এ গান এখন আর বাংলায় গাওয়া হয়না। আর তাইতো মানুষ গুলো এতটা পাষান, এতটা হিংস্র হয়ে ওঠেছে।
যাহোক, আরিফ বাড়ির সবাইকে নিয়ে ভাল থাক এই কামনা করে আজ এখানেই রাখি, তুই বিস্তারিত লিখিস।
ইতি- তোর প্রিয় ফারুক কাকা।
তেরো.
৯ জুন, বৃহঃবার
আরিফ,
আজ প্রচুর ব্যস্ত তারপরও কয়েকটি কথা লিখছি। আজ এই প্রথম দুবাইতে ২ ঘন্টার মতো সময় বিদ্যুৎ ছিল না। এটা দুবাই এর জন্য আশ্চর্য হলেও আমাদের দেশে পানতা ভাত। যা হোক, জানি দেশে এখন প্রচনড গরম পড়ছে। জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে কয়েকদিনের গরমে, তাইনা? তোরা কে কেমন আছিস বিস্তারিত লিখে মেইল করিস। কাল শুক্রবার, নেটে থাকবনা। পরে জানাব কবে কথা বলব। তোর দাদাকে যা বলেছিলাম তার কি করেছে কিছুই জানিনা। এভাবে যোগাযোগ হলে কেমন হয়? যাহোক, ভাল থাক। আমরা ভাল আছি।
ইতি
ফারুক।
চৌদ্দ.
১১ জুন, শনিবার।
আরিফ,
গত ৮ তারিখের চিঠিটি তোর একাউন্টে গিয়ে উদ্ধার করে পড়লাম। গত কাল সকালে যখন ফোন করেছিলি তখন ফোনটা কেটে গিয়েছি। যাহোক তোর দাদার প্রশ্নের উত্তরে বলছি-- আমার জমিজমার কোন প্রয়োজন নেই। যদি তোর দাদা চায় ঐ টাকাটা দিয়ে শিউলির ঋন এবং ব্যাংকের ঋন সারবে তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। আমি জমি কেনার জন্য আর একটি টাকাও পাঠাবোনা। আমি পরিস্কার বলছি এখন থেকে অর্থাৎ আগামী মাসের ১৫ তারিখ থেকে প্রতি মাসে ৫০০০/= টাকা করে তোর দাদার একাউন্টে পাঠিয়ে দিব। এটাই পরিস্কার কথা। আর আমি কারো ঋনের বোঝা নিতে পারবনা। আমার কাছে কারো ফোন করারও দরকার নেই। ফোন করে অযথা টাকা নষ্ট করা অযুক্তি বলে আমি মনে করি। সবাই ভাল থাক একাই দোয়া করি।
আরিফ,
এখন যা বলছি তা শুধু তোকেই বলছি দয়াকরে কথা গুলো তোর দাদা বা অন্য কারো কাছে বলবিনা। শুন- আমি গত মার্চ মাসে তোর দাদার এক ফোনে রাজি হয়েছিলাম ৩ ডিসিমেল জমি কেনার জন্য। তখন আমার কাছে এত টাকা ছিলনা। আমি গত এক বছরে তিল তিল করে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। অন্যদের মত ফালতু টাকা খরচ না করে, ভাল একটা জামা কাপড় না নিয়ে ভাল একটা জিনিস না খেয়ে টাকা গুলো অনেক কষ্টে জমা করেছিলাম। আমার বেতন মাত্র ১২ হাজার টাকা। তো, মার্চে জমানো টাকা পেলাম ৩০ হাজার আর জমিটা কেনা এবং রেস্ট্রি খরচ মোট পড়বে ৬০ হাজার টাকা। সুতরাং বাকি আরো ৩০ হাজার । আমি মোট ৪২ হাজার টাকা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টান দিলাম। মোট হলো ৭২ হাজার। তুই মনে করে দেখ প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত যা বলছি কোথায় কোন ভুল আছে কিনা। তো, আমি জমিটা কেনা এবং রেস্ট্রি বাবদ মোট ৬০ হাজার এবং মার্চ/এপ্রিল/মে/জুন এই চার মাস চলার জন্য পাঠালাম ১২ হাজার। অর্থাৎ প্রতি মাসের খরচ পাঠালাম ৩ হাজার করে। আমি জানি এটা একটু কষ্ট কর ছিল। কিন্তু আমি একটা সম্পত্তির আশায় এই কষ্টটুকু তাদের কে করতে বলেছিলাম। আর এদিকে আমি দীর্ঘ ৪ মাসের একটা বড় ঋনের বোঝা মাথায় নিলাম। সেই ঋন শোধ হতে যাচ্ছে এই জুনে অর্থাৎ আজকালের ভেতর যে বেতন টা পাবো ওটাই হবে ঋনের শেষ কিস্তি। এই দীর্ঘ সময় আমি কি করে চলি একবার একটু ভেবে দেখ। এটা বিদেশ। এখানে নেই কোন আত্মীয় -স্বজন। এখানে অসুখ বিসুখে ভোগলে বা না খেয়ে পড়ে থাকলে কেউ জিজ্ঞাসাও করবেনা। আমি কোন মতো সাদাসিদা ভাবে এই দীর্ঘ সময় টা পারি দিচ্ছি। ওদিকে কি হলো জমি কেনা তো দূরের কথা টাকা গুলো লন্ড ভন্ড হয়ে গেলো। যা হোক আমি বাবাকে তার শেষ বয়সে কোন দুঃখ দিতে চাইনা। তার যেটা করে ভাল মনে হয় সেটাই করতে বলবি। আর আমি এখন থেকে প্রতি মাসে তাদের চলার জন্য ৫ হাজার করে পাঠিয়ে দিব এর বেশি কিছু করা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। প্রায় দেড় বছর হয়ে গেলো কিছুই করতে পারলামনা। কারো জন্য এখন পর্যন্ত কিছুই কিনতে পারলাম না। এমনকি নিজের জন্য। যাহোক, আমার ঠিকানা ঠোকান কারো কাছে দিসনা। আমি খুব একা থাকতে চাই। আর সবাইকে বলিস আমি ভাল আছি।
তোর ব্যপারে কথা হচ্ছে, তুই ধৈর্য ধরে আর কিছু দিন সময় অপেক্ষা কর। এদিক সেদিক ঘুরাফেরা না করে, বাজে আড্ডায় না গিয়ে একটু নিরবতা পালন কর এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর যাতে তোর ভিসাটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।
আর কথা হলো সাভাবিক ভাবে চিঠি টাইপ করে আগের মতো পাঠাবি। পাঠানোর পর দেখবি কনফার্ম এক লেখা দেখা যাবে। লেখাটা দেখলে বুঝবি চিঠিটি গিয়েছে। আর সুব্রতর কোন চিঠি বা মেইল আমি আজ পর্যন্ত পাইনি। ওকে আবারও পাঠাতে বলবি।
আবারও বলছি যা বললাম তা তোর দাদাকে বলবিনা। আমি চাইনা উনি দুঃখ পাক। ভাল থাক। আল্লাহ হাফেজ।
ফারুক।আজ ১১ জুন, ১৯৯৭ সালের এই দিনে হারিয়েছিলাম প্রিয় সুহিনকে। ওর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
ইতি তোর দূরের কাকা ফারুক।
পনেরো.
১৫ জুন, বুধবার
আরিফ,
একটু আগে তোর পাঠানো মেইলটি পড়লাম। যাহোক, আমি যা বলেছি তাই করব বাড়তি আরকিছু করবনা। আজ আষাঢ়ের ১ তারিখ। বর্ষা আবার শুরুর পথে। এতদিন প্রচনড রোদ ছিল হয়তো এখনো আছে। এ সময় একটু জ্বর, ঠান্ডা, কাশি ইত্যাদি হয়েই থাকে তাই বাইরে বাইরে ঘুরাফেরা না করে একটু চুপচাপ থাক। বাড়ির সবাইকে নিয়ে ভাল থাক এটাই কামনা করি। বাবা আমার সাথে রাগ করেছে তা আমিও বুঝতে পারি। যাহোক যেটা তারা ভাল মনে করে করুক, বেশি কিছু আমি বলবনা। আমি এখন থেকে প্রতি মাসে ৫ হাজার করে টাকা সময় মতো পাঠিয়ে দিবো একটাই বাস। তোর আব্বার মাধ্যমে জানতে পারলাম বাবা নাকি একটি চার্জার লাইট এবং মা নাকি গলার চেইন চেয়েছে আমার কাছে । আমি দুঃখিত আমার সামর্থ নেই। পারলে আসার সময় নিয়ে আসব এই টুকুই বলতে পারি। আমার উপরি কোন কামারই নেই, অন্যান্যরা যেমন কাজের ফাকে ফাকে কিছু বাড়তি কামাই এর ব্যবস্থা করতে পারে কিন্তু আমি হলাম নামের অফিসার । অফিসিয়াল কাজ সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন-। এখানে বাড়তি উপার্জনের কোন পথ নেই। যারা নিচু কাজ করে অর্থাৎ ক্লিনার বা এরকম তারা বিভিন্ন পারে দু একটা বাসায় ধোয়া মুছার কাজ জুটিয়ে নিতে। সুতরাং তাদের বেতন একটু কম হলেও সমস্যা হয়না ৪/৫ শো দিরহাম তাদের এসে যায় । সুতরাং আমার যা বেসিক বেতন তার থেকে আরো খরচ হয়ে যায় নিজের পেছনেই। যাহোক, পরে আবার লিখব , ভাল থাক।
ইতি তোর ফারুক কাকা।
ষোল.
১৯ জুন, রবিবার
আরিফ,
কেমন আছিস? আশা করি আল্লাহর কৃপায় ভালই আছিস। আর আমিও তোদের সকলের মঙ্গল কামনা করছি দূর থেকে। গতকাল রাতে বাবার সাথে কথা বলার জন্য ফোন করেছিলাম তোদের ফোন দিয়ে কিন্তু তোর দাদা কিছুতেই কথা বললনা। পরে মার সাথে রাগারাগি করে ফোন রেখেদিয়েছি। মার সাথে কিছু কথা বলছি।
মা,
আমার সালাম নিও। গতকাল বাবার সাথে কথা বলার জন্যই ফোন করেছিলাম কিন্তু উনি কথা না বলায় তোমার সাথে আবোলতাবোল বকেছি তখন আমার মাথা ঠিক ছিলনা। আমি জানি তুমি তোমার ছেলের ব্যবহার জানো, জানি আমি যতই রাগ করিনা কেন তুমি বিন্দুমাত্রও কিছু মনে করোনি। মা তুমি শুনো--- আমার বেতনটা যা হয় এরই মধ্যে সব কিছু করতে হয় কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, অন্যান্যদের মতো আমার উপরি কোন ইনকাম নেই। ধর বড় ভায়ের কথাই, উনি বেশ উপরি ইনকাম করতে পারেন। কারন, ওনারা হাসপাতালে কাজ করেন ওখানে সম্ভব। আর আমি আছি অফিসিয়াল কাজে এখানে মূল বেতনের চেয়ে একটি টাকাও আয় হয়না। তাছাড়া ভেবেছিলাম বেতন বাড়বে কিন্তু তা আর হবে না। কারন, আমার আগে যে এখানে কাজ করতো সে আবার এখানে এসেছে সুতরাং একজন মানুষ এখানে বেশি হয়েগেলাম। এই অবস্থায় বেতন বাড়ার আর কোন সম্ভাবনা নেই। তাই মন মানসিকতা ভাল থাকেনা। যে বেতন পাই এরই মধ্যে খাওয়া দাওয়া, কাপড়-চুপড়, চলা-ফেরা সবই এরই মাঝে। আবার বাড়িতে পাঠাতে হবে এরপর ভবিষ্যতের জন্যও কিছু চিন্তা করতে হয়। সুতরাং মা, বিভিন্ন চিন্তা করে আর ভাল লাগে না। তাছাড়া বিদেশ আমার কিছুতেই ভাল লাগছে না। ইচ্ছে হয় এখনই চলে আসি। কারন, তোমাদের ছেড়ে এতদিন বাহিরে থাকার ইচ্ছা আর হয়না। আমি দেশে গিয়েই একটা কিছু করবো। কমবেতন হলেও একটা চাকরি করবো। তাই বলাম ৮/৯ মাস পরে আমি ছুটিতে দেশে যাবো। যদি ভাল লাগে তাহলে আবার কিছু দিনের জন্য আসবো আর কোন চাকরি পেয়ে গেলে থেকে যাবো বাংলাদেশেই। আমি মা বাবার কথায় ৩/৪ মাসের অগ্রিম ঋন হয়ে ঐ টাকাটা পাঠিয়ে আমার চলার খুব অসুবিধা হয়েছে এতদিন। যখন ঐ কাজটা হলোনা তারপর থেকেই মনটা খারাপ। যা হোক এখন সর্বশেষ কথা হলো কি আর করার , শুনো--- বাবাকে বলে ঐ টাকাটা দিয়ে ব্যাংকের ঋনটাই সেরে ফেলতে বলো। আর শিউলির যে টাকাটা হয়েছে মনে হয় ২৫/২৬ হাজার টাকা। ওটা যদি আমাকে দিতে হয় তাহলে আরো ২ মাস সময় লাগবে। আর দুই মাস পরে ঋনের সংখ্যাও বাড়বে বিভিন্ন চিন্তায় ভাল লাগেনা। যাহোক আরিফের মাধ্যমে যোগাযোগ রেখো। ফোনে কথা বললে প্রচুর বিল উঠে তাছাড়া কথাও হয়না। যদি পারো আগামী শুক্রবারে আরিফের সাথে ইন্টারনেটে আসো আমি কথা বলবো।
আজ রাখি তোমরা ভাল থাকো। আমি ভাল আছি আমার জন্য চিন্তা করো না।
ইতিঃ- তোমার ফারুক।
আরিফ, আগামী শুক্রবারে মাকে নিয়ে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০ টায় কেফে থাকিস, কিছু কথা বলব।
আজ রাখছি ভাল থাকিস।
তোর ফারুক কাকা।
সতেরো.
২০ জুন, সোমবার।
আরিফ,
আজকের চিঠিটি ওদের জন্য লিখছি। একটু কষ্ট করে ফটো কপি করে ওদের কাছে পৌছে দিস। ধন্যবাদ।
ভজন,
দীর্ঘ প্রায় ২ মাস হলো তোমাদের সাথে কোন যোগাযোগ নেই জানতে পারলাম না কেমন করে পরীক্ষাগুলো দিয়েছিলে। কিন্তু দূর থেকে আমার দোয়া তোদের পাশেই ছিল। তো বলো, কেমন আছো? জানি দীর্ঘ এক/দেড়মাস পরীক্ষার চাপে অনেকটা হাপিয়ে ওঠেছো। তাছাড়া দেশে যে গরম এবার পড়েছে, পুরো গরমটাতেই ছিল তোমাদের পরীক্ষা । জানিনা তোমাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোজিত হয়েছে কিনা। এই গরমে পড়াশোনা করা খুুবই কঠিন হয়েছে। হয়তোবা তোমাদের প্র্যাক্টিকাল পরীক্ষা গুলো এখনো শেষ হয়ে ওঠেনি। তবে মনে হচ্ছে প্রাই শেষ। যাহোক, তোমাদের দীর্ঘ দিনের অনুভুতিগুলো অবশ্যই জানাবে। হয়তো মনে করতে পারো তোমাদেরকে ভুলে গেছি কিনা, না ভজন- তোমাদের কখনোই ভুলিনি এবং ভুলতে পারবওনা। তোমরা যোগাযোগ রেখো, কিভাবে বাংলায় এটাচম্যান্ট ফাইল পাঠাতে পারো তা আরিফের কাছ থেকে জেনে তোমরা সবাই মিলে বাংলায় ই-মেইল করো। আমার সরল হৃদয়ের আন্তরিকতা, মায়া-মমতা আর ভালবাসা থাকলো যথাক্রমে- প্রকাশ, দীলিপ, পলাশ, গনেশ, ¯^cb, আরো যারা আছে এই শ্রেনীর। ভাল থাকো এই কামনান্তে- তোমাদের সকলের প্রিয় ফারুক দা। ২০/৬/০৫, সোমবার।
প্রিয় সুব্রত,
কেমন আছো? কিভাবে আছো? কি ভাবছো? এভাবে অনেক অনেক প্রশ্নের সতূপ মূর্ছা খাচ্ছে। আরিফের মাধ্যমে তোমাদের পরীক্ষা শুরুর প্রাক্কালে দুকলম লিখেছিলা। এরপর আরিফকে অনেকবার তোমার কথা জিজ্ঞাস করেছি। কিন্তু তোমার কোন চিঠি বা কোন তথ্য আজ পর্যন্ত পেলামনা। জানিনা আমার কথা মনে আছে কিনা। যাহোক, তোমাদের সংবাদ গুলো জানালে অনেক খুশি হবো। ভাল থাকো, সুন্দর থাকো।
দূর থেকে খুব কাছের ফারুক দা। ২০/৬/০৫, সোমবার।
আরিফ, আজ আর না, আশা করি আগামী শুক্রবারে সকাল ১০ টায় নেটে কথা বলব।
ইতি তোর ফারুক কাকা।
আঠারো.
৭ আষাঢ়, ২১ জুন, রোজঃ- মঙ্গলবার
আরিফ,
তোকে অনেক ধন্যবাদ মেইলগুলো প্রিন্ট করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আশা করি ইতিমধ্যে যার যার মেইল গুলো পৌছে দিয়েছিস। এজন্য আরেকবার ধন্যবাদ। আরিফ ইদানিং তুই খুব ছোট ছোট করে মেইল পাঠাচ্ছি, কি ব্যাপার সময়ের বুঝি খুবই অভাব? আশা করি বড় করে অনেক কিছু লিখে মেইল পাঠাবি। তোদের খবর পেলে খুব ভাল লাগে। আর বিশেষ কথা হলো আগামী শুক্রবার ইনশা আল্লাহ নেটে কথা বলব। সময় বাংলা সময় সকাল ১০টা। আগেও বলেছি, মাকে আনার চেষ্টা করবি। আর যদি পারিস ওপারের ভজনকে একটু রাখতে চেষ্টা করবি। আরো যদি সম্ভব হয় সুব্রতকেও একটু খবর দিবি।
শুক্রবারের আগে আবার যখন লিখবি তখন তোদের বিস্তারিত খবর এবং রোদ-বৃষ্টি-পানি-গরম ইত্যাদির খবরও জানাবি।
বাড়ির সবাইকে নিয়ে সুখে থাক এই কামনান্তে--- ফারুক কাকা।
ঊনিশ.
২৭/০৬/০৫
আরিফ,
অনেক অনেক ধন্যবাদ এভাবে মেইল পাঠানোর জন্য। সত্যিই বড্ড খুশি হয়েছি। কে বলে তুই কিছুই জানিসনা, ইচ্ছে করলেই পারিস। একচুয়ালি, আমার বিদেশ মোটেও ভাল লাগেনা এখানে আছি শুধু আছি জোড় করে। তুই তো পাগল হয়েছিস বিদেশে আসার জন্য এলেই বুঝবি - বিদেশে আসলে কি। এভাবে দেশে যারাই থাকে তাদের কাছে বিদেশ একটা আজব জায়গা| সবাই চায় বিদেশে গেলে ভাগ্য পাল্টিয়ে যাবে কিন্তু এর উল্টুটাও ঘটে। বিদেশ মানে বন্ধি জীবন, এক নরক খানা। বিদেশ মানে পরাজয় আর পরাধীনতা। এখানে আত্মীয়তা বলতে কিছু নেই। এখানে ডিউটি ছাড়া অন্য কিছু কল্পনা করা যায়না। এখানে ভাললাগেনা/আজ যাবনা অফিসে এসবের বালাই নেই। এখানে নেই মুক্ত ভাবে ঘুরে বেড়ানোর আলো-বাতাস। এখানে সকাল হয়ে ডিউটির জন্য তৈরি হওয়া আর বিকেল কখন হয় তা দেখা যায়না কিন্তু ছুটির তাগিদ আসে। রুমে ফিরে এসে ক্লান্ত দেহে এলিয়ে পড়ে মন বিছানায় এই হলো প্রবাস, এই হলো সাধের বিদেশ, সোনার হরিণ।
আমার মনটা ছটপট করে আমার প্রিয় বাংলার জন্য, আমার প্রিয় দেশের জন্য। আমার কথা ভুলে গেছে আমার চলার পথের ধূলো, আমার পদ চিহ্ন মুছে গেছে পড়ন্ত বিকেলের ছায়া ঘেরা পথ গুলো থেকে। আমাকে ভুলে গেছে বাংলার পাখ-পাখালিরা, ভোরের দোয়েল। আমি কতদিন দেখিনা পুব আকালে লাল রক্তিম সূর্যোদয়। আবার বর্ষা এলো বাদল ঝরিয়ে শুধু এলাম না আমি। হায়রে আমার মনমাতানো দেশ, হায়রে আমার সোনা ফলা মাটি... এত দেখি তবু আমার মন যে ভরে না... এ গান এখন শুধু কল্পনা।
আবারও লেখান আহ্বান জানিয়ে এবং মোবাইল মেসেজের জন্য আবারও ধন্যবাদ যা একটু আগে পেলাম।
একটি বিশেষ কথা-- তোর ২৭ তারিখের শেষ মেইলটি আমি তোর একাউন্ট থেকে উদ্ধার করে পড়লাম আমার একাউন্টে আসে নি। কারন হলো যখন মেইল করবি তখন শুধু কালো কালার, ফন্ট সাইজ একই রকম, ফন্ট একই রকম ব্যবহার করবি অন্য কিছু অতিরিক্ত যোগ করার দরকার নেই। মেইলটি যখন রাস্তা দিয়ে আসে তখন এই ভিন্ন ভিন্ন ফরমেটের জন্য অনেক সময় গতি পথ ভুলে যায় এবং তা পৌছে না। সুতরাং বিষয় টা খেয়াল রাখার বিষয়।
তোর ব্যপারে কোন মেসেজ পেলে সংঙ্গে সংঙ্গে জানাবো চিন্তা করিসনা। বাবার জন্য টর্চ পাঠানোর চেষ্টা করব। যদি আগামী বেতনের পূর্বে মুসলেম ভাই না যেয়ে সারে। বেতন পাবো ১০/১১ তারিখে। আজ এখানেই রাখি।
আল্লাহ হাফেজ।
বিশ.
২৮ জুন ২০০৫, মঙ্গলবার
আরিফ,
যথাসময়ে তোর মেইল পেলাম। ধন্যবাদ। হ্যাঁ, তোকে যে মোবাইলের ছবিটি পাঠিয়েছি সেটি সম্ভবত তোর জন্য
হতে পারে, তোর আব্বা হয়তো ঐ মোবাইলটিই তোর জন্য পাঠাবে। দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল তোর ভিসা, এই তো? হ্যাঁ, এখনো হয়নি তবে চেষ্টার ত্রুটি করা হচ্ছে না, ইনে-জার করো ইনশা আল্লাহ হো জায়িগি। তোম ফিকির বিলকুল মাত করো, ঠিক হে? সুতরাং আমরা যথাসময় জানাবো। ব্যাংকের ঋনটা পরিশোধ হলে আমাকে বিস-ারিত লিখে জানাবি। তোর আব্বা মসজিদের জন্য কিছু টাকা পাঠিয়েছে আমি শুনেছি, আমিও চাই ধর্মের পথে কিছু দান করতে কিন' একটির পর একটি সমস্যা এসে পড়ে। দেখ, ৪ মাসের একটা টার্ম শেষ হতে না হতেই শিউলিদের ঋনটা শোধ করার জন্য আবার প্রস'ত হতে হচ্ছে। আমি সারা বছর ঋন পরিশোধ করেই যাবো। বিদেশে এসে আত্মিয় পরিজন সবাইকে ছেড়ে কিছু একটা সঞ্চয় না করতে পারলে কি করব বল। বাড়িতে যে যাবো কোথায় উঠবো নেই একটা ঘর। একটা ঘর দিতে গেলেও এক/দেড় লাখ টাকার কমে হবেনা। কি করবো কিছুই ভাবতে পারিনা। ওদিকে বিদেশে এক মুহূর্তও আমার মন টিকছে না। মন চায় এখনই পারলে চলে আসি আমার সবুজের দেশ সোনার দেশ বাংলাদেশে।
আজ এখানেই রাখি পরে আবার সময় সুযোগে লিখব। ভাল থাক।
ইতি - তোর ফারুক কাকা।
একুশ.
আরিফ, আরেকটি চিঠি পাঠালাম ওপাড়ার ভজনের জন্য। অবশ্যই আজই চিঠিটি ওকে দিবি। এবং ইমেইল সংক্রান- কিছু তথ্যও ওকে বলবি অর্থাৎ কিভাবে একটি বাংলা মেইল এটাচম্যান্ট করে ফাইল আকারে পাঠাতে হয় এবং কিভাবে অন্যের পাঠানো একটি এটাচম্যান্ট ফাইল খুলে পড়তে হয় এবং এর উত্তর দিতে হয়। ধন্যবাদ আরিফ।
আর কত দিন রইবে বোকা !!
সুপ্রিয় বন্ধুগণ,
প্রথমে একরাশ কদম ফুলের বর্ষাকালীন শুভেচ্ছা এরপর একরাশ অভিযোগ.... হ্যাঁ, তোমরা ইনটার দিয়ে আরো একধাপ এগিয়ে যাচ্ছো বর্তমান বিশ্বকে জয় করতে তোমাদের পদধ্বনি রনিত হচেছ কিন্তু বড়ই দুখের ব্যাপার যে, এই ইন্টারনেটের অতি ফাস্ট দুনিয়াতে তোমরা এককোটি মাইল ধীর গতিতে পথ চলছো। এটা বড়ই পরিতাপের কথা। সব কথা খুলেই বলছি, শুনো- আমি আরিফকে এই দুবাই থেকে ট্রেইনিং করিয়ে করিয়ে ইনটারনেটের জগতে নিয়ে আসতে পারলে তোমরা ইনটার মিডিয়েট পরীক্ষা দেয়া টেলেন্ট ছাত্র হয়ে এত বোকা হয়ে আছো কিভাবে? আমি ভজন এবং পলাশের প্রথম চিঠি পেয়ে সেইদিনই সাথে সাথে বাংলায় চিঠি লিখে পাঠিয়েছি যার যার ঠিকানায় কিন্তু বড্ড পরিতাপের কথা এই যে, চিঠি গুলো আমার আজো তোমরা পড়ে দেখলে না। তা হলে যোগাযোগ কিভাবে হবে? সুখ-দুখের অনেক কথা নিয়ে চিঠি গুলো আমার শীতের রাতের মতো লেপ কাথায় জড়িয়ে আছে। ভজনের একাউন্টে আজও খুলে দেখলাম এখনো ৫টা চিঠি পড়া হয়নি। শুধু জ্ঞানের অভাবে পড়তে পারোনি চিঠিগুলো। যা হোক আজই আরিফকে নিয়ে সাইবার ক্যাফে যাও এবং তোমাদের মেইল গুলো প্রপারলি চেক করো এবং চিঠির উত্তর দাও প্রানের বাংলা ভাষায় এচাটমেন্ট ফাইল করে। আরিফের কাছ থেকে বিস-ারিত জেনে নাও।
আজকের চিঠির জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি পলাশ, ভজন এবং দিলীপকে। কিন্তু প্রকাশর কোন খোজ খবর পাচ্ছিনা, কি ব্যাপার? বিস্তারিত চিঠির জন্য আমি অপেক্ষা করছি। আগামী শনিবার পর্যন- আমি তোমাদের নতুন চিঠি দেখতে চাই।
শেষানে---- তোমাদের প্রিয় ফারুক ভাই, সুদূর মরু থেকে। ৭/৭/০৫
বাইশ.
আরিফ ,
একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি
আমি যে টাকা পাঠাবো সেখান থেকে মাত্র ৫০০/ টাকা নিচের একাউন্টে টিটি করে পাঠিয়ে দিবি। আজ দৈনিক প্রথম আলোতে একটি রিপোর্ট পড়লাম একজন টেলেন্ট ছাত্র বুয়েটে পড়ছে কিন' মারাত্মক একটি রোগে এখন মৃত্যুর দিন গুনছে। ওকে বাচাতে দরকার ৪৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু আমরা সবাই যদি কিছুটা হলেও সাহায্য করি তা হলে কোন ব্যাপার নয় । আমি এই সামান্য অর্থের সাহায্য টুকু নিয়েও হৃদয়ের পাশে দাড়াতে চাই।
টাকাটা পাঠাতে হবে এই ঠিকানায়
মো. মনিরুল ইসলাম
হিসাব নং ৩৪০০৪৩৮৪
দি সিটি ব্যাংক
ইসলামী ব্যাংকিং শাখা
মতিঝিল, ঢাকা।
সূত্রঃ ‘‘ হৃদয়ার গল্প বলি, শুনো.. ’’ ---------- দৈনিক প্রথম আলো, ৭ জুলাই, প্রথম পাতা।
তেইশ.
৯ জুলাই।
আরিফ
ধন্যবাদানে- শুরু করছি। আজ সকালে এসে তোর পাঠানো গতকাল এবং আজকের পাঠানো পৃথক পৃথক মেইল দুটি পড়লাম এবং এই তো কিছু ক্ষন আগে তোর সাথে ফোনে কথাও বললাম। প্রথমে আমি সারোয়ারের চিঠির জবাব দিই এরপর তোর কাছে ফিরে আসবো।
ছোট ভাই সারোয়ার,
তোর সুন্দর চিঠিটির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ । এখন বর্ষ মৌসুম, অপূর্ব রূপ ধরা দিয়েছে বাংলার মাঠ-ঘাট-প্রান-রে। কখনো কখনো অতি বৃষ্টি গরিব-দুখিদের জন্য হয়ে আসছে অমঙ্গল। তবে সুখ-দঃখ মিলিয়েই জীবন। আমাদের চলার পথে কখনো বাধা কখনো সুখের জোয়ার কখনো বিরহ এসে হানা দেয় কিন' এই সুখ দুঃখ গুলো আমাদের কে সইতে হয়। যাহোক, বলেছিলি মসলার ব্যবসা করতে চাস, খুব ভাল কথা। কিন্তু আমি শিউলির ঋনটা পরিশোধ করতে যেয়ে আবার এক ফেড়ে পড়ে গেলাম। আগামী আগস্ট থেকে আগামী ৩ মাসে ওদের টাকাটা পরিশোধ করবো বলে আশা করছি। আমার বেতন তো বেশ একটা নয়। আশা আছে সবার জন্য কিছু করার কিন' আশা আর সামর্থ যে এক হয়ে ওঠেনা। যাহোক তুই এক/দেড় হাজার টাকা নিয়ে কোন যন্ত্রপাতি সর্ট থাকলে কিনে কাজ করতে থাক। ঝামেলা গুলো শেষ হলে আমি পরে তোকে কিছু টাকা দিবো কোন ব্যবসাপাতি করার জন্য। আর এখন বর্ষ মৌসুম এখন ব্যবসার কোন ভাল সময়ও নয়। যাহোক তুই কাজ করতে থাক। আর বাবা মাকে যেকো সমস্য দেখে শুনো রাখি। তোর চিঠির জন্য আবারও তোকে ধন্যবাদ এবং পারভেজকে আমার স্নেহ জানিয়ে আজ এখানেই শেষ করছি।
আল্লাহ হাফেজ।
ইতি -- তোর ফারুক ভাই।
১০ জুলাই।
হাঁ আরিফ আজ আবার ফিরে এলাম। কেমন আছিস? নিচে কিছু ওয়েব সাইটের এড্রেস দিলাম। লেখা গুলো ইংরেজী ফন্টের।
www.ictbangladesh.com
www.banglaexpress.org
শামীম ভায়ের এড্রেসঃ xmurshedy@gmail.com
আরিফ পরে আবার লিখব।
---- তোর ফারুক কাকা।
চব্বিশ.
১২ জুলাই
আরিফ,
আজ আবার ফিরে এলাম। কেমন আছিস? আশা করি ভালই। কাল রাতে তোর মোবাইল মেসেজ পেয়ে জবাবও দিয়েছি। যাহোক, এবার কথায় আসি। আমি হুন্ডি করে ৮৫০০/ (আট হাজার পাঁচশো টাকা) পাঠিয়েছি। টাকাটা আমাদের আবেদ কাকার ছেলে জসীম আগামী শুক্রবারের (১৫/৭/০৫) মধ্যেই বাবার কাছে হস্তান্তর করবে। তুই ৫০০ টাকা নিয়ে কথা মতো ঐ ঠিকানায় পাঠিয়ে দিস। বাবাকে ৮০০০/ রেখে খরচ করতে বলিস। নিচে আমি বাবার কাছেও দু‘কলম লিখছি। তো, তুই কি ভজনকে বা সুব্রতকে বলেছিলি কিভাবে বাংলায় এটাচম্যান্ট করে ফাইল পাঠানো যায়? ব্যাপারটা আবার তোকে মনে করিয়ে দিলাম। এখন বাবার সাথে একটু কথা বলি।
বাবা ও মা,
আমার সালাম নিও। আশা করি আল্লাহর মেহেরবানীতে শারীরিক ভাবে ভালই আছো। আমিও তোমাদের সুস্থতা কামনা করি। দোয়া করি তোরা যাতে একটু সুখ-শানি-তে অবসর জীবনটা কাটাতে পারো। আমার সালাম ও স্নেহ রইল যথাক্রমে বাড়ির ছোট-বড় সবার প্রতি।
বাবা, আমি মোট ৮৫০০/=(আট হাজার পাঁচশো টাকা মাত্র।) পাঠালাম। টাকাটা জসীম ভায়ের মাধ্যমে পাবে। আগামী শুক্রবারের মধ্যেই ও তোমাকে ঐ টাকাটা বুঝিয়ে দিবে। আমি শুক্রবারে রাতে বা যে কোন সময় হুজুরের মোবাইলে তোমার সাথে কথাও বলবো।
তুমি ঐ টাকা থেকে ৫০০/ টাকা আরিফকে দিবে। আমি টাকাটা এক জায়গায় দিতে বলেছি। কয়েকদিন আগে সারোয়ারের একটি চিঠি পেয়েছিলাম ও কিছু টাকা চেয়েছে। তুমি এক কাজ করো ওকে কিছু টাকা দিও। আর বাকি টাকা গুলো প্রযোজন মতো খরচ করো। আর আগামী মাস থেকে শিউলিও টাকাটা পরিশোধ করবো। ওদের ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে আমার ৩ মাস সময় লাগবে। প্রতি মাসে আমি ১০ হাজার করে টাকা ওদের জন্য পাঠাবো। আগামী আগস্ট/সেপ্টঃ/অক্টোবর এই তিন মাসে আমি ঋণটা পরিশোধ করবো ইনশা আল্লাহ। এর পাশাপাশি প্রতি মাসে ৫ হাজার করে টাকা তোমাদের চলার জন্য পাঠাবো। এরচেয়ে বেশি করা আমার পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব নয়। যতটুকু করার আশা করছি এটা করা যদিও আমার পক্ষে অনেক কঠিন হবে তবু করবো ইনশা আল্লাহ। তোমরা আমর জন্য দোয় করো। বিদেশে এসেছিলাম এই ভেবে যে, অনেকের অনেক আশা আকাঙ্খা পূরন করবো বলে। কিন' তা আর হলো কোথায়। আমারও অনেক সাধ হয় মাকে কিছু সোনার গহনা উপহার দিতে ছোটবোন শিউলি, ভাগিনা সাদ, বড় বোন-দুলাভাই এর সংসারের প্রতি একটু নজর দেয়া, সেজু ভায়ের অবস্থার দিকে একটু হলেও খোজ খবর নেয়া, মেজু ভাই অনেক দুঃখ করতে পারে আমার উপর সব মিলিয়ে সবার কথাই একা একা ভাবি কিন' যোগ-বিয়োগের অংকে বার বারই হেরে যাই। ওদিকে আত্মীয়-স্বজন আছে তারাও চেয়ে থাকে, আশায় থাকে এটাও স্বাভাবিক কিন' কিছুই পাইনা করার। শুধু আশা আকাঙ্খ গুলো বুকে বেধেঁই প্রবাসি দিন গুলো কাটিয়ে যাচ্ছি। যাহোক, দোয়া করো যতদিন প্রবাস জীবনের রিজিক ভাগ্যে আছে ততদিন যেন একটু সুস্থ থেকে কাজ করে যেতে পারি এবং পরিশেষে তোমাদের মাঝে আবার ফিরে আসতে পারি। মার দিকে খেয়াল রেখো। তোমরা দুজনই রীতি মতো ডাক্তারের সাথে দেখা করো। এবং ঠিক মতো ওষুধ খেয়ো। আহাম্মদ ভাইকে আমার সালাম পৌছে দিও। জানিনা ওনি এখন কোথায় কাজ করেন। বর্ষ মৌসুম, তাই বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েদেকে দেখে রোখো। পরিশেষে তোমাদের প্রতি মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই রাখলাম।
ইতি-- তোমাদের ফরুক।
আরিফ, আবার তোর কাছে ফিরে এলাম। তো, বাবাকে চিঠিটি দিস আর যোগাযোগ রাখিস। আরিফ আরেকটি ওয়েব সাইটের সন্ধ্যান দিচ্ছি তুই এখানে যেয়ে দেখতে পারিস।
www.bangladeshinfo.com
ভাল থাক এই প্রত্যাশায় আজ এখানেই ওঠি। --------------- ফারুক চাচা, দুবাই থেকে।
পঁচিশ.
১৩ জুলাই।
আরিফ,
কাল রাত প্রায় সাড়ে ৯টায় (স্থানীয় সময়) আমি হুজুরের মোবাইলে ফোন করি এবং প্রায় ৪/৫ মি. কথা বলি এর পর ঐ মোবাইলে টাকা না থাকায় ডিসকানেক্ট হয়ে যায়। যাহোক দরকারী কথা বাবার সাথে বলেছি। আগামী শুক্রবারে ফোন করার কথা কালকের মেইলে বলেছিলাম, যেহেতু কাল রাতে বাবার সাথে কথা বলেছি তাহলে শুক্রবারে মোবাইলে কথা বলবনা। বাবা বলল শিউলি ওরা নাকি নেটে এসে কথা বলবে। সুতরাং তুই আগামী শুক্রবারে ওদের কে নিয়ে সকাল ১০টায় পূর্বের মতো সাইবার ক্যাফে আয় তখন কথা হবে।
আরিফ যখন দেখবি কোন লেখা নীল রং এর তখন মনে করবি ঐ লেখা গুলো ইংরেজী হরফের, ঠিক আছে? যখন তুই লেখা গুলোকে ইংরেজী ফন্ট থেকে বাংলায় রূপান-র করবি তখন খেয়াল রাখবি ঐ নীল রং এর লেখা গুলো যেন ইংরেজী ফন্টেই রাখা হয়। আমি মনে করি কথাটা তোকে বুঝাতে পেরেছি। মাঝে মাঝে তোকে আমি কোন নতুন ওয়েব সাইটের ঠিকানা পেলে নীল রং এ জানাবো, ওকে?
এখানে বাংলাদেশের কিছু পত্রিকাসহ কিছু দরকারী জিনিস পাবি।
www.banglanews.com
তারপর? তোর ব্যাপারে এখনো কিছু খবর হয়নি হলে সাথে সাথে জানাবো। দেখ, আলমের এতটাকা পয়সা কে খাবে? মেয়েটাকে ছোটবেলা থেকে এত আদর দিয়ে লালন-পালন করে এতবড় করলো, আলম ভায়ের ছেলে নেই কিন্তু রেহানাকে ছোট বেলা থেকেই ছেলের পোষাক পরিয়ে রাখতো মনে আছে তোর, কিন্তু কি তার পরিনাম হলো! সবই আল্লাহর ইচ্ছা। ওনার হাতেই সব ক্ষমতা। আমরা শুধু খামোখা হয়রানি হই নানান কিছু ভেবে। পৃথিবীর দুই পয়সারও মূল্য কোথায়? শুধু নিঃশ্বাসটা আছে বলে আমরা কতকিছু চিন্তা করি। টাকা-ঘর-বাড়ি-জমি-জমা সবই চাই। কিন্তু নিঃশ্বাসটা শেষ হয়েই হলো এসবের বিন্দুমাত্রও ভেল্যূ নেই। মানুষ বুঝেনা, তবে বুঝবে একদিন, বুঝতে হবেই কিন্তু সুধরানো সময় হাতে থাকবেনা। এরকম চরম সত্য কথা সবার জানা থাকলেও উপলব্ধি করিনা।
যাহোক, মেইল চেক করে পারলে কিছু নতুন কথা লিখে জানাস। সবার মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই রাখি।
ইতি-- ফারুক কাকা।
ছাব্বিশ.
৪ শ্রাবণ, ১৯ জুলাই, মঙ্গলবার।
আরিফ,
গতকাল সবার সাথে কথা বলে খুবই ভাল লাগলো কিন' কার্ড শেষ হয়ে যাওয়াতে সম্ভবত লাইনটা কেটে গেলো। যাহোক এভাবে মাঝে মাঝে কথা হলে মন্দ হয়না।
কি লিখবো লেখার কিছু পাইনা। নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে, তাই না রে? কি আনন্দই না হবে। কিন' পানি বেশি হলে আনন্দের বদলে দু:খই বয়ে আনবে। বেশি পানি কামনা করিনা। মোটামুটি বর্ষ হোক মাছের সংখ্যা বারুক এটাই চাই। বংশাই নদীতেও আগের মতো মাছ পাওয়া যায়না।
সপ্তাহের ৩/৪ দিন রান্ন করি। রুমে ফ্রিজ আছে অসুবিধা হয়না। বুধবার আর শুক্রবার আমার পালা। শনি ও রবি মনির আর জামালের বাকি দিন। পৃথক পৃথক ভাবে রান্নার রুটিন থাকলেও আমরা মিলেমিশেই রান্না-বান্না করি। এবং এক সাথেই খাওয়া দাওয়া করি।
আজ থাক পরে আবার লেখব।
ইতি--- ফারুক কাকা।
সাতাইশ.
৬ শ্রাবণ, ২১ জুলাই বৃহঃবার।
আরিফ,
হ্যাঁ তোর চিঠিটি এইমাত্র পড়লাম। যাহোক ওসব কান কথা বাদ দে। অন্যকথায় আসি। আগামী কাল ছুটি পাচ্ছি। ৭ দিন পর একদিন ছুটি। দেখা যাক কিভাবে ছুটিটি কাছে। কিভাবে কাটলো তা জানাবো ইনশা আল্লাহ আগামী শনিবার।
দেশে তরিতরকারি সহ সব জিনিসের মূল্য দিনদিন বৃদ্ধিই পাচ্ছে। সামনে বন্য (সম্ভাবনা।) এরপর রোজা ইত্যাদি মিলিয়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে বই কমার আশংকা নেই। বাড়িতেও আমরা টুকটাক শাক-সব্জি লাগাতে পারি। এখন বর্ষ মৌসুম, ২/১ মাস আগে যদি লাগানো হতো চাল-কৃমড়া, মিষ্টিলাউ, ঢেঁরষ বা মরিচ এখন ফল পাওয়া যেতো। এগুলো লাগাতে ক্ষেত-খামারের দরকার হয়না। বাড়ির আঙ্গিনাই যতেষ্ট। শুধু একটু চিন-া-ভাবনা থাকলেই অনেকাংশেই আমরা সাশ্রায় করতে পারি বাড়তি কিছু পয়সা এবং টাটকা শাক-সব্জিও পেতে পারি হাতের নাগালে। নিজেরা খেতে পারি এবং প্রতিবেশীকেও দিতে পারি। কথা গুলো যদিও শুনতে ধৈর্য্য হচ্ছেনা কিন' কথাগুলো মূল্যবান। আমরা দেশকে বাচাতে পারি ঋনের বোঝা থেকে । নিজেরা বাচতে পারলে দেশ বাচবে। নিজে করি অন্যকে এসব উন্নয়ন মূলক কাজে সম্পৃক্ত করি এটাই হোক আমাদের অঙ্গিকার। আমাদের বাড়িতে গাছগাছালি নেই বললেই চলে। আমাদের বাড়ির বয়স প্রায় ১০/১১ বছর হতে চলছে কিন্তু আজও কোন বড় সড় বৃক্ষ আমাদের বাড়িতে নেই। এটা কিন্তু বড়ই পরিতাপের কথা। গাছ আমাদের অনেক উপকার করে। এসব কথা আমরা সবাই জানি কিন' মানিনা। আর এটাই আমাদের বড় দোষ। এখন গাছ লাগানোর সময়। আমার অনুরোধ আমাদের বাড়িতে কিছু গাছ লাগিয়ে যা। ফলমূলের গাছ/কাঠের গাছ/ (কড়ই/মেহগানি/দেবদারু/বাড়ির সামনে পূর্বপাশে) যাহোক সবাইকে গাছ লাগাতে উদ্ভোদ্ধ করবি। তোদের সমিতিটার ব্যাপারে তো আমাকে কখনো বলিসনা, এখনো কি চলছে সমিতিটা?
দেখ, সেই ছেলেটা এখন সবার সহযোগিতায় সিংগাপুরে চিকিৎসার জন্য গিয়েছে । আমি হৃদয়ের কথা বলছি। যে ছেলেটির জন্য কিছু টাকা পাঠাতে বলেছিলাম। ও ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান- হয়। যা খুবই মারাত্মক বা অপর নাম মৃত্যু। ৪৫ লক্ষ টাকা খরচ হবে এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে। এমতাবস'ায় প্রচারনার ফলে এতবড় অংকের টাকাটাও যোগাড় হয়েছে। কথায় বলে একের বোঝা, দশের লাঠি। সুতরাং সবার সহযোগীতায় বড় বড় কাজও হতে পারে।
সুতরাং আজকের মতো ইতি, কথা হবে আগামী শনিবার। আল্লাহ হাফেজ।
ফারুক চাচা, দুবাই থেকে।
আঠাইশ.
৭/২৫/২০০৫ ৩:৫৪:৫৭
আরিফ,
আজ শুরু করলাম। কেমন আছিস? আশা করি ভালই যাচ্ছে দিনকাল। দেশে তো এখন প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে মাঝে মাঝে। আজ শ্রাবণের ১০। কি বলব তুই তো অপেক্ষায় আছিস কবে যাবো সাধের দুবাই শহরে। আমাদের চেয়ার ম্যান সাহেব ইন্ডিয়া গিয়েছে ওনি না আসলে খবর বলতে পারছিনা। সম্ভবত ২/১ দিনের মধ্যে আসবে। ওনি এলে তোর আব্বা ফোন করে জানবে আর কত দিন লাগবে ভিসাটা বের হতে। আসলে ভিসা বের হতে তো শনি/মঙ্গল বারের ব্যাপার না কিন' ভিসাটা তো দিচ্ছে চেয়ারম্যান সাহেব ওনার উপরেরই নির্ভর করছে আর কতো দিন লাগবে। যাহোক, চিন' করিসনা শুধু ধৈর্য ধরে আল্লাহর নাম নে। হয়তো খুব শীঘ্রই হয়ে যাবে।
আমি যা জানতে চাই তুই তা ঠিক মতো জানাস না। এটা কিন' যোগাযোগের উত্তম মাধ্যম না। এই ধর অনেক বার বলেছি আমাদের সমিতিটার খোজ খবর কি, কত টাকা আয় ব্যয় হচ্ছে , ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি ইত্যাদি জেনে আমাকে একটু পয়েন্ট করে জানাবি। কিন' তুই জানাসনি।
যাহোক, আমি তোর আববা, মনির , জামাল আমরা সবাই ভালই আছি। আমার মোবাইলে টাকা নেই তাই মেসেজও পাঠাতে পারছিনা। বলবি কার্ড কিনলেই তো পারি, কিন' চাচা মিয়া ঐখানেই তো দুইটি কথা হ্যাঁ, দিরহাম গুনতে হয়। আগামী ৩ মাস চলতে খুবই কষ্ট হবে। কারন প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে পাঠাতে হবে। ১০ হাজার শিউলিদের আর ৫ হাজার তোর দাদা-দাদির জন্য। আমার বেতন কত তোকে সেটা বলছি মিথ্যা কথা বলছি না। মাত্র ১০০০/= দিরহাম মানে ১৭০০০/= টাকা। এটা গোপন করে কি আমার লাভ আছে, আমি অন্যান্য প্রবাসিদের চেয়ে সম্পূর্ন আলাদা। এখানে কোন কিছুই গোপন করছি না। যখন যা হচ্ছে বা ঘটছে ধারাবাহিক ভাবে আমি জানিয়ে যাচ্ছি। কারন, কোন তথ্য গোপন করে আমার যদি দু পয়সার লাভ হতো তা হলে বলা যেতো। সুতরাং আমার উপর যাতে কারো ভুল ধারনা না জন্মাতে পারে এজন্য সত্য কথাই বলে যাব। কথায় আছে সত্যের জয় সদা সর্বদায়। দুদিন আগে বা পরে।
আমার আশা ছিল সবার জন্য কিছু করার । কিন' তা আর হলো কোথায় । নিজেদের যে চাহিদা তাই পূরন করেতে ব্যর্থ হচ্ছি। তুই আয় তবেই বুঝবি আসলে বিদেশটা কি। এটাকি সত্যিই সোনার নগরি নাাকি অন্য কিছু।
আজ এখানেই রাখি ভাল থাক সকাল-বিকেল-সন্ধ্যঅ কিংবা রাত্তির।
শুভ কানানে- --- ফারুক কাকা।
ঊনত্রিশ.
Hi, Palash,
Just I received your nice and beautiful mail in your mother tongue Bengali. I'm really very happy on your appreciable letter. Palash, I want to place you some tropics, you can think, I think you can pass this time increase your career. You know if you want to learn the world more and properly you need have well some international language knowledge mostly English. This is very nice that you already realized the poorness of our English language knowledge. So, you can take admission at a English learning center and learn well the 4th language skill of talking, reading, listening and writing. You know how to write and read but you should learn more about talking and listening. If you go out site of the country you feel the English. Not only abroad see, in computer knowledge you need good English to learn computer. And you know nowadays nothing is working without computer. I`ll give you some information to lean English. When you take admission at a good English spoken center then you should
ত্রিশ
৪ আগস্ট, বৃহঃবার।
আরিফ,
অনেকদিন পর আজ লেখছি, কারণ এতদিন খুব ব্যস- ছিলাম। তো কেমন আছিস? আমি জানি খুব টেনশনে আছিস কবে দুবাই এর বালূ তে যাবো, তাই না? আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব এখনো ফেরেননি। গতকাল ওনার ফেরার কথা ছিল কিন্তু জানিনা কেন দেরি করছেন। যাহোক আরোকটু ধৈর্য্য ধর। আমি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ১৫ হাজার টাকা পাঠাবো। ১০ হাজার শিউলিকে সরাসরি পাঠিয়ে দিতে বলবি। আর ৫ হাজার তোর দাদাকে খরচ করতে বলবি। আমি পূর্বে যা বলেছি সেই ভাবেই কাজ করবো। টাকাটা গত বারের মতো জসিম ভায়ের মাধ্যমে পাঠাবো। আমি যোগাযোগ করার পর ২/১ এর মধ্যে জসীম আমাদের বাড়িতে গিয়ে বাবাকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে আসবে।
আর আমি পূর্বের চিঠিতে যা যা প্রশ্ন করেছিলাম আশা করি এবার উত্তর পাবো।
আর তোর আব্বা মেজু ভায়ের কাগজ জমা দিবে আগামী শনিবার দিন। ওনাদের কম্পানিতে প্লাবিং এর কাজে। আগামী ৪০ দিনর মধ্যেই ভিসা বের হবে বলে আশা করা যায়। এই খবরটা মেজূ ভাইকে মনে করে বলবি।
আজ আর নয়। কেমন করে সময় কাটাচ্ছি বিস্তারিত লিখে জানালে শুনবো।
একত্রিশ
১৫ আগস্ট, সোমবার।
আরিফ,
গতকাল তোর মেইল পেয়ে ঐ নম্বরে ফোন করেছিলাম কিন্তু ফোনটা বন্ধ ছিল। আজ আবার ফোন করে কথা বললাম। ঘটনা হলো কি রহিমাকে টিকেট কেটে কে দিবে? যাহোক আগামী বৃহঃবার তোর আব্বা নিজে গিয়ে রহিমার সাথে কথা বলবে এবং কি করা যায় দেখা যাবে।
পরবর্তী কথা হলো আগামী ১৭ আগস্ট জসীম ভায়ের বন্ধু নজরুল ভাই দুবাইতে আসছে। ওনি ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলেন। ওনার কাছ কিছু ওষুধ পাঠিয়ে দিবি। ওষুধ গুলো হলোঃ
1. Tablet: Cetrin 10 mg.
2. Tablet: Alben D/S 2 strips
১নং টেবলেট ১০০ টা আর ২ নং টেবলেট ২পাতা ( একপাতায় ২ টি টেবলেট) ওষুধ গুলো আমার জন্য এলার্জি এবং ক্রিমির টেবলেট। তুই আজই ওষুধ গুলো কিনে একটা প্যাক করে জসীম ভায়ের কাছে দিয়ে আসবি। ওয়াবদা রোড থেকে কিনলে একটু দাম কম হবে। যাহোক অবশ্যই কাজটা করবি। আর আমি ৫ হাজার টাকা তোর দাদার জন্য পাঠিয়েছি তা তোদের ঐ টাকার মধ্যেই সুতরাং তোর মাকে ৫ হাজার টাকা দিয়েদিতে বলিস। এ ব্যাপারে তোর আব্বাও কথা বলেছে। আর হ্যা আমিনুরকে একটু একাউন্ট নং দিতে বলবি। আগামী মাসে ইনশা আল্লাহ ওদের টাকাটা পরিশোধ করে দিব। আর সাথে একটু মোবাইল নং ও দিতে বলবি যাতে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়। ওষুধের টাকাটা তোর দাদার কাছ থেকে নিবি। মনে হয়ে দু শো টাকার মধ্যেই হয়ে যাবে।
যাহোক অবশ্যই কাজটা করবি।
ইতি --- তোর ফারুক কাকা।
বত্রিশ
১৭ আগস্ট, বুধবার।
আরিফ,
এইতো তোর মেইল পড়ে উত্তর দিচ্ছি। আসলে আরিফ আমি পড়ে গেছি এক কেচকি কলে। কেচকি কল বুঝিস? হ্যা রে, সবার জন্যই কিছু না কিছু করতে মনটা খুব ব্যকুল কিন্তু সামনে এগুতে যেয়ে আর পারিনা। তুই ই দেখ, বিদেশ এসেছি প্রায় ১৮ মাস। কি করতে পারলাম এই দীর্ঘ সময় বালুর চড়ে থেকে থেকে ? শুধু নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে এ সব ভেবে ভেবে। যা হোক আরিফ আমার আবিল গুলো একটু কমলেই কিছু একটু করতে পারব।
আরিফ, এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি, আজ বাংলাদেশে একযোগে প্রায় ৫০টি জেলায় বোমা হামলা ঘটানো হয়েছে। পুরো ইনটারনেটের পাতায় পাতায় আজ এই খবরই ভেসে বেড়াচ্ছে। আমি খবরটা পড়ে আতঙ্কে পরে গেলাম। সাথে সাথে বড় ভায়ের মাধ্যমে বাড়ির খবর নিলাম এবং তোর মোবাইলে বার বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। আমাদের সাভারেরও হামলা হয়েছে। পুরো বাংলাদেশটা কি তা হলে তালেবান রাজ্য হয়ে গেল নাকি। অনেক প্রাণ হানির আশঙ্কা করা যাচ্ছে। যা হোক ঘটনার কি জানিস বিস্তারিত জানাবি। আমিও এদিকে ইনটারনেটের পাতা চষে বেড়াচ্ছি সর্বশেষ খবরটি জানার জন্য। বাংলাদেশের অবস্থা খুবই শোচনীয়। এভাবে বোমা হামলা হতে থাকলে আমাদের অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে পৃথীবির মাটি থেকে । এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা এভাবে ভুলুন্ঠন হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। দেশের কথা ভাবলেই আমার কেমন যেন লাগে। হায়রে দেশ। এই হামলাকারী যেই হোকনা কেন কোন ভাবেই আমাদের মঙ্গলের জন্য এই নীচ এবং জঘন্য কাজ করেনি। আমাদের সোনার বাংলাকে পৃথীবির বুকে কলংকের কালো টিপ পরানোর জন্যই এই কাজ। আমি দৃঢ় ভাবে ঘৃনা জানাচ্ছি এই হামলাকারী চক্রকে।
আরিফ, একটু দেখে শুনে চলাফেরা করিস। কোন সময় কি হয় বলা যায়না। বাংলাদেশে এখন কারো কোন নিরাপদ নেই। এটা হচ্ছে আমাদের দেশের শাসক গোষ্ঠীর জন্য। দিনে দিনে চরমপন্থীদের রাজত্ব বেড়েই চলছে। যাহোক, উত্তর দিস।
আমি আজ খুবই দুঃখিত এবং ব্যথিত এই আতঙ্কগ্রস্থ সংবাদ শুনে।
আজ এখানেই রাখছি। ভালো থাকিস।
ইতি-- ফারুক কাকা, দুবাই।
আরেক কথা, তোর মেইল খুলে কিছু ভাইরাস বহনকারী মেইল পেলাম। আমি ওগুলো ডিলিট করেদিয়েছি। তুই ভুলেও কখনো বাল্ক ফোলটারে জমা পড়া মেসেজ খুলবিনা। ওগুলো ভাইরাস।
তেত্রিশ
রবিবার।
আরিফ,
তোর মেইল পেলাম এবং উত্তর দিচ্ছি। আমরা বোমা হামলার বিস-ারিত খবর ক্যাবল টিভিতে জানতে পেয়েছি। যাহোক দেশের অবসথা বেশ একটা ভাল না। একটু সাবধানে চলাফেরা করিস। এখন বাবার সাথে দুই চারটা কথা বলছি।
বাবা,
আমার সালাম নিও এবং মাকেও আমার সালাম দিও। আমি দুবাইতে ভালই আছি। আমার জন্য কোন চিন-া করোনা। আমি গত ১৭ তারিখে তোমার পাঠানো ওষুধ গুলো বুঝে পেয়েছি এবং সাথে একখানা চিঠিও পেয়েছি। আমি বিস্তারিত চিঠি পড়ে জানতে পারলাম। যাহোক, আমি জানি তোমাদের যা আমি পাঠাই তা হয়তো কিছুই হয়না কিন্তু বাবা তো চেষ্টা করি একটু বেশি করে পাঠানোর জন্য কিন্তু একটার পর একটা আবিল এসে যায় । যাহোক শিউলিদের টাকাটা সেরে দিলে আমাদের আর বড় কোন ঋন থাকবেনা। আমি আশা করছি আগামী মাসের ১০/১২ তারিখে শিউলির টাকা গুলো পরিশোধ করবো। কিন্তু টাকা গুলো সারতে আমাকে আবারও ঋন হতে হচ্ছে। বাবা আমার আর ভাল লাগেনা একটা ঋন সেরে উঠতে না উঠতেই আবার আরেকটা ঋন এসে পড়ে। ১৮ টা মাস হয়ে গেলো বিদেশে এলাম দুঃখ হলো এখনো কিছুই করতে পারলামনা। শুধু সময়ের অপচয় হলো। ঋন হাতে নিয়ে চলা যে কি বিরক্তিকর তা তিলে তিলে বুঝতে পারছি। একটি মাস যেন একটি বছরের মতো। যাহোক আবার জন্য দোয়া করো যাতে সকল ঝামেলা কুলিয়ে উঠতে পারি।
মেজূ ভায়ের ব্যাপারের লিখেছো, হ্যা- মেজুভায়ের কাগজগুলো বড় ভাই এর কম্পানিতে জমা দিয়েছে বড় ভাই বলছে আগামী মাসের ১৫ তারিখের ম্রেধ্যই ভিসা বের হবে। দেখা যাক কি হয়।
তোমরা ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া এবং ওষধ পত্র খেয়ে নিও। আমার জন্য কোন চিন-া করোনা। আমি ভাল আছি। তোমাদের সুকুশল কামনা করে আজ এখানেই রাখছি। ইতি-- তোমাদের ফারুক।
আরিফ, আজ এ পর্যন্তই।
চৌত্রিশ
২৮/০৮/০৫
রবিবার।
আরিফ,
তারপর কি খবর? মনে হয়ে ভাল নেই বিভিন্ন চিন-া ভাবনায়, ঠিক না? বিভিন্ন চিন-া বলতে বসে বসে আর কত দিন এই আর কি তাই না? যাহোক, সেদিন তোদের সাথে নেটে কথা বলে খুব ভালই লাগলো। বেশি ভাল লেগেছে সাদের সাথে কথা বলে। বুঝতে পারলাম অনেকদিন ধরে ঘর ছেড়েছি। যার মুখে ভাষা ফুটেছিলনা, সে আজ কথা বলতে শিখেছে, কবিতা বললে শিখেছে, আরো কতকি! সাদের মুখে যখন শুনলাম ‘‘ মামা আপনি কেমন আছেন?” তখন সত্যিই উপলব্ধি করলাম হ্যাঁ ঘর ছেড়েছি আজ বহু দিন হয়। তোদের বিদেশে আসার জন্য মনটা আনচান করছে আর আমাদের দেশের মাটি একটি বারের মতো ছোয়ে দেখতে বড় আশায় আছি। জানিনা কবে ফিরবো আমার সোনার বাংলায়। আজো পাখি ডাকে ভোর হয় আমার সোনার বাংলায়, আজো সূর্য অস- যায় গুধুলী ছড়ায় সন্ধ্যাকাশে। নীড়ের পাখি নীড়ে আসে ফিরে, ফেরা হলোনা আজো আমার, দেখা হলোনা আমার মেহগানী গাছটি আজ কত বড় হয়ে গেছে, টিউবওয়েলের পাশে আমার নিজের হাতে লাগানো আমলকি গাছটির কি হাল হয়েছে তাও জানিনা। আজ মনে হয় পাতায় পল্লবে ছেয়ে গেছে আমার সেই সখের আমলকি চারাটি। ডালিমের শাখায় আজো ফুল-ফলে ভাড়ি হয়ে নুয়ে পড়ে মাটির পাণে খুব ভোরে ওঠে দেখা হয়না সেই নিশ্চুপ দৃশ্য। আমার এ বাণী আজ তোদের কাছে আবোলতাবুল মনে হচ্ছে তাই নারে? কিন' আমি জানি, আমার মন জানে কত টুকু মর্মবানী বিধে আমার হিয়া তলে।
থাক আজ, লিখাব আবার একদিন।
ফারুক কাকা।
পঁয়ত্রিশ
৩১/০৮/০৫
আরিফ,
আজ একটু লেখতে বসলাম। এটা আমার অফিস, বসে আছি কম্পিউটারের সামনে। এটাই আমার চেয়ার। সাড়া দিন কাটে ওটার ওপরই। কখন দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে তা বুঝিনা অফিসের চার দেয়ালের ভেতরে বসে।
আজ মাসের শেষদিন আজ নিতে হবে ইনভেন্টরী অর্থাৎ সকল স্টক চেক করার পালা। একমাস বিভিন্ন মালামালের রিসিভ এবং ইস্যু করার পর দেখতে হবে মালামাল ঠিকঠাক আছে কিনা। সুতরাং আজ থাকতে হবে আমাকে প্রচন্ড ব্যস-। আগামী কাল সবে মেরাজের সরকারী ছুটি। আজ রাতেই জেগে ইবাতদ করতে পারলে অনেক ছোয়াব হাসিল হবে। রাতটি অতিব গুরুত্বপূর্ন। এই রাতের মহিমা অনেক।
আরিফ, চান্দহর থেকে যে লোকটা আসবে তার কাছে পারলে একটি নুনা ইলিশ দিয়ে দিস। আর শিউলি যা দিতে চায় তা যেন দিয়ে দেয়। আমার বিশেষ কিছু চাওয়ার নেই।
আরিফ, এই ছবিতে যাতে আমার পাশে দেখছিস ওনার নাম হারজিৎ সিং, ওনার কাছ থেকেই প্রথম শিখি কিভাবে কি করতে হবে। একদম এ টু জেড ওনি আমাকে হাতে কলমে শেখান। ওনার বাড়ি ইন্ডিয়ায়।
এখানে যে ছবিটি দেখছিস ওনার নাম মি. তেজা সিং। ওনি আমাদের পারসেজ ম্যানেজার। হোটেলের যাবতীয় মালামাল ওনিই খরিদ করে থাকেন। ওনি ফ্যামেলি নিয়ে দুবাইতেই থাকেন। দুবাইতে তিনি আছেন দীর্ঘ ১১ বছর ধরে।
আজ থাক। আবার লিখবো সময় পেলে।
ভাল থাক সবাই কে নিয়ে, আর এই প্রত্যাশায়
আজকের মতো এখানেই ইতি----
প্রিয় ফারুক কাকা।
ছত্রিশ
৬/০৯/০৫
আরিফ,
যদিও ব্যস-তা থেকে এখনও ওঠতে পারিনি তারপরও লেখছি দুকমল। হ্যাঁ আছি ভালই। বলতে হয় তাই বলা। কারন, আমাদের চেয়ে দুরবস্থায়-ও অনেক মানুষ জীবন যাপন করে যাচ্ছে। কি লিখব অফিসের কাজের ভিড়ে মোড হারিয়ে ফেলি লেখার। যখন সময় পাই কিছু লেখার তখন কম্পিউটার থাকেনা হাতের কাছে। ও সেদিন বলে ছিলাম চান্দহর থেকে যে লোকটা আসছে ওনার কাছে যদি পারিস একখানা নুনা ইলিশ দিয়ে দিস খুব ভাল করে প্যাকিং করে। এর সাথে একখানা ছবি পাঠালাম। এটা আমার অফিস, বসে আছি কম্পিউটারের সামনে। এটাই আমার চেয়ার। সাড়া দিন কাটে ওটার ওপরই। কখন দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে তা বুঝিনা অফিসের চার দেয়ালের ভেতরে বসে। দেখে নিস। আজ থাক।
ফারুক কাকা।
সাঁইত্রিশ
৮/০৯/০৫ সকাল সাড়ে ৯টা।
আরিফ,
কথা হলো আজ সকাল ১০টায় ইরান এয়ার লাইন্সের একটি ফ্লাইট (ফ্লাইট নং ৬১১) দুবাই থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। ওটা ঢাকায় পৌছবে ঢাকার সময় বিকেল প্রায় ৪টায় । ঐ ফ্লইটে রহিমা আজ দেশে ফিরে যাচ্ছে। রহিমার হাতে থাকবে একটি হ্যান্ড ব্যাগ, কালো বোরখা পরা। তাছাড়া একটাই কার্টোনে বাধা মালামাল থাকবে। তোরা না চিনলেও ও তোদের কে চিনতে পারবে। এখন বাকি কথায় আসি। আমি অল্প কিছু জিনিস দিয়েছি ওর কাছে। কি কি দিয়েছি নিচে বাবা ও মার সাথে কথা বলে বলেদিচ্ছি----
মা ও বাবা,
আমার সালাম নিও। আশা করি ভালই আছো। আমিও তোমাদের দোয়ায় ভালই আছি। আমি রহিমার কাছে অল্প কিছু জিনিস পাঠিয়েছি। হাতে টাকা ছিলনা তাই কিছু কিনতে পারিনি। যা হাতে ছিল তাই পাঠিয়ে দিলাম। যা পাঠিয়েছি--
১. ১০/১২ টি টি-শার্ট
২. ২টি বড় টাওয়েলস্
৩. ১৫/১৬ টি সাবান
৪. ১টি লুশন
৫. ১টি শ্যাম্পু
৬. ১টি কাশমিরি শাল ( মার জন্য)
৭. বেশ কিছু পুতুল ( বাচ্চা দের জন্য)
মা, তুমি জিনিস গুলো বুঝে রেখে তোমার ইচ্ছা মতো যাকে খুশি তাকে দিবা। আমি আগামী শনি/রবিবার বেতন পাবো, বেতন পেলে তোমাদের জন্য এবং শিউলির ঋনের টাকাটা পাঠিয়ে দিব। আমি বেতন পেলে একবার তোমাদের সাথে ফোনে কথা বলবো। বড় ভায়ের কাছে শুনলাম সারোয়ার নাকি ঝগড়া বিবাদ করে বাড়িতে আগুন লাগাতে চেয়েছিল আর ওর বৌও নাকি যা তা ব্যবহার করেছে মার সাথে। আমি দু/একের মধ্যে কথা বলবো। যা হোক আমার জন্য দোয়া করো। আজ এখানেই রাখি।
ইতি - তোমাদের ফারুক।
আটত্রিশ
১১ সেপ্টেম্বর, রবিবার।
আরিফ,
আবার লেখতে শুরু করলাম। কেমন আছস? আশা এবং ভরসা দুটো মিলিয়ে বলতে পারি ভালই আছিস দেশের মাটিতে। আর দোয়াও থাকছে ওমনটিই।
জরুরী কথা হলো আগামী ২২ তারিখে রাবিয়া আসবে। ওনার কাছে তোর আব্বার জন্য নিচে উল্লেখিত ওষুধ গুলো দিয়ে দিবি। তোর মাকে বলবি ওষুধ গুলো কিনে দেয়ার জন্য।
Losectil (Omeprayole BP) 20 mg
সংখ্যা ৫০ টি । মনে করে অবশ্যই পাঠিয়ে দিবি। এখন বাবার সাথে কিছু কথা বলছি---
বাবা,
আমার সালাম নিও। আশা করি ভালই আছো। বাবা, আমি শিউলিদের ঋন পরিশোধ করার জন্য ৩২ হাজার ৫ শত টাকা পাঠিয়েছি। আর তোমাদের জন্য ৫ হাজার। মোট সাইত্রিশ হাজার পাঁচশত টাকা।
ওদের টাকাটার হিসাব হলো আসল টাকা ২৫০০০/ এবং ৬ মাসের সুদ ১২৫০x ৬ = ৭৫০০/ মোট ৩২,৫০০/=
বাবা, আমি এই ঋনটা সাড়ার জন্য আমার এই মাসের বেতন এবং আরো ২০ হাজার টাকা হাওলাদ করেছি। আমার বেতন মাত্র ১০০০ দিরহাম। বাংলাদেশী টাকায় আসে ১৭ হাজার ৮০০ টাকা। আমি মিথ্য বলে কি করবো, যা সত্য এবং বাস-ব সেটাই আমি বললাম। এই হাওলাদের টাকা সাড়তে আগামী মাসেও হবে না। যা হোক, আমার যত কষ্টই হোকনা কেন আমি প্রতি মাসেই তোমাদের জন্য কিছু না কিছু করে টাকা পাঠাবো। শিউলিদের টাকাটা আমিনুরের কাছে বুঝিয়ে দিও। মোট ৩৭৫০০/ টাকা আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই হাতে পেয়ে যাবে।
আমার জন্য দোয়া করো যাতে শরীরটা ভাল থাকে ঠিক মতো কাজ করতে পারি। আমিও তোমাদের জন্য দোয়া করি তোমরাও যাতে শানি-তে সময় কাটাতে পারো। বাবা, আরেকটি কথা, সেদিন মার সাথে কথা বলেছি, এখন আমাদের ৩টা গরু হয়েছে। আমি যে বাছুর টা দেখে এসেছিলাম সেটাও নাকি গর্ভবর্তী হয়েছে। শুনে খুব খুশি হলাম। কিন' বাবা, এই গরু গুলো লালন-পালন করার জন্য তোমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বিশেষ করে মার খুব কষ্ট হয়। তাই আমি বলছিলাম কি তুমি একজন ছেলে রাখো গরু বাছুর গুলো দেখার জন্য। এই ঋনটা সাড়ার পর আমার আর ঋন থাকবেনা। তাই আমিও বেশি করে টাকা পাঠাতে পারবো।মা বলছিল গরু গুলো বিক্রি করার কথা। বাবা, তুমি ভুলেও বিক্রি করার কথা চিন্তা করো না। আমি যে ভাবে বললাম তুমি তাই করো। একজন লোক রেখে গরু গুলো পালো। আজ তা হলে এখানেই রাখি। আল্লাহ হাফেজ।
ইতি- তোমাদের ফারুক।
ঊনচল্লিশ
১২ সেপ্টেম্বর, সোমবার।
আরিফ,
আরেকটি নিউজ, রাবিয়ার কাছে অথবা চান্দহর থেকে যে লোকটা আসবে ওনার কাছে এন্ড্রো কিশোরের আধুনিক গানের অডিও ক্যাসেট "বার বার ফিরে আসি" এ্যালবামটি পাঠিয়ে দিস আর পারলে সাথে কয়েকটি বিভিন্ন গানের অডিও সিডিও দিতে পারিস। সম্ভবত মনিরদের বাড়ি থেকে কিছু জিনিস দিবে হয়তো বা ওষুধপত্র হতে পারে যা-ই দেক একসাথে প্যাক করে পাঠিয়ে দিস। কালরাতে ফোনে কথা বললাম বাবা, মা এবং তোর সাথে, ভালই লাগলো। আসলে মোবাইলে কথা বলতে গেলেই ঘড়ির কাটা খুব দ্রুত চলতে থাকে। আর কাটা চললেই কার্ড ফিনিশ। যাহোক, জানতে ইচ্ছে হয় লেটেস্ট নিউজ। গতকাল প্রথমে ফোন করে ছিলাম হুজুরের মোবাইলে কে যে ফোন রিসিভ করলো আর বলতে ছিল হুজুরের মোবাইল এখন আমার কাছে হুজুরের কাছে নেই। আমি এদিক থেকে চিললাতে চিললাতে আমার পরিচয় দিচ্ছি আর ওনি বার বার বলছে আপনি কে? কে? কে?
ওকে আরিফ, এখন রাখি। ভাল থাকিস সবাইকে নিয়ে। আল্লাহ হাফেজ।
ফারুক চাচ্চু।
চল্লিশ
18/09/2005, Sunday.
Dear Palash,
I'm very happy with your mail. Today just I read your nice mail. And I have received your invitation also, same day I'll be there at the Durga Puza festival. Bud I'll attain there a little bit other way. Actually I'm always with you. If you realize me then I'll be very closest to you. I was, I'm and be also with your all activities too. You can say, this is my nature- this is my habit from my childhood. Palash, I want to make a good and fast communication what will be the current global system and I think it must be by the Internet. That means I want to proper utilize of Internet technology from our rural step. You know-- nowadays this is a part of our life. Without this technology we can't run only one step also. I want to right use of IT. We can share of our every day's happening, whatever good, whatever happy, wherever movement, whichever incident what strain away in our life each and every thing we can show or place on this World Wide platform. Palash we have to do something for our country you know? So, think how we can do something for our motherland dear Bangla. We don't have developed country, actually we are not changing our nature our thinking our old conception. No the world is very fast into this current why we'll not step fast. We also can bring something good for ourselves what is going something good scour for our country. Now all over the country is under of terrorism. We should change our fundamental conception. Whoever of us can do respective religious activities and can get peaceful environments.
Palash I need to meet with you online first by Yahoo messenger, I wrote to Arif to show you the processor of operating of Yahoo messenger and how you can talk to me easily. So, learn first this technique.
I'm praying for all of you a good result. I think and belief that you'll achieve a good result. So, don't worry. My regards same to Prakash, Bhajan, Dilip, Gonesh, and rest of your friends and your family member too.
Your Lovely
Faruque Da.
একচল্লিশ
আরিফ,
নিচের বাংলাদেশী ছবি গুলো তোর আব্বার জন্য পাঠাতে বলেছে।
ঝিনুকমালা
বেহুলা
বিনিসুতার মালা।
আর মমতাজের একক বৈঠকী গানের ভিডিও সিডি।
উপারের পলাশের একটি মেইল আজ পেলাম। আগামী সপ্তাহে ওদের রেজাল্ট দিবে খবরটা আমাকে জানাবি। আর ওকে একটু দেখিয়ে দিবি কিভাবে নেটে কথা বলা যায়। এ ব্যাপারে ওকে একটু বিস-ারিত বলেদিবি। পারলে একদিন নেটে এসে বুঝিয়ে দিবি।
ফারুক। ১৭/০৯/০৫
বিয়াল্লিশ
আরিফ,
এতক্ষন প্রায় ১ঘন্টা লেখার পর ভুল বশত সব গুলো লেখা ডিলিট করে ফেলেছি। যা হোক এখন রাত প্রায় ১১ টা এখন শুধু দরকারী কয়েকটি কথা বলছি । প্রথমে বাবার সাথে ---
বাবা, আমার সালাম নিও। দুপুরে কথা ক্লিয়ার ছিলনা বলে কথা বলে ভাল লাগেনি। ওদের টাকাটা ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না। যা হবার হয়েছে। ঋন পরিশোধ হয়েছে এটাই বড় কথা।
বাবা, আগামী কাল মুসলেম ভাই এলে ওনার কাছে পারলে ২টি সেন্ডেল গেঞ্জি পাঠিয়ে দিও। রাবিয়ার কাছে যা পাঠিয়েছিলে তা আমরা মিলেমিশে খেয়েছি। নুনা ইলিশ আমরা ফ্রিজে রেখে রেখে খাচ্ছি। গত কাল কিছুটা পাকিয়েছিলাম। আমরা একদিন পাকালে ২/৩ দিন ফ্রিজে রেখে রেখে খেতে পারি। তা ছাড়া আগামী ৪/৫ দিন পর রোজা। এসময় রান্না বান্না দরকার হবে না। কারন, তখন রোজাদারদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকে হোটেল থেকে। যাহোক, আমার জন্য চিন্তা ভাবনা করোনা। ঠিক মতো ওষুধপত্র খেয়ো এবং মার দিকেও খেয়াল রেখো।
বাবা, আগামী মাসের ২/৩ তারিখের মধ্যে বড় ভাই ১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিবে। যে টাকাটা আমি তাকে মেজু ভায়ের টাকা জমা দেয়ার সময় হাওলাদ দিয়েছিলাম। ঐটাকা দিয়েই বাবা ঈদের আগ পর্যন্ত চলতে হবে। আশা করি চলতে কোন সমস্যা হবে না। আর আমি ঈদের সময় আবার টাকা পাঠিয়ে দিব।
বাবা, আমরা ৩ জনে মিলে একটি কম্পিউটার নিয়েছি। রুমে বসেই এখন তোমাকে চিঠি লিখছি। ইন্টারনেটের সংযোগ থাকলে তোমাদের সাথে কথা বলা এবং ছবি দেখা যাবে। পরে সেটা করবো।
বাবা, আজ এখানেই রাখি। পরে আরো লিখবো বিস্তারিত। আর সেই প্রত্যাশায় তোমাদের ফারুর।
আরিফ, তিন পৃষ্ঠার একটি ডিলিট হয়ে যাওয়ার পর একটুও মন বসছেনা কি বোর্ডের সামনে। তাছাড়া, রাতও বেড়ে চলছে। পরে আবার লেখবো আজ রাখি। আর আরিফ, মুসলেম ভায়ের কাছে পারলে কিছু বিভিন্ন হিন্দি বা বাংলা গানের ভিসিডি পাঠাতে পারিস। পারলে ইত্যাদির কোন ভিসিডি , ইত্যাদি হাসির সিরিজ পাওয়া গেলে পাঠাবি। এখন তো কম্পিউটার হয়েছে ইনজয় করা যাবে আর কিছু টাইম পাস করা যাবে।
এখন আর না পরে লেখবো। শুভ রাত্রি।
ফারুক কাকা।
২৭ সেপ্টেম্বর, রাত প্রায় ১১ টা ৩০ মি.
তেতাল্লিশ
অভিবাদন!! অভিবাদন!! অভিবাদন!! অভিবাদন!! অভিবাদন!! অভিবাদন!! অভিবাদন!! অভিবাদন!!
এক গুচ্ছ লাল গোলাপের অভিবাদন। সন্ধ্যায় তোমার মেইল পেলাম এবং পড়ে রেজাল্টের কথা জানতে পারলাম। কিন্তু দু:খের ব্যাপার দিলীপের কথা শুনে। আমি বোর্ডের ওয়েভ সাইটে গিয়ে তোমাদের বিস্তারিত রেজাল্ট সংগ্রহ করলাম। কিন্তু প্রকাশ, পলাশ এবং গনেশ ওদের কারো রোল নং জানাওনি। ওদের খবর গুলোও শুনতে বা জানতে ইচ্ছে করছে। আমি জানি তোমার মন ভাল নেই। কিন্তু ভজন, তুমি এখন বড় হয়েছো বুঝতে শিখেছো তোমাকে আমি কি বলবো। তুমি আমাকে জানাও তুমি কি করতে চাও। আমি তোমাকে যতদূর পারা যায় সহযোগিতা করতে কার্পন্য করবো না। কিন্তু আমার সামর্থের বাহিরে আমি আমার নিজের জন্যও যেতে পারিনা, ঠিক না? তবে আমার মনে হয়কি, তুমি গ্রেজুয়েশন টা করে ফেলো। হয়তোবা বলবে পড়াশোনা করে কি হবে বা লাভ কি। দেখো ভজন, পড়াশোনা যা বা যতটুকু করতে পারবে তার থেকে কেউ ভাগ বসাতে পারবে না। চার পাশের বেকারত্বের বিশাল জনগোষ্ঠির দিকে তাকিয়ে হয়তো আমার কথা মানতে মোটেও চাইবেনা। কিন্তু প্রবাসে যদি আসতে চাও তাতে আমি বারন করবো না। আমি শুধু এর সারমর্মটা তোমাকে বলতে পারবো। তোমার মাঝে তুমি নেই তা আমি ভাল করেই জানি এবং উপলব্ধি করতে পারি। কিন্তু আমি বলবো এতদিন যা তুমি করেছো তা সম্পূর্নটাই ভুল করেছো। আর ভুলই বা যদি না করে থাকো তা হলে সে কেনো অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে অনেক দূরে চলে গেলো। এটতো নিতান্তই একটি ছলনা বা গেইমস ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করা যায় না।
আমি প্রেম বা ভালবাসার সংগা দিতে পারবো না তবে, আমার দৃষ্টিতে আমি তাকেই প্রেম বা অন্ধ এক আকর্ষন তাকেই বলবো বা বুঝি যা দুটি মানব মনের মাঝে অদৃশ্য এক বন্ধন বা একাত্বতা। ভাল লাগলো তাই কিছু দিন বা কিছু কাল খেলার ছলে কাটালাম ওটা প্রেম না বা তা ভুলেও হতে পারেনা।
অনেক কথাই আজ তুমি বলতে চাওনা বা বলতে ইচ্ছে হয়না। আমি জানি তা কেন হয় না বা কোথায় হারিয়ে গেলো সেই তনমনে চঞ্চলতা। চটপটে মন আজ সত্যিই হারিয়ে যাচ্ছো তাকে বুঝতে পেরে এটা আমি দূর থেকেই খুব ভাল করে জানতে পারি। কিন্তু আমি বলবো যাকে তুমি এত কাছে নিয়ে এসেছিলে আর সে তোমাকে এতদূর ঠেলে দিতে পারলো তাকে নিয়ে তুমি ভাবতে পারো না। পৃথিবী চলমান, কেউ থেমে নেই এই ধরার বুকে সুতরাং এগিয়ে যাও সামনের দিগন্তে। বুক ভরে নি:শ্বাস নাও, এগিয়ে চলো চলমান পৃথিবীর চক্রে।
গতকাল ধন্যর সাথে কথা হলো ও বললো তোমার বড় ভাই নাকি বিয়ে পরে করবে, বিয়ে ঠিক হওয়ার পর নাকি সে সিদ্ধন্ত পাল্টিয়ে ফেলেছে। তোমার ব্যাপারেও কথা বললাম। এখন দুবাইতেও ভিসা বের করা খুবই ট্রাফ হয়ে এসেছে। বাংলাদেশের ভিসা দিতে খুবই সমস্যা করে।
তোমার বর্তমান অভিমত কি তা জানিয়ে আমার কাছে বিস্তারিত লিখ। মন খুলে বলে তোমার মনের কথা। আমাকে ইনটারনেটে পাবে শুক্রবারে। তাও তোমাকে বৃহ:বার রাতে মোবাইল মেসেজ দিয়ে কনফার্ম করে নিতে হবে। নেটে কথা বলা যায় সুলভ ভাবে। তার আগে ইমেইলে বিস্তারিত জানাও।
আমি কম্পিউটার নিয়েছি রুমে। এখন রাত ১১:১৫ মি. একা বসে বসে তোমার সাথে লিখালিখি করছি। ইনটারনেট কানেকশন নেই। তবে ভবিষ্যতে নেবো। আর তখন যোগাযোগের আরো উন্নতি হবে।
ভজন, সব ভুলে যাও । কিছু কাজ করো। মানুষের জন্য। আমাকে জানাও তোমাদের সমিতির খবরাখবর। কিভাবে কি করছো, কি তোমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা বা কি তোমাদের মূল নীতি ইত্যাদি আমি দূরে বসেই তোমাদের সাথে যোগ দিতে চাই প্রতিটি মিটিং এ। আমি দেশের জন্য কিছু না কিছু করতে চাই। কিছু না কিছু ভাবতে চাই দেশের মানুষের জন্য।
আজ কাল ইনটার নেটের যোগ। এটাকে দুর মনে করতে পারো না। সব কিছু চলছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। আমি এই প্রযুক্তির আশীর্বাদ ছড়িয়ে দিতে চাই আমাদের গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে। আমি চাই গ্রামের মানুষরাও এর সুফল ভোগ করুক। দূরকে ভুলে যাক, দুর হয়ে উঠুক খুবই নিকট। আমি জানি তোমার কাছে এ সব কথা ভাল লাগছেনা।
আমি পরে লিখবো। প্লিজ, আমাকে বিস্তারিত লিখো।
আজ সেই প্রত্যাশায় ইতি বলছি।
ফারুক দা।
চৌচল্লিশ
আরিফ, এই চিঠিটি সুব্রতকে পৌছে দিবি। ধন্যবাদ।
২৮/০৯/২০০৫, বুধবার।
সুব্রত,
তোমার মনে পড়ে কি আজ থেকে প্রায় ১৯ মাস পূর্বে বলেছিলে, যখন খুব একা মনে হবে যখন খুব নিঃসঙ্গ মনে হবে নিজেকে তখন বেছে নিতে পারেন একখানা কমল আর কিছু কাগজ যা মনে এসে তাই যেন লিখে যাই, যা আসে মনের চিত্রপটে। কথা গুলো আজ বড়ই মনে পড়ে এবং স্মরণ করি হৃদয়ের মর্মে মর্মে। আজ বড়ই একা বড় অসহায় আর বড় দূরে একান্তই একা। কিন্তু এই একাকীত্বে তোমাদের সংগ পেতে চাই, আর এই হাজার হাজার মাইল পথের দূরত্বকে ভুলতে চাই তোমাদের সকল কাজের মাঝে যোগদানের মাধ্যমে। তুমি কি চাও না প্রতি দিন না হোক সপ্তাহের ৭ দিনের অন্তত একটি দিন ফারুকদার চরন পড়ুক তোমাদের দ্বারে? ঝড়ের রাতে প্রচন্ড ঝড় বাহিরে, সিঁড়ির মাঝপথে আটকে থেকে ঝড়ের শেষে যখন দরজার কড়া নেড়ে বললাম সুব্রত !!! আর তখন পরিচিত চির চেনা কন্ঠের আওয়াজে দরজা খুলে পেয়ে যেতে চলন্ত এই পথিকটিকে আর বুকে জড়িয়ে নিতে আমার ভেজা শরীরের দিকে না তাকিয়ে। কথা গুলো কি মনে পড়ে? আমি আজও থাকতে চাই অমনটিই। কিন্তু ভাবছো কি করে? দুনিয়া এগিয়ে চলছে, এগিয়ে গেছে যোগাযোগের অনেক মাধ্যম। আজ ইন্টানেট এনেদিয়েছে সেই অম্ভব সুযোগ। আজ আমরা ঘরে বসে দুনিয়ার সকল বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে পারি কি বোর্ডের বোটম টিমিয়ে আর মাউস ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে। তুমি কি চাও না এই তথ্য প্রযুক্তির স্রোতে আমরা সকল বন্ধু ঝাপিয়ে পড়ি?
বড় দুঃখ হয় তোমাকে নিয়ে আজ প্রায় দুই বছর হয়ে চললো না একটা চিঠি না কোন খবর তোমার পেলাম। আজ বড় খুশির খবরটিও আমার জানা হলোনা। গত ২৬ তারিখে তোমাদের রেজাল্ট আউট হলো। যাদের রোল নং জানা ছিল তাদের রেজাল্ট তো সাথে সাথে জেনে নিলাম। নেটের জগতে প্রবেশ করে। কিন্তু দুঃখ হলো তুমি পরীক্ষা দিলে কি দিলে কেমন দিলে কি তোমার রোল নং, কিছুই আমার জানার আওতায় নেই। আমরা এক তৃতীয় বিশ্বের অধিবাসী হয়েও পড়ে আছি অন্ধকার আদি যুগে। কিন্তু আমার প্রশ্ন কেনো?
আমি জানতে চাই কেনোর উত্তর। শুধু একবার সাথে যোগাযোগ করো আমি তোমাকে প্রসেজার বলে দেবো কিভাবে যোগাযোগ করবে। সুব্রত, তোমার কি মনে পড়ে আমরা দুবছর পূর্বে রেস্ট্রি অফিসের কম্পিউটারের সেই সেন্টারে আয়োজন করে ছিলাম কুইজের আসর? তোমাদের সকল কে একত্র করে কি আনন্দই না করেছিলাম কুইজের নাম করে। তুমি কি ভুলে গেছো্ আমাদের অনেক কাজ বাকি। সময় চলে যাচ্ছে। বসে থেকো না। ভাবো দেশটাকে নিয়ে। এগিয়ে এসো সকল বন্ধুদের নিয়ে। এসো আমরা কিছু করি। কিন্তু কি করবো তা আমরা মিটিং এ বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে ঠিক করবো। আমরা অবশ্্যই করতে পারি কিছু না কিছু।
এখন তুমি খুব ব্যস্ত তা আমি জানি। কারন, তোমাকে ভর্তি হতে হবে ভাল কোন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষার জন্য। আর অবশ্যই তার জন্য দরকার কঠুর অধ্যাবসায়। আর এরই ফাকে ফাকে ভাবতে হবে আর দশজনের কথাও।
আমার সাথে একটি দিন তুমি বসো। আমি অনেকবার আরিফের মাধ্যমে মেসেজ দিয়েছি কিন্তু তুমি একটি দিনও আসতে পারোনি বা এক কলম লেখাও পাঠাতে পারোনি।
যা হোক, আগামি একদিন আমার সাথে ইন্টারনেটে কথা বলো। সময়টা আরিফের মাধ্যমে জানতে পারবে। আজ থাক সময় রাত প্রায় সোয়া এগারোটা। আশা রইলো সদোত্তর পাবো খুব শীঘ্রই।
সেই প্রত্যাশান্তে---- প্রিয় ফারুক দা।
পঁয়তাল্লিশ
৩০ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার, রাত: ৯:৪৭ (শুরু)
ছিল আজ ছুটি। ছুটি মানে একটি বন্দি দিন। নিরব কাটানো একটি দিন। এখানে ছুটি সেই রবি ঠাকুরের ‘‘ছুটি” কবিতার মতো আর লাগে না। কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, এমনটিও লাগার অবকাশ। কোথায় যাবো কোথায় হারিয়ে যাবো, যেখানেই যাই না কেন বালুর উত্তাপ থেকে বের হতে পারবোনা। নেই কেন সেই পাখি নেই কেন, এ গানও আর অন্তরে ধরে না। কোথায় এসে বন্দি হয়েছি আমি নিজেও জানিনা। এই খাচা ভাঙ্গবো আমি কেমন করে, এই গানই গেয়ে যায় অন্তরের অন্তপুরে প্রতিটি ক্ষনে ক্ষনে। কিন্তু লাভ হয়না।
আরিফ, আজ ছুটি থাকা সত্ত্বেও অফিসে যাওয়া হয়। কারন, আজ ছিল এ মাসের শেষদিনটি। আগেও বলেছি মাসের শেষ মানে ইনভেন্ট্রী। আর ইনভেন্ট্রী মানে স্টক চেক করা। তো আজ জুম্মার নামাজের পর খাওয়া দাওয়া করে অফিসে গেলাম। তখন মেইল বক্সে পেলাম তোর পাঠানো মেইলটি। পড়লাম মেইলটি। জানতে পারলাম কিছু তথ্য। জানি তোর মেইল চেক করতে বা নেটে আসতে ইত্যাদিতে একটা খরচ হয়। তুই সপ্তাহে একটি দিন নেটে আয়। হতে পারে প্রতি বৃহঃবার সকালে। আমি প্রতি দিন বা যখন মনে চায় যা খুশি আবুলতাবুল লেখাগুলো পাঠিয়ে তোর ইনবক্সটা ভরে রাখবো তুই লেখাগুলো যার নামে লেখা হয়েছে তার তার কাছে পৌছে দিবি এইটুকুই আমার অনুরোধ।
আর এর জন্য যা খরচ হবে তা তুই তোর দাদার কাছ থেকে চেয়ে নিবি। বলবি ফারুক কাকা এই অনুরোধটুকু করেছে। আর ইমারজেন্সি কখনো নেটে ডাকলে কখনও একই ভাবে যথাসম্ভব থাকতে চেষ্টা করবি।
তুই এর আগে বলেছিলি যে, কাকা আমার ভাগ্যে কি বিদেশ আছে কোন দিন? কথাটা আমার কাছে উল্টোভাবে অনুভব হয়, আমার প্রশ্ন তোদের কাছে এভাবে... আমার ভাগ্যে কি ¯স্বদেশের মাটি আছে কি কোন দিন? প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি সেকেন্ডে সেকেন্ডে শংসয় হয়, আর ভয় হয় আর কোন দিন কি বাংলার সুশীতল তরু হলে ফেরা হবে নাকি আর হবে না। যখন প্রথম দেশ ত্যাগ করি তখন উপলব্ধি ভুলেও হয়নি। আগে যদি উপলব্ধি হতো দেশ আর বিদেশের প্রার্থক্য তা হলে ভুলেও এই ভুল করতাম না। এখন অসহায়ের মতো ফেসে গিয়েছি মরুর বুকে।
আজ এতটুকুই থাক। আবার কথা হবে এভাবেই।
এবার খোরশেদ ভায়ের সাথে কিছু বলছি।
মেজুভাই,
আমার সালাম নিও। পরসংবাদ হলো এই, বড় ভাই যেখানে কাগজগুলো জমা দিয়েছিল ভিসাগুলো অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। ওনাদের কোম্পানির জিএম এর সেক্রেটারীর কাছে টাকা এবং কাগজ জমা দিয়েছিল। সেক্রেটারী এখন ইন্ডিয়া গিয়েছে ছুটিতে আসবে প্রায় একমাস পর। এদিকে সেদিন জিএম সাহেবের কাছে বড় ভাই ভিসাগুলোর কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি তো এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা। তখন বড় ভাই খুব চিন্তায় পড়ে যায়। সর্বশেষ কথা হলো ভিসা গুলো বের করা যাচ্ছেনা। পড়ে জিএম সাহেবের সাথে বড় ভায়ের সরাসরি কথা হয়েছে , উনি একটি ভিসা দিতে রাজি হয়েছেন। এবং সেই ভিসাটি তোমার যদি সত্যিই উনি দেন। এই হলো সর্বশেষ খবর। তবে এর জন্য আরো একটি মাস অপেক্ষা করতে হবে। মিয়া ভাই বলছে, ভিসা তোমার হাতে না দিয়ে কোন টাকা চাইবে না।
যাহোক দেখো কি হয়। এখানে ভিসা সংক্রান্ত নিয়ম কানুন প্রতি দিনই চেঞ্জ হচ্ছে। কেউই সঠিক ভাবে বলতে পারবে না ভিসা কত দিনে বা আদো বের হবে কিনা। গত কাল সুলতান (কটা) আর খোকনের সাথে ফোনে কথা হলো। ওরা আছে একটি কন্ট্রাকশন কোম্পানিতে। আছে কষ্টে কিন্তু কিছুই করার নেই। রোদে পুড়ে বড় বড় ইট মাথায় করে উঠতে হয় দুতলা/ তিনতলার ওপর। এক একটি ইটের ওজন পাঁচ কেজি করে। কিন্তু কিছুই করার নেই। ওদিকে কাজিম উদ্দিন, (রৌহার আমাদের নানীর নাতি) ও আছে একটি রেস্টোরেন্টে। ওয়েটার। ও ভালই আছে। প্রতি দিনই ওর সাথে আমার কথা হয়। আসলে বিদেশের ভাল মন্দ এটা একান্তই ভাগ্য। কেউ ভাল কাজ করছে আবার কেউ রোদে পুড়ছে। দেখো কি হয়। আমি বলবো এবার যদি তোমার ভিসার কোন সুরাহা না হয় তা হলে তুমি দেশেই ভাল করে কাজ করো এবং বিদেশের আশা বাদদিয়ে দাও।
তোমাদের সবার সুকুশল কামনা করে আজ এখানেই রাখি। আল্লাহ হাফেজ। ইতি, ছোট ভাই ফারুক।
এবার দুটি কথা সারোয়ারের সাথে,
সারোয়ার,
আমার স্নেহ রইল। আজ দুপুরে তোর সাথে ফোনে কথা বললাম। আসলে কি আমি পুরোপুরি ঝামেলা থেকে ওঠতে পারছিনা। একটি থেকে উঠি আর আরেটি এসে জুটে বসে। এই হলো আমার সমস্যা। আমার তো ইচ্ছে হয়ে সবার জন্যই কিছু করি। কিন্তু সাধ আর ¯স্বাদ্ধে কোলায় না। মাঝে মাঝে তোদের পারিবারিক কললের কথা শুনে একেক বার খুবই খারাপ লাগে। এর আগে একবার শুনলাম তোর বৌ নাকি মা এবং বাবার সাথে খুবই খারাপ ব্যাবহার করেছে। এই অশান্তি লেগেই আছে। এমন অশান্তি কি কাম্য কারো হয়। আমি চাই একটি সুখের পরিবেশ। একটি সুষ্ঠু নীড়। ওদিকে সেজু ভায়ের দন্যদশার কথাও গভীর রাতে একা একা ভাবি। ভেবে ভেবে একা একাই থেমে যাই হঠাৎ করে। যা হোক, যন্ত্রপাতির কথা বলেছিস আমি ভেবে দেখবো। এই টাকার জন্য ওদিকে টাকা খরচ করে বসে থাকিসনা। আমি ঈদের পরে দেখবো। ভাল থাক এই প্রত্যাশায় আজ এখানেই। ইতি-- ফারুক ভাই।
আরিফ,
আজ কিছু লিখছি, (২/১০/০৫)
গতকাল তোর পাঠানো মেঝু ভায়ের পাসপোর্ট কপি এবং ছবি পেলাম। আজই তা তোর আববার কাছে পৌছে দিব।
ভাল থাক এই প্রত্যাশায় আজ রাখি।