তোমার ই-মেইল পেলে বেশ ভাল লাগে তাই প্রথমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার অনুরুধ করছি। তবে আমার বাংলায় ইমেইল পড়া একটু কষ্টকর। কারন আমার সাইবার ক্যাফে থেকে কপি করে বাসার কম্পিউটারে সেট করে বাংলা পড়তে হয়। যাই হোক তোমার ই-মেইলের জবাব দেবার চেষ্টা করছি।
দূরে একা একা থাকতে থাকতে একেক সময় খুবই খারাব লাগে। তাছাড়া অনেকদিন হলো একা একা দিন কাটাচ্ছি----
:>> আসলে কি তুমি একা ? দেখ এক অর্থে তুমি একা। আমরা প্রত্যেকেই একা। দেশেউ আমরা আসলেই একাই ছিলাম, তবে আমরা যেটি করেছিযে কিছু বন্ধু-বান্ধব সৃষ্টি করতে পেরেছিলাম যাদের সান্নিধ্যে আমরা আমাদের এককিত্বকে ভুলে থেকেছি। কিন্তু দেখ সেই বন্ধূত্ব যথেষ্ঠ ছিলনা বলেই আমাদের দেশের মায়া ছাড়তে হয়েছে। দেশে তোমার বন্ধুরাউ যার যার প্রয়োজনে দুরে চলে গেছে এবং কারো সাথে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিযোগিতার। আমি বিশ্বাস করি মানুষ অসীম প্রতিভার অধিকারী তাই মানুষ সবসময়ই নিজের জগত গড়তে পারে, যদি সে চায়।তুমিকি পারনা নতুন করে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে? যে যায়গাতে আছ তাকে নিজের করে ভাবতে? নিশ্চই পার তবে সেই যে অতীত, সে তোমাকে বাধা দেয়। তোমার অতীত তোমাকে ভাবতে বাধ্য করে যে, অতীতেই তোমার নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা। দেখ যে খাপ খাওয়াতে পারেনা সে অতীতকে আকড়ে ধরে। আর প্রকৃত যোদ্ধা অতীত থেকে শিক্ষা নেয়া ছাড়া অতিতের কাছে কিছুই প্রত্যাশা করেনা, কারন প্রত্যাশার বিষয়টি ভবিষ্যতের সাথে জড়িত। তাই আমি তোমাকে বলব সাহসী হও এবং নিজেকে খাপ খাওয়াও। আমি জানি এর মধ্যে বেদনা আছে কিন্তু অতীতে বাস করার মধ্যে আছে গ্লানি। দেখ তোমার কোনটা বেশি পছন্দ বেদনা, না গ্লানি? তারপরও আমি বলতে চাই বিদেশ এবং স্বদেশ কখনোই এক হবে নাঃ>> ভূল। যদিও আক্ষরিক অর্থে হবেনা তবে, ধারনাগত ভাবে হতে পারে। বহু লোক বিদেশকে স্বদেশ হিসাবে বরন করে চিরতবে প্রবাসী হয়নি? আমি বলছিনা যে, তোমার আমার সেটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত তবে “ বিদেশ এবং স্বদেশ একই রকম হবেনা” -এটি নেহায়েত পশ্চাদপদ প্রচলিত চিন্তাধারা, যে মন্ত্র তোমাকে পদে পদে কষ্ট দেবে। একবার চেষ্টা করে দেখনা হতেও তো পারে।হ্যাঁ আপনি বলবেন অবশ্যই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছেঃ >> তোমার বস্তুগত অবস্থা তথা অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে মানি তবে মানসিক অবস্থার মনে হয় পরিবর্তন হয়নি। এই পরিবর্তনটি বেশি জরুরী।ভাবছি একটা পিসি বা লেপটপ নেবো যাতে কিছু সময় পাস করতে পারিঃ >> ভালো এবং পজেটিভ চিন্তা। তবে একে শুধু বিনোদনের উতস হিসাবে না দেখে দেখো অন্য কোনভাবে কাজে লাগানো যায় কিনা ( যেমন ইন্টারনেটের সাহায্যে সসয় ফোন করা সুযোগ বা ব্যাবসা, ভালো চাকরি খোজা, অফিসের কাজ বাসায় সেরে ফেলা.. ইত্যাদি) ?
আমার কাছে মনে হয় আমি কোনো লক্ষ বস্তু ঠিক করতে পারছিনাঃ >> সব সময় লক্ষ্য বস্তু ঠিক করা যায়না। অনেকসময় ঘটনা প্রবাহ বা সময়ই লক্ষ্যবস্তু ঠিক করে দেয়। হাদিসে একটি কথা আছে “ভাগ্যের পিছে ধাওয়া করোনা, ভাগ্যই তোমাকে খুজে নেবে”। জহির রায়হানের “সময়ের প্রয়োজনে” নামে একটি প্রবন্ধ আমরা স্কুলে পড়েছিলাম সেখানে তিনি একজন সাধারন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশ্ন করেছিলেন কেন সে যুদ্ধ করছে তার সহজ উত্তর ছিলো “সময়ের প্রয়োজনে”। তার কাছে স্বাধিনতা নামক বিষয়টি পরিস্কার ছিলনা। স্বাধিনতার সুফল-কুফল সম্পর্কে তার কোন ধারনা ছিলনা বা তার দরকার ছিলোনা। দেশে তখন যুদ্ধাবস্থা তার উপর যুদ্ধ আপতিত হয়েছে। এটাই ছিল তার নিয়তি এবং যুদ্ধ করাটাই যার স্বাভাবিক পরিনতি।
আমরা বেশিদিন পৃথিবীতে বাচবনা। আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের জীবনের লক্ষ্য নিয়ে কেউ সমালোচনাও করবে না। প্রায় অর্ধেক জীবন আমরা পেরিয়ে এসেছি, যেটি করার কথাছিল (লক্ষ্য স্থির) অনেক আগে সেটি যেহেতু করা হয়নি/ হয়ে উঠেনি তাই বাকি সময়টা সেটা নিয়ে চিন্তা করে জীবনকে ভারাক্রান- করার কোন দরকার মনে করিনা। এখন যত বেশি পার বর্তমানকে শিশুর মতো মানসিকতা নিয়ে পাড় করার চেষ্টা কর। সত ও নৈতিক জীবন যাপন কর যা প্রতিদান একদিন আল্লার কাছে চেও।
তো যাই হোক, জানিনা আমার পরামর্শ কতখানি কাজে লাগবে তবে অন্যের সাথে নিজের তুলনা করে নিজেকে দুখিঃ সাজিও না। কে জানে হয়তো তুমিউ সর্বোত্তম অবস্থানে আছ কিন্তু মানুষ হবার দোষে স্বাভাবিক প্রবনতার কারনে তুমি তা বুঝতে পারছোনা। ভালো থাক।
আল্লাহ হাফেজ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন